রুয়েটের উৎসবমুখর দুটি দিন

১৯৬৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যত অ্যালামনাই পাস করে ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন, সবাই ছিলেন আমন্ত্রিত
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) এই প্রথমবারের মতো বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো যন্ত্রকৌশল বিভাগের পুনর্মিলনী। ১৯৬৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যত অ্যালামনাই পাস করে ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন, সবাই ছিলেন আমন্ত্রিত। ৯ ও ১০ মার্চ দুই দিনব্যাপী উৎসবমুখর ছিল আমাদের ক্যাম্পাস।

রুয়েটে ভর্তির পর থেকে সিনিয়রদের অনেক রকম গল্প শুনে এসেছি। প্রায়ই ভাবতাম, যাঁদের গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছি, যদি সামনাসামনি বসে তাঁদের মুখ থেকেই ওই সময়ের দিনগুলোর গল্প শুনতে পারতাম! এ ইচ্ছা অবশেষে আলোর মুখ দেখল ২০২৩ সালে এসে, স্বাধীনতার মাস মার্চে।

গত মাসে আমাদের বিভাগীয় প্রধানের কাছ থেকে প্রথম শুনি পুনর্মিলনী আয়োজনের কথা। শুনেই সবাই খুশিতে আত্মহারা। ক্যাম্পাসে এটাই আমাদের শেষ সেমিস্টার। অতএব আমাদের চেয়ে খুশি আর কে হবে!

ঘোষণার পরপরই শুরু হয়ে যায় কাজ। বিভাগীয় প্রধানসহ সব স্যার-ম্যাডামের দিকনির্দেশনায় স্বেচ্ছাসেবকেরা শুরু করেন পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন। কাজের ধরন অনুযায়ী তৈরি হয় আলাদা আলাদা দল। নিবন্ধন, তথ্য সংরক্ষণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্যাম্পাস রাঙানো, খাবারদাবারের ব্যবস্থা করা—সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা দায়িত্বপ্রাপ্ত দল ছিল। ক্লাস-ল্যাব শেষে ফ্লুইড মেকানিকস ভবনে দিন-রাত চলতে থাকে প্রস্তুতি। শিক্ষকদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ একটা নতুন অভিজ্ঞতা।

একেক কাজের দায়িত্ব ছিল একেকটি দলের ওপর
ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে চলে আসে বহুল প্রতীক্ষিত সেই দিন। আগের দিন থেকেই অ্যালানমাইরা চলে আসতে শুরু করেন ক্যাম্পাসে। শুরু হয় মহা আয়োজন।

রংবেরঙের আলোকসজ্জা ও আলপনায় ক্যাম্পাস সেজেছিল ভিন্ন সাজে। মূল ফটক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মাঠ পর্যন্ত সব ব্যাচের নাম অনুযায়ী টানানো হয় ব্যানার। সিনিয়ররা সবাই দল বেঁধে যাঁর যাঁর পুরোনো হলের রুমগুলো ঘুরে দেখছিলেন। হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন হাজারো স্মৃতি। তারপর আমাদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা আড্ডার আসর বসান চায়ের টংদোকানগুলোয়। শোনান নানা গল্প, স্মৃতি, মজার ঘটনা। এসব গল্প শুনতে শুনতে কখন যে তাঁদের সঙ্গে আমরাও সেই সময়ে হারিয়ে গিয়েছি, বুঝে উঠতে পারিনি। একদল অ্যালামনাই শোনালেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ঘটনা। দেশের অবস্থা তখন কেমন ছিল, কীভাবে অনেকে যুদ্ধে গিয়েছিলেন; সঙ্গে শিহরণ জাগানো আরও নানা ঘটনা। আড্ডার এ অংশ মনে গেঁথে গেল।

এরপর বিকেল থেকে থেকে শুরু হয়ে যায় অনুষ্ঠানের একেকটি অংশ। সন্ধ্যার পর বিভাগের সব ছাত্রছাত্রীর জন্য রাতের খাবারের আয়োজন ছিল। খাবারের বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অংশ। অ্যালামনাইদের বিভিন্ন ব্যাচ গান, নাচ, রসিকতায় মাতিয়ে রেখেছে সবাইকে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেচে-গেয়ে চলছিল উপভোগ আর স্মৃতি রোমন্থন।

গান থেকে স্মৃতি রোমন্থন পর্ব, সবই ছিল আয়োজনে
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের নাটকের মধ্য দিয়ে মাঝরাতে শেষ হয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান।

পরের দিন ১০ মার্চ ছিল অনুষ্ঠানের শেষ দিন। সকালের কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল মজার কিছু খেলাধুলা আর মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। দিনব্যাপী আরও নানা কার্যক্রম শেষে নৈশভোজের আগে সব প্রাক্তনী মিলে সামনে আবারও পুনর্মিলনী আয়োজনের ঘোষণা দেন। তবে মূল আকর্ষণ কিন্তু তখনো বাকি! কনসার্ট আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মঞ্চ মাতাতে এসেছিল ব্যান্ড শিরোনামহীন, পার্থিব এবং কণ্ঠশিল্পী কোনাল।

সবশেষে ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’ গাইতে গাইতে শেষ হয় আয়োজন।