সুইজারল্যান্ডের সার্নে যেভাবে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেলেন আইইউবির ছাত্র পিটার

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জেমস পিটার গমেজ

বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাপী সার্নের সুনাম আছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চকেই সংক্ষেপে বলা হয় সার্ন। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেছেন জেমস পিটার গমেজ। তিনি ঢাকার ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। এত বিখ্যাত একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা শুনতে ৬ সেপ্টেম্বর পিটারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।

প্রতিবছর গ্রীষ্মকালীন প্রোগ্রামে বিজ্ঞানসংক্রান্ত বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের এই ইন্টার্নশিপের (শিক্ষানবিশি) সুযোগ দেয় সার্ন। বিভিন্ন দেশের নির্বাচিত ছাত্রছাত্রীরা এখানে উচ্চপর্যায়ের গবেষণাকাজে সম্পৃক্ত হন। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করার সুযোগ পান তাঁরা। বিশ্বমানের ল্যাবরেটরিতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারাটাও একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। এ বছর ১০ হাজারেরও বেশি আবেদনকারী শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে নির্বাচিত ৩০০ জন ইন্টার্নশিপে অংশ নেন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন জেমস পিটার গমেজ।

মুঠোফোনে পিটার বলেন, ‘এটা আসলে ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম অভিজ্ঞতা। সার্ন নিয়ে আমার কিন্তু খুব বেশি জানাশোনা ছিল না। আইইউবির তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন স্যার দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই আমাকে এই গুরুত্বপূর্ণ ইন্টার্নশিপ সম্পর্কে জানান এবং অংশগ্রহণের উৎসাহ দেন। আমারও হাই এনার্জি ফিজিকস নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। তাই পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে এই গবেষণাসংক্রান্ত কিছু সফটওয়্যার বা টুলস (রুট, পিথিয়া) ও কোডিং (সি++, পাইথন) শিখে রাখি। এই বিষয়গুলোই হয়তো সুযোগ পেতে সাহায্য করেছে।’

এ বছর ১০ হাজারেরও বেশি আবেদনকারী শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে নির্বাচিত ৩০০ জন ইন্টার্নশিপে অংশ নেন
ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ জুন থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত জেনেভায় কাটিয়েছেন এই তরুণ। কাজ করেছেন বিভিন্ন সংস্কৃতির ও পড়ালেখার বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে। এলএইচসিবি (লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার বিউটি) গ্রুপের সঙ্গে জেমস কাজ করেছেন পার্টিকেল ফিজিকস নিয়ে। তাঁর দায়িত্বের মধ্যে জিপিইউ সিমুলেশন প্রোটোটাইপ পরীক্ষা, এলএইচসিবি পরীক্ষার জন্য গসিনো সিমুলেশন ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে পরীক্ষা করা অন্যতম। এসব পরীক্ষার লক্ষ্য ছিল পার্টিকেল ফিজিকসে সিমুলেশনের দক্ষতা বাড়ানো।

সিমুলেশন ও পর্যবেক্ষণের কাজ সম্পর্কে পিটার বলেন, ‘কম্পিউটারের সামনে বসে বসে পরীক্ষা করতে হতো, সিমুলেশন করতে হতো। কাজটা কিছুটা বিরক্তিকর। কিন্তু কাজের পরিবেশ ছিল চমৎকার। বাঁধাধরা সকাল-সন্ধ্যায় সময় মানার বাধ্যবাধকতা নেই। নির্দিষ্ট তারিখে রিপোর্ট জমা দিলেই হলো। আর কোনো মিটিং বা ছোট ইভেন্টের আগে মনে করিয়ে দেওয়ার চল নেই। সবাই সবার সময়মতো এসে পড়ে। ওখানকার সুপারভাইজার আমাকে মুগ্ধ করেছেন। বিশেষ করে তাঁদের বন্ধুসুলভ ব্যবহার প্রশংসা করার মতো। কাজের বাইরেও অনেক কিছু শিখেছি। আগেই সব শিখে সেখানে পা রাখতে হবে, তাঁরা এমনটা বিশ্বাস করেন না। বরং ওখানে যাওয়ার পর আমি কতটুকু শিখতে পারছি, সেদিকেই তাঁদের নজর ছিল। তাঁদের গবেষণায় অবদান রাখার সুযোগ হয়তো খুব বেশি পাইনি। কিন্তু যা শিখেছি, তা আজীবন কাজে লাগবে।’

বড় বিজ্ঞানীদের সামনে পদার্থবিজ্ঞানের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সাহসটা এখন হয়েছে বলে জানালেন পিটার। এখন তিনি বুঝতে শিখেছেন, পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণার পরিসরটা কতটা বড়। ‘হাই এনার্জি ফিজিকস’ নিয়ে যত গবেষণা হয়, তার মধ্যে অধিকাংশই সার্নের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। ফলে দেশের বাইরে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ক্ষেত্রে সার্নের অভিজ্ঞতা কাজে দেবে বলেই মনে করেন পিটার। ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চতর গবেষণার ইচ্ছে আছে তাঁর।

আরও পড়ুন