যেসব জায়গায় ফোনে কথা বলা যাবে না

হাতে ধরা মুঠোফোনটি আপনি কখন, কোথায় এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন—তা সম্পূর্ণই আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। কিন্তু ধরুন, লোকাল বাসে করে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফিরছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার এক সহযাত্রী মুঠোফোন কানে উচ্চ স্বরে তুমুল আলোচনা শুরু করল। খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও এমন বিরক্তিকর পরিস্থিতে কেউই পড়তে চাই না। তাই খেয়াল রাখা দরকার, নিজেরাও একইভাবে যেন অন্যকে বিরক্ত না করি। এ ছাড়া সব জায়গায় কথা বলাটাও নিরাপদ না। জেনে নিন কেন।

রেস্তোরাঁয় বসে সামনের মানুষদের উপেক্ষা করে ফোনালাপ করা উচিত নয়
ছবি: পেক্সেলস

স্পিকারে কথা না বলা

স্পিকারে কথা বললে আপনার চারপাশের লোকেরা আপনার সম্পর্কে এমন তথ্য জানতে পারে, যা তাঁরা কখনো জানতে চাননি। কোনো ব্যক্তি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য শুনে থাকলে পরে সুযোগ নিতে পারে। শিষ্টাচার রক্ষার্থে ও নিরাপত্তার স্বার্থে, নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ও পরিস্থিতি বিশেষে ফোনালাপ থেকে বিরত থাকতে পারেন।

পথে হাঁটার সময়

পথে একা একা হাঁটতে ভালো না লাগলে বন্ধুকে ফোন দিয়ে আলাপ করাটা নেহাত মন্দ মনে হয় না। কিন্তু পথের অন্য পথচারীদের কেউই আপনার এবং বন্ধুর মত-বিনিময় শুনতে আগ্রহী নন। তা ছাড়া এটি বিপজ্জনকও। রাস্তায় হাঁটার সময় ফোনালাপ করতে থাকলে আশপাশে কী হচ্ছে, তা আপনার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার শিকারও হতে পারেন। ঢাকার মতো ব্যস্ত রাস্তা হলে তো কথাই নেই। রাস্তা পার হওয়ার সময়, এমনকি ফুটপাত ধরে হাঁটলেও চোখের সঙ্গে কান খোলা রাখা সমান জরুরি। তাই, পথে চলতে চলতে কাউকে ফোন করা থেকে বিরত থাকুন। অন্য কেউ ফোন করলে তাৎক্ষণিক আলাপ শুরু না করে নিরাপদ কোনো জায়গায় শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলুন।

কেনাকাটা করার সময়

‘হ্যালো, আমি বাজারে। কী কী যেন লাগবে? বল তাড়াতাড়ি!’ বাজারে লোকের ভিড়ে ফোন কানে উচ্চ স্বরে চেঁচাচ্ছেন এক লোক। শুনতে কী খুব ভালো শোনায়? কেনাকাটা করতে গিয়ে মনোযোগের অভাবে পকেটমারের শিকার হন অনেকেই। অনেকে আবার ভুল করে বাজারের ব্যাগ ফেলে আসেন বাজারেই। আরও ভয়াবহ হচ্ছে, ফোনে কথা বলতে বলতে সঙ্গে থাকা শিশুর হাত ছেড়ে দিতে পারেন মনের অজান্তেই। তাই কেনাকাটার সময় ফোন ধরা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজন হলে একপাশে ভিড়মুক্ত জায়গায় দাঁড়ান এবং কথা শেষ করে আবার কেনাকাটা শুরু করুন।

রেস্তোরাঁয় বসে

আমরা শুধু খাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, মাঝেমধ্যে পরিচিতজনদের সঙ্গে কিছু ভালো মুহূর্ত কাটানোর জন্যও রেস্তোরাঁয় যাই। তাই, রেস্তোরাঁয় বসে সামনের মানুষদের উপেক্ষা করে ফোনালাপ করা উচিত নয়, রির্ডাস ডাইজেস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন, লরা উইন্ডসর অ্যাটিকেট অ্যান্ড প্রোটোকল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা লরা উইন্ডসর। তাই, সঙ্গে কেউ না থাকলেও উচ্চ স্বরে ফোনালাপ থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এতে অন্য অতিথিরা বিরক্ত হতে পারেন, বললেও গলার স্বর নিচু রাখুন। উইন্ডসর বলেন, রেস্তোরাঁয় নিজেকে এবং নিজের হাস্যরসকে সঙ্গে রাখুন; মুঠোফোনকে নয়।

