ঘরদোরের কাজকর্মে ব্যবহৃত এই তিনটি পণ্য কি আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়ায়

বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ মার্কিন আলঝেইমারে আক্রান্তছবি: পেক্সেলস

হয়তোবা এই পণ্যগুলোর কোনো কোনোটি ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে আপনি শুনেছেন। যে পণ্যগুলো আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহার করি, নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করি, সেগুলোর গায়ে ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু সতর্কবার্তা লেখা থাকে। এয়ার ফ্রেশনারগুলো ঘরবাড়ির দুর্গন্ধ দূর করে, পরিষ্কারক কেমিক্যালগুলো রোগজীবাণু দূর করে। এই পণ্যগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অনেক দিন ধরেই চিকিৎসকেরা সতর্ক করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) নামক একটি সংস্থা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত অতিপরিচিত দুই হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক চিহ্নিত করেছে। এই রাসায়নিকগুলো শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, হরমোনের গন্ডগোল, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেওয়াসহ আরও নানাভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে।
এই স্বাস্থ্যগত ক্ষতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মস্তিষ্কের রোগ। বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ মার্কিন আলঝেইমারে আক্রান্ত। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। চীনে দীর্ঘমেয়াদি রোগবিষয়ক একটি গবেষণায় গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হয় এমন তিনটি রাসায়নিককে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো ব্যবহারে আলঝেইমারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ১৫ অক্টোবর ‘সেল’ নামক একটি পিয়ার রিভিউ জার্নালে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছ। ওই গবেষণায় ২০১৮ সাল থেকে জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

জরিপটিতে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের স্বাস্থ্যের ওপর বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত আট ধরনের রাসায়নিকের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়। জরিপে নিচের রাসায়নিকগুলো সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল—
১. কীটনাশক।
২. রিপেলেন্ট (যেমন মশা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ তাড়ানোর ক্রিম, স্প্রে ইত্যাদি)।
৩. অ্যান্টি-কেরিজ এজেন্ট (যেগুলো দাঁতের ক্ষয়রোধে ব্যবহার করা হয়। যেমন ফ্লুরাইড)।
৪. এয়ার ফ্রেশনার।
৫. এয়ার পিউরিফায়ার।
৬. জীবাণুনাশক।
৭. টয়লেট ক্লিনার।
৮. অয়েল রিমুভার।
নিয়মিত জীবাণুনাশক, এয়ার ফ্রেশনার, অ্যান্টি–কেরিজ এজেন্ট ব্যবহার করলে প্রবীণদের বোধশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। গবেষণাটিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে এই তিনটি পণ্যের মধ্যে একাধিক পণ্যের সংস্পর্শে যদি নিয়মিত আসা হয়, তাহলে ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। এগুলো বাড়িতে যত ঘন ঘন ব্যবহার করা হয়, ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ততই বাড়ে।
ঘরদোরে ব্যবহৃত এসব রাসায়নিকের অনেকগুলোকেই শিশু এবং গৃহপালিত প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর মনে করা হয়। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে এই রাসায়নিকগুলোর সংস্পর্শে এলেও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, এই গবেষণার ফলাফলে খুব গুরুত্বসহকারে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষকেরা আরও জানিয়েছেন, বয়সী মানুষেরা তরুণদের চেয়ে বেশি সময় বাড়িতে অবস্থান করে। তাই স্বাস্থ্যের ওপর ঘরের ভেতরের বায়ুর মানের প্রভাব উপেক্ষা করা যায় না।
এই গবেষণা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার। বাইরে গিয়ে মুক্ত বায়ু সেবন করা স্বাস্থ্যের জন্য আক্ষরিক অর্থেই উপকারী।


সূত্র: দ্য হেলদি ডটকম

Photo by Anna Shvets from pexels.