প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি–ইচ্ছুকদের জন্য ৫ পরামর্শ
ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী বৃত্তিপ্রাপ্ত শোভা রানী ও রনি মোল্লা পড়ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। দারিদ্র্য, সমাজের বাধার সঙ্গে লড়াই করে তাঁরা সুযোগ পেয়েছেন স্বপ্নের বুয়েটে। রনি পড়ছেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে, শোভা পুরকৌশলে। এ বছর যাঁরা বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এই দুই মেধাবী।
১. লক্ষ্য স্থির করা
ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য প্রথমেই নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সেই লক্ষ্যে অটুট থাকা খুব জরুরি। অনেকের মধ্যে একটু দোনোমনা ভাব থাকে বলেই দেখা যায়, গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। শুরুর দিকে কিছুদিন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে লক্ষ্য বদলে তাঁরা আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শুরু করেন। এ কারণে সময় যেমন নষ্ট হয়, তেমনি প্রস্তুতিও খুব একটা ভালো হয় না। তাই শুরুতেই আমি কী নিয়ে পড়তে চাই, কোন বিষয়ে পড়তে ভালো লাগে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই—এসব লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিতে হবে। যদিও আমরা এখানে শুধু প্রকৌশলে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কথা বলছি, কিন্তু এই পরামর্শ সব বিভাগের জন্যই প্রযোজ্য।
২. সহায়ক বই সংগ্রহ করা
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে অনেকে অনেক লেখকের পাঠ্যবই পড়েন। কয়েকটি বই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য বেশ কাজের। যেমন গিয়াস স্যার ও আমির হোসেন ইসহাক স্যারের পদার্থবিজ্ঞান বই, মো. কেতাব উদ্দীন স্যারের গণিত বই, সঞ্জিত কুমার গুহ ও গাজী মো. আহসানুল কবীর স্যারের রসায়ন বই। বইয়ের সমস্যা সমাধানে কিছু সহায়ক বই পাওয়া যায়, সেগুলোও কাজে লাগতে পারে। এ ছাড়া এর সঙ্গে বিগত বছরের ‘প্রশ্নব্যাংক’ এবং বিভিন্ন ধরনের অধ্যায়ভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক অনুশীলনমূলক বই সংগ্রহ করতে হবে। আরও বিস্তারিত ধারণার জন্য সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী স্যারের রসায়ন বই, পুরোনো পদার্থবিজ্ঞানের বইগুলোও অনুসরণ করতে পারেন। তবে যেটা সবচেয়ে জরুরি, তা হলো, অবশ্যই আগের বছরের প্রশ্নগুলোর বিশ্লেষণ ও চর্চা খুব ভালোভাবে করতে হবে।
৩.ভর্তি বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা
প্রথমেই নিজের সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস ও পারিপার্শ্বিক অন্যান্য পরিস্থিতি সাপেক্ষে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম পূরণ করবেন, সেটা ঠিক করে নিতে হবে। প্রতিটি ফরম পূরণের শর্ত ও আবেদনের যোগ্যতা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। সব সময় ভর্তি বিজ্ঞপ্তির হালনাগাদ তথ্য রাখতে হবে। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়া পরপর চলমান থাকে, তাই নিয়মিত খোঁজখবর না রাখলে অনেক সময় পড়াশোনার চাপে কোনো কিছু মিস হয়ে যেতে পারে, এসবের জন্য যেন ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে, আবেদনের ফি প্রদানের শেষ তারিখ কবে, কখন প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে, এসবের পূর্ণ তথ্য রাখতে হবে।
৪. প্রস্তুতির পদ্ধতি
পড়াশোনার ধরন ব্যক্তিবিশেষে আলাদা। তারপরও সবাইকেই কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করে এগোতে হয়। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই মূল বইগুলো আমাদের পড়া হয়ে যায়। ভর্তি পরীক্ষায় নতুন করে খুব বেশি কিছু শেখার নেই। শুধু আরেকটু ঝালাই করে নিতে হয়। তাই মূল বইয়ের কিছু বিষয় বুঝে বুঝে পড়তে হবে। গাণিতিক সমাধানগুলো প্রতিটি ধরন আলাদা করে চর্চা করতে হবে। খাতায় নোট লিখে লিখে পড়তে পারলে ভালো হয়। যতটা সম্ভব কম সময়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে—
ক. অধ্যায়ভিত্তিক
প্রতিটি বিষয়ের সব কটি অধ্যায়ের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিন। প্রথমে পুরো অধ্যায়ের ‘টপিক নোট’ দেখুন (যেকোনো উৎস থেকে বিষয় বুঝে একটা বানানো নোট হতে পারে)। এরপর একে একে মূল বই, আগের বছরের প্রশ্নব্যাংক, সহায়ক অনুশীলনমূলক বই—সব বই থেকেই ওই অধ্যায়সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলুন। অনুশীলনমূলক বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় শেষে অনেক সময় কিছু ‘মডেল টেস্ট’ থাকে, সেগুলোয় অংশ নিয়ে নিজের প্রস্তুতি যাচাই করুন। এটা অনেক কাজে আসে। অনেক সময় কঠিন বিষয়গুলো একটু গভীরভাবে বুঝতে গিয়ে আমরা সহজ জিনিস ভুলে যাই। মনে রাখতে হবে, প্রস্তুতিটা যেন বোর্ডের বইকেন্দ্রিকই হয়।
খ. বিষয়ভিত্তিক
অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি নেওয়ার পর আসে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি। যা যা পড়া হয়ে গেছে, সবকিছুর একটা রিভিশন দেওয়ার পর অনুশীলনমূলক বই থেকে ওই বিষয়ের প্রস্তুতি যাচাইমূলক পরীক্ষা দিতে হবে।
গ. পরীক্ষার আগের রাত
ভর্তি পরীক্ষার আগের রাত খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে পরীক্ষার আগের রাতে সারা রাত জেগে পড়াশোনা করে। এটা কখনোই করা যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমিয়ে নিতে হবে। আগের রাতে নতুন কিছু পড়া থেকে বিরত থাকা উচিত। আর অবশ্যই প্রবেশপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজ, কলম—সব রাতেই গুছিয়ে রাখতে হবে।
ঘ. পরীক্ষার হল
পরীক্ষার হলের সময়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে আপনার সর্বোচ্চটা দিতে হবে। পরীক্ষায় একেক জনের একেক রকম কৌশল থাকতে পারে। যার যেটাতে সুবিধা, তাঁর সেটাই অনুসরণ করা উচিত। তবে সাধারণত, শুরুতে সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে ফেললে সুবিধা হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে কঠিন প্রশ্নের দিকে এগোতে হবে। প্রকৌশলের ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষার উত্তর করার জন্য আলাদা কোনো কাগজ দেওয়া হয় না। তাই নির্ধারিত জায়গায় উত্তর লিখে শেষ করার চর্চা আগে থেকেই করতে হবে। ভুল দাগানো থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে।
৫. শেষ কথা
সবশেষে বলব, এ সময় ধারাবাহিক পরিশ্রম বজায় রাখা খুবই জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই ধৈর্য ধরে রাখা কঠিন হয়। প্রথম দিকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সুযোগ না পেলেও হাল ছাড়া যাবে না, হতাশ হওয়া যাবে না। চারপাশে অনেককে দেখে মনে হতে পারে, ‘ও তো অনেক পড়ালেখা করছে, আমি তো ওর ধারেকাছেও নেই।’ এসব ভেবে ঘাবড়ে যাবেন না। মনে রাখবেন, ‘আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করব। এরপর ফলাফল যা-ই আসুক, নিজের ওপর আস্থা রেখে সামনে এগোব।’