সব জায়গায় মোবাইল ব্যবহার করা নিরাপদ নয়
ছবি: প্রথম আলো

সেলুন ও পারলারে

পরিবারের সদস্যদের আগেই জানিয়ে দিন কিছু সময় আপনি সেলুনে কিংবা পারলারে কাটাবেন। খুব জরুরি না হলে এসব স্থানে ফোনে কথা বলা একেবারেই বেমানান। কথা বলতে হলে খালি কোনো জায়গা খুঁজে নিতে চেষ্টা করুন। না পেলে সেখান থেকে বেড়িয়ে গিয়ে তারপর কথা বলুন।

গণপরিবহনে

গণপরিবহনে কত রকম মানুষের আনাগোনা। কারও সঙ্গে কারও পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতা এবং মনের অবস্থার মিল নেই। তার ওপর গণপরিবহনে যাত্রা খুব একটা সুখকর না। তাই, কিছু সময়ের যাত্রায় ফোনালাপ করে সহযাত্রীদের বিরক্তির কারণ না হওয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে জরুরি সংলাপের জন্য লিখিত বার্তা পাঠান। উড়োজাহাজে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখুন। প্লেনে ওয়াইফাই থাকলে তা ব্যবহার করে মেইল বা মেসেজ লিখে যোগাযোগ করুন।

হাসপাতালে

এটা বলে দেওয়ার কিছুই নেই, যে উচ্চবাচ্য করলে হাসপাতালে রোগীদের অসুবিধা হয়, চিকিৎসকদের মনোযোগ ও কাজে ব্যাঘাত ঘটে। মুঠোফোন থেকে বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় হস্তক্ষেপ (ইএমআই) এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এনার্জি (আরএফ) শরীরে স্থাপিত ডিফিব্রিলেটর এবং পেসমেকারসহ কিছু বৈদ্যুতিক চিকিৎসা ডিভাইসের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই, হাসপাতালে মুঠোফোন ব্যবহারে সাবধান থাকুন। ফোনালাপ প্রয়োজন হলে মূল লবি বা বাইরে যান।

গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা উচিত না
ছবি: পেক্সেলস

সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়

সামনা-সামনি কিংবা অনলাইন, যেভাবেই হোক সাক্ষাৎকারে দেওয়ার সময় আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে কথোপকথনে। এ সময় ফোন নিশব্দ করে রাখলেই ভালো।

লাইনে দাঁড়িয়ে

লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলে অন্যের বিরক্তির কারণ হবেন না। ‌এ ছাড়া, একতরফা কথোপকথন শুনতে কারওই ভালো লাগে না। তাই, লাইনে থাকাবস্থায় ফোনালাপ না করে নিশব্দে নিজের কাজ শেষ করুন।

কর্মক্ষেত্রে

নিজের এবং সহকর্মীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ কাজের পরিবেশ তৈরি করতে শব্দদূষণ প্রতিরোধ করা বেশ জরুরি। তাই, যদি ফোনালাপ করতেই হয়, শব্দ রোধ করে, এমন হেডফোন ব্যবহার করা ভালো। এগুলোতে মাইক্রোফোন থাকে বিধায় খুব আস্তে কথা বললে সমস্যা হয় না। ব্যক্তিগত আলাপের জন্য খালি ঘর বেছে নিন অথবা বাইরে গিয়ে কথা বলুন।

বিয়ে বা শোকসভায়

এ ধরনের বিশেষ আয়োজনগুলোয় আয়োজকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নিজের ব্যক্তিগত ফোনালাপ থেকে বিরত থাকুন। খুব প্রয়োজন হলে একপাশে সরে গিয়ে স্বর নিচু করে অল্প সময়ে কথা বলে নিন।

বাইরে থাকার সময় ফোন কানে উচ্চ স্বরে কথা না বলাই ভালো
ছবি: পেক্সেলস

গাড়ি চালানোর সময়

হাত স্টিয়ারিংয়ে থাকলে, ফোনে না—এই সতর্কবাণী নতুন না। রাস্তার পাশে দেয়ালে দেয়ালে এই বার্তা আমাদের সবার চোখে পড়ে। তাও, কত দুর্ঘটনা ঘটে! তাই, গাড়ি চালানোর সময় ফোন ব্যবহার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। অন্যকেও নিষেধ করুন। জরুরি অবস্থার জন্য গাড়ির ব্লুটুথ স্পিকারের সঙ্গে ফোন সংযুক্ত করে নিন। এতে কল আসলে ফোন হাতে না নিয়েই কথা বলতে পারবেন।

গণশৌচাগারে

ফোনে কথা বলার সময়, আর যা–ই হোক, ফ্ল্যাশের শব্দ শুনতে চায় না কেউ। এ ছাড়া জীবাণু তো আছেই। নানা গবেষণায় দেখা গেছে যে ফ্ল্যাশিং টয়লেট বাতাসে জীবাণু নির্গত করে। সেখানে আপনার ফোন বাইরে থাকলে সেই জীবাণু ফোনের গায়েও লেগে যেতে পারে। শৌচাগার ব্যবহারের সময় ফোন ব্যবহার না করাই যুক্তিযুক্ত।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট