ভরদুপুরে ঢাকার উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে যখন পা রেখেছি, শিক্ষার্থীরা তখন একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। কেউ রং করছেন, কেউ ব্যানার লিখছেন, কেউবা আঁকছেন ছবি।
কী হচ্ছে এখানে? উত্তরা ইউনিভার্সিটির কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের কালচারাল ক্লাবের সহসভাপতি নুসরাত জাহান বললেন, ‘আমাদের ব্যাচের শিক্ষাজীবন প্রায় শেষ। তাই এবারের সাংস্কৃতিক আয়োজনটা আমরা বিশেষভাবে পালন করছি। বিভাগের সবাইকে অনুপ্রেরণা দিতে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মিলে কাজ করছেন।’ সানজিদা শারমিন, আশফাকুর রহমান, মো. তানজিল, মঞ্জুরুল ইসলামসহ আরও অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা সবাই কাজে মগ্ন। সানজিদা শারমিন বললেন, ‘সারা বছরই আমাদের নানা অনুষ্ঠান থাকে। প্রতিবছর আমরা বাইনারি নামে একটা অনুষ্ঠান করি। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সৃজনশীলতা তুলে ধরেন। রোবোটিকস, প্রোগ্রামিংয়ের নানা প্রতিযোগিতাও আয়োজন করা হয়।’
২০০৩ সালে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ এম আজিজুর রহমানের হাত ধরে। বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ১৪টি বিভাগে ৩৫টি প্রোগ্রাম চালু আছে।
শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে
ঢাকার তুরাগে উত্তরা ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস। প্রযুক্তির নানা চ্যালেঞ্জ যেন ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীরা জয় করতে পারেন, সেই বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে। কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে (সিএসই) পড়ছেন নুসরাত জাহান। উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ক্লাসরুমে হাতে–কলমে শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যা যা জানা প্রয়োজন, আমি শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখছি। দক্ষতা বিকাশের জন্য নিয়মিত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, সেমিনার, হ্যাকাথনসহ নানা আয়োজন থাকে ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকে কারিগরি দক্ষতা যেমন শিখতে পারেন, তেমনি মানবিক দক্ষতাগুলো সম্পর্কেও ধারণা পান।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আজিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু শিক্ষা দানই করছি না, ভবিষ্যতের নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে মূল্যবোধ বিকাশেও কাজ করছি।’
উত্তরা ইউনিভার্সিটির পরামর্শক (ভর্তি ও প্রোমোশন) আবিদ আজিজ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে–কলমে শিক্ষার বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে ইউরোপ, আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সহযোগিতা কার্যক্রম চালু আছে। এটিও ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুট কোর্ট ক্লাবের নানা কার্যক্রম দেখা গেল ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুট কোর্ট ক্লাবের সদস্য নিশাত হোসনা বলেন, ‘সারা বছর আমরা শ্রেণিকক্ষে পড়া নিয়ে যেমন ব্যস্ত থাকি, তেমনি নানা সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল অনুষ্ঠানেও যুক্ত থাকি। ভবিষ্যতের আইনজীবী হওয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন দক্ষতা সম্পর্কে জানার সুযোগ পাই আমরা।’ মুট কোর্ট ক্লাবের সদস্যদের আড্ডায় আরও দেখা যায় সোহান আহমেদ, পুলক রহমান, শাহরুখ খান, শোয়েব আহমেদের মতো তরুণ শিক্ষার্থীদের।
কথা হলো সোশ্যাল সার্ভিস ক্লাবের সদস্য ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ভূঁইয়ার সঙ্গে। জানালেন, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন তাঁরা। বন্যার্ত মানুষদের নিয়ে কাজ করেছেন কিছুদিন আগে। উত্তরা ক্লিন নামের আয়োজনের মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার কার্যক্রমও আছে তাঁদের।
সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে কথা হচ্ছিল ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত ইয়াসমিনের সঙ্গে। বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত তিনি। জানালেন, ক্যাম্পাসে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা।
সহ-উপাচার্য ইয়াসমীন আরা বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। ক্রীড়াশিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগ চালু করেছি। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। গবেষণাপত্র প্রকাশসহ গবেষণা করার ক্ষেত্রে নানা সুযোগ তৈরি করছি আমরা। আমাদের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেলের মাধ্যমে ভবিষ্যতের নানা বিষয়ে গবেষণার কাজ চলছে।’
বৃত্তি ও প্রণোদনা
শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি ও আর্থিক প্রণোদনার সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শক (ভর্তি ও প্রোমোশন) আবিদ আজিজ বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই কোনো না কোনোভাবে ওয়েবার পাচ্ছেন। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীরা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা নিতে পারেন, সেই সুযোগও আমরা করে দিচ্ছি। ভালো ফল করলে বৃত্তির সুযোগ তো আছেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বৃত্তির নানা সুযোগ জানা যাবে https://uttarauniversity.edu.bd/ ওয়েবসাইট থেকে।