যেভাবে বাড়াবেন ঈদের খুশি
ঈদ কারও কাছে বাড়ি ফেরার সুখ, কারও কাছে আবার রসনাবিলাস। কেউ ঈদের ছুটিতে ঘুরতে যান দূরে কোথাও, কারও আবার ঈদ কাটে রান্নাঘরের চার দেয়ালের মধ্যে। তবে ঈদ এমন এক উৎসব, যার আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে না নিলে অপূর্ণই থেকে যায়। নিজের চারপাশে ভালোবাসার মায়া ছড়িয়ে দিলে তবেই না হবে সত্যিকার ঈদ!
মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ ও ভালোবাসার প্রকাশে মানুষে মানুষে বন্ধন গড়ে ওঠে। এই তো ঈদের মহিমা। সেই সঙ্গে প্রকৃতি আর প্রাণিকুলের প্রতি সদয় আচরণ করাও একজন মানবিক মানুষের দায়িত্ব। এমনটাই বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন।
বাড়িতে যেমন
জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া ঈদের ছুটি পান এ দেশের প্রায় সব পেশাজীবী। তবে বাড়ির কাজের কিন্তু কোনো শেষ নেই। এখানে নেই কোনো ছুটি। তাই বাড়ির কাজগুলো পরিবারের সবার মধ্যেই ভাগ করে নিন এই ছুটিতে। তাহলে যিনি সারা বছর ঘরের কাজ করেন, তিনি একেবারে ছুটি না পেলেও তাঁর কাজের চাপ খানিকটা কমবে।
বাড়ির সবাই সময়মতো খাবার খাচ্ছেন কি না, সে খোঁজও রাখুন।
বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে অবশ্যই খানিকটা সময় কাটান আজ।
বাড়ির কাজে সহায়তাকারী ব্যক্তিও ঈদের দিন কাজ করেন বহু বাড়িতে। তাঁদের প্রতি সহমর্মী হোন। ঈদের দিনও দায়িত্ব পালন করায় তাঁদের একটা ধন্যবাদ দিন। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও কিছু একটা করতে চেষ্টা করুন আজকের দিনে।
বাড়ির দারোয়ান, এলাকার নিরাপত্তাকর্মী, রিকশাচালক—যাঁকে যেমনভাবে পারেন, একটু ‘আনন্দ’ উপহার দিন।
দুঃখীজনের পাশে
কোরবানির পর মাংস বিতরণ বিশাল এক দায়িত্ব। মাংস বিতরণের কাজ দ্রুত সমাধা করতে চেষ্টা করুন। অভাবে থাকলেও সবাই কিন্তু আপনার বাড়ির সামনে হাত পেতে দাঁড়াতে পারবেন না; এমন মানুষদেরও খুঁজে বের করুন। এমন পরিবারকে এক বেলার রান্নার উপকরণও পাঠাতে পারেন। মাংস বিতরণের কাজটা নিজ হাতে করার চেষ্টা করুন। বহু মানুষ কোরবানির ঈদের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন কেবল কয়েক টুকরা মাংসের আশায়। ঈদের দিনটাতে চেষ্টা করুন সবাইকেই আপনার খুশিতে শামিল করে নিতে। বাড়ির দারোয়ান বা অন্য কেউ যাতে দুঃখীজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করে ফেলেন, সেদিকেও খেয়াল রাখুন।
প্রাণিকুলও সঙ্গী হোক
লোকালয়ে মানুষ ছাড়াও কিন্তু বহু প্রাণী বসবাস করে। মানুষেরই দায়িত্ব আশপাশের প্রাণীদের প্রতি দয়ালু আচরণ করা। ঈদের দিন মাংসের লোভে পথের কুকুর চলে আসতে পারে বাড়ির উঠানে কিংবা গ্যারেজে। ওদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা উচিত নয়। কোরবানির পশুর সব অংশই কিন্তু মানুষের কাজে আসে না। এমন কিছু অংশ দিয়ে দিন ক্ষুধার্ত প্রাণীদের। বাড়িতে রান্না-খাওয়ার পরও হাড়গোড় বেঁচে যায়, যা ফেলেই দেওয়া হয়। এসব উচ্ছিষ্ট খেতে দিন ক্ষুধার্ত প্রাণীদের। বিশ্বাস করুন, ওরা অকারণে আপনার ক্ষতি করবে না। এমনকি আপনার বাড়ির ছোট্ট শিশুও ওদের কাছে নিরাপদ, যদি আপনি পরিবেশটাকে প্রাণীদের জন্য অনিরাপদ করে না তোলেন। প্রাণীদের ভয় দেখানো কিংবা আঘাত করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। ওদের উপস্থিতিতে বিরক্ত হবেন না। সিটি করপোরেশন কিংবা এলাকার মান্যগণ্য ব্যক্তির কাছে প্রাণীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করতে যাবেন না; বরং তাঁদের অনুরোধ করুন পথের কুকুরদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। আর আপনার এলাকায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন প্রাণীর প্রতি ইতিবাচক আচরণ করতে। কোনো প্রাণীকে উত্ত্যক্ত না করা হলে ওরা কারও ক্ষতি করবে না; বরং আপনার ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পাবে ওদের সঙ্গে নিয়েই।
প্রকৃতির তরে
ঈদের দিন একটা গাছ লাগালে কেমন হয়, বলুন তো? ঈদের দিনটা চলে যাবে। কিন্তু গাছটা রয়ে যাবে, রয়ে যাবে এই ঈদের একটা স্মৃতি। আর কোরবানির পর সিঁড়ি, লিফট ও বাড়ির আশপাশের অপরিষ্কার অংশ সাফসুতরা করে নিতেও ভুলবেন না। নাগরিক হিসেবে নিজের সব দায়িত্ব ঠিকঠাক সেরে নেওয়ার তৃপ্তিও যোগ হোক ঈদের আনন্দে।