পরীক্ষার হল থেকে সোজা ধারাভাষ্যকক্ষে

নুজহাত সাবাহ ফেরদৌস
ছবি: সংগৃহীত

‘শুরুতে খুব নার্ভাস লাগছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে ধারাভাষ্যকার হিসেবে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁরা খুব সাহায্য করেছেন। গাইড করেছেন। তাই একটু পরই কাজটা উপভোগ করতে শুরু করেছি।’ প্রথমবার কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে ধারাভাষ্য দেওয়ার অভিজ্ঞতা এভাবেই বললেন নুজহাত সাবাহ ফেরদৌস।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ধারাভাষ্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) মার্কেটিংয়ের এই শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি তাঁর একটা অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করত। বড় ভাইকে নিয়মিত আবাহনীর মাঠে অনুশীলনে যেতে দেখেছেন। মাঝেমধ্যে ভাইয়ের সঙ্গে নিজেও চলে যেতেন। ভাইয়াদের অনুশীলন দেখে দেখে অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন। তারপর? ‘বিষয়টা এসিসি ক্লাবের কাজী আনোয়ার স্যারের চোখে পড়ে। মা-বাবাকে বলে তিনিই আমাকে ক্লাবে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন।’ ব্যাস, সেখান থেকেই শুরু ক্রিকেটের হাতেখড়ি। এখনো নিয়মিত ক্রিকেট খেলেন তিনি।

বক্তৃতা (পাবলিক স্পিকিং) ও প্রেজেন্টেশনের প্রতি আগ্রহ আছে বলে টিভিতে নারী ধারাভাষ্যকারদের দেখেও সব সময় অনুপ্রাণিত হতেন। তাই নুজহাতের মনে হয়েছে, ক্যারিয়ার হিসেবে এটি বেশ ভালো একটি ক্ষেত্র হতে পারে। তবে ধারাভাষ্যে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছে অনেকটা হঠাৎ করেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সেমিনারে ছিলেন নুজহাত। এমন সময় আসে বর্তমান আম্পায়ার ও ধারাভাষ্যকার সাথিরা জাকিরের ফোনকল। সাথিরাই বলেন, ‘তোমার ধারাভাষ্যের একটা ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়ে দাও।’ নুজহাত তা-ই করেন। এরপর খেলাধুলাভিত্তিক টিভি চ্যানেল টি-স্পোর্টস থেকে অডিশনের ডাক আসে। বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতও হয়ে যান।

নিজে ক্রিকেটার বলেই ক্রিকেটের প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত দিকগুলো বেশ ভালোই জানেন বিইউপির চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী। প্রথম ধারাভাষ্যে তিনি নিজের খেলার অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছেন, যা তাঁর ধারাভাষ্যকে আরও সহজ ও প্রাণবন্ত করেছে। তা ছাড়া ওই ম্যাচে বাংলাদেশ যেহেতু জয় পেয়েছে, তাই আনন্দ বেড়ে গেছে আরও।

একাডেমিক পড়াশোনা, ক্রিকেট, ধারাভাষ্য—সবকিছু বেশ ভালোভাবেই সামাল দিতে জানেন নুজহাত। পড়ার সময় পড়ছেন। আবার সিটি ক্লাবে নিয়মিত ক্রিকেটের ট্রেনিংয়েও যাচ্ছেন। ধারাভাষ্যের জন্যও নিতে হচ্ছে আলাদা করে প্রস্তুতি। প্রথম ধারাভাষ্যের দিনও বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডটার্ম পরীক্ষা ছিল। তাই বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেছেন ধারাভাষ্যকক্ষে।

ইউটিউব দেখে বিভিন্ন ম্যাচের ধারাভাষ্য শুনে-শুনে কাজটা ভালোভাবে রপ্ত করার চেষ্টা করছেন নুজহাত। নামী ধারাভাষ্যকারেরা কীভাবে কথা বলেন, কীভাবে তাঁদের গলার স্বর ওঠা-নামা করে, শব্দের সঠিক উচ্চারণ কীভাবে করতে হয়, এসব নিজে নিজে বাসায় অনুশীলন করছেন। নুজহাত বলেন, ‘যেহেতু এই প্রথম ধারাভাষ্য দিলাম, অনেক কিছু জানতাম না। কীভাবে মাইক ব্যবহার করতে হয়, কখন মাঠে খেলা দেখে ধারাভাষ্য দিতে হয়, কখন মনিটর দেখে ধারাভাষ্য দিতে হয়, এগুলো কিছুই জানতাম না। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় এসব সমন্বয় করাটা আমার জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল।’ তাই আগের তুলনায় খেলা দেখার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন নুজহাত। অন্য ধারাভাষ্যকারেরা কীভাবে খেলার বিশ্লেষণ করেন, খেলার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে রোমাঞ্চটা ধরে রাখেন, সেসবই রপ্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি।

আপাতত দীর্ঘমেয়াদি কোনো ভবিষ্যৎ ভাবনা না থাকলেও ক্রিকেট নিয়েই থাকতে চান নুজহাত। আন্তর্জাতিক ম্যাচে ধারাভাষ্য দেওয়ার যে সুযোগ পেয়েছেন, সেটাকেই আরও উন্নত করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই যেহেতু জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন ছিল, তাই খেলাধুলাটাও চালিয়ে যেতে চান নিয়মিত।

আরও পড়ুন