সৌভাগ্যের দেখা পেতে চাইলে যেসব নিয়ম মেনে চলবেন

জীবনে ভালো সময় আসে, খারাপ সময়ের মধ্য দিয়েও যেতে হয়। তবে সময় খারাপ গেলে কি কেবল ভাগ্যের ওপর দোষ চাপিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন? উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনি ভুল করছেন। ভাগ্য বদলাতে হয়তো আমরা পারি না, তবে সৌভাগ্য বয়ে আনার চেষ্টা করতে তো দোষ নেই। আসুন, জেনে নিই, কী কী বিষয় মেনে চললে সৌভাগ্যের দেখা পাবেন...

ভাগ্য বদলাতে হয়তো আমরা পারি না, তবে সৌভাগ্য বয়ে আনার চেষ্টা করতে তো দোষ নেইছবি: পেক্সেলস

আশাবাদী হোন

ইংরেজি প্রবাদে আছে, ‘লাইফ ইজ নট আ বেড অব রোজেস’, বাংলায় যেটা ‘জীবন পুষ্পশয্যা নয়’। অর্থাৎ জীবন আপনাকে সব সময় আরামদায়ক অবস্থানে রাখবে—এমন ভাবা স্রেফ বোকামি। জীবনে জয়-পরাজয়, হাসি-কান্না থাকবেই। হতাশ হলে তাই মন খারাপ করে বসে থাকা চলে না। আপনার মনে যখন হতাশা আসবে, তখন অতীতের সুখের কোনো স্মৃতি বা ঘটনার কথা মনে করুন। দেখবেন, আপনার মন প্রশান্ত হচ্ছে। হতাশ হলে মনের ওপর থেকে ভার কমিয়ে ফেলুন। নতুন কিছু আশায় বুক বাঁধুন। এতে সামনে আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আসার সম্ভাবনা বাড়বে।

সামাজিক যোগাযোগ বিস্তৃত করুন

যত বেশি ভিন্ন রকমের মানুষের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ থাকবে, জীবনে তত বেশি ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ আপনি হাতের নাগালে পাবেন। শুধু একটা ভালো সুযোগ আপনার জীবনের গতিপথের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। তাই করোনা-পরবর্তী সামাজিক একাকিত্বতায় যদি ভুগে থাকেন, তাহলে এখনই তা থেকে বের হয়ে পড়ুন। মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, আড্ডা দিন। নিজেকে বদ্ধ ঘরের এক কোণে ফেলে রেখে সময় এবং সুযোগ—দুটিই অপচয় করা থেকে বিরত থাকুন।

বন্ধুরাও অনেক সময় আমাদের জীবনে একজন দক্ষ কাউন্সেলরের চেয়েও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন
ছবি: পেক্সেলস

ঝুঁকি নিতে শিখুন

নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না আনলে আপনি কখনোই ভাগ্যের গতিপথের বাঁক বদল করতে পারবেন না। হতে পারে আপনি পরিবারের তথাকথিত ‘বোঝা’, হতে পারে বন্ধুমহলের সবচেয়ে ভিতু মানুষটি আপনি, হতে পারে একটা ভালো চাকরির আশায় থেকে থেকে হতাশায় নিজেকে জীবনযুদ্ধের পরাজিত এক সৈনিক বলে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনি এখনো হেরে যাননি, সময় এখনো ফুরায়নি। দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জীবনে বড় ভূমিকা পালন করে। কাজের শুরুতেই কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি না পেয়ে হাল ছেড়ে দিলে জীবনে কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন না। মনে সাহস আনুন। হাল ছেড়ে না দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পা বাড়ান। শুধু একটা সাহসী পদক্ষেপ আপনার সৌভাগ্যের পথ মসৃণ করে দিতে পারে।

আরও পড়ুন

মনটা মুক্ত রাখুন

ভাগ্য সাহসীদের প্রতি সদয় থাকে। তাই বলে যাঁরা একটু কম সাহসী বা কম আত্মবিশ্বাসী, তাঁরা কি দুর্ভাগ্য নিয়েই জীবন পার করবেন? না, তা নয়। তাই মনটা খোলামেলা রাখুন। নতুন পরিস্থিতি বা জ্ঞানকে সহজভাবে নিতে শিখুন। সেই সঙ্গে বাস্তববাদীও হয়ে উঠুন। সাহস রাখুন। মুক্ত পৃথিবীতে বুকভরে শ্বাস নিন। চাইলে যেকোনো পরিস্থিতি থেকে, ঘটনা থেকে জ্ঞানার্জন করা যায়। চোখ, কান আর মনটা খোলা রাখুন। হয়তো সাফল্যের টোটকা আপনার চোখের সামনেই আছে!

চেষ্টা অব্যাহত রাখুন

কোনো কাজে নেমেই সাফল্য পাবেন, এমন আশা করা ঠিক নয়। ভাগ্য আপনার সহায় না-ই থাকতে পারে। তাই বলে থেমে যাবেন না। লেগে থাকুন। পারলে এমন কারও সঙ্গ নিতে হবে, যিনি আপনাকে বেশ উৎসাহ দিতে পারেন। তিনি হতে পারেন বন্ধু, প্রেমিক–প্রেমিকা বা স্বামী নয়তো স্ত্রী। অনবরত চেষ্টা করতে থাকলে একদিন না একদিন সৌভাগ্যের দিশা আপনি পাবেনই।

একটা সাহসী পদক্ষেপ আপনার সৌভাগ্যের পথ মসৃণ করে দিতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

নতুন কিছু শিখুন

ঘুম থেকে উঠে কর্মস্থল, সেখান থেকে ফিরে বাসা, কোনো রকমে সন্ধ্যাটা পার করে আবার ঘুম। পরদিন একই জীবনযাপনের পুনরাবৃত্তি। আমাদের অনেকেরই দৈনন্দিন রুটিন প্রায় একই ধরনের। সেখানে থাকে না কোনো পরিবর্তন, থাকে না কোনো নতুন আয়োজন। থাকে শুধু একঘেয়েমি। এভাবে একঘেয়ে জীবনযাপনে আপনি আরও বেশি দুর্ভাগ্যের চক্রে পড়ে যাবেন। তাই দৈনন্দিন কাজে কিছুটা পরিবর্তন আনুন। এমন কিছু শিখুন, যা আপনাকে আনন্দ দেয়। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কী হতে পারে সেই কাজ। হতে পারে তা আপনার পুরোনো কোনো শখ। দৈনন্দিন পেশাদারত্বের আড়ালে পুরোনো যে শখটা চাপা পড়ে গিয়েছিল, তাতে নতুন করে প্রাণ দিন। নিজের সৃজনশীলতা আর মেধা দিয়ে শিখে ফেলুন সেই কাজ। দেখবেন, দুর্ভাগ্যের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হতে পারবেন।

আরও পড়ুন

বই পড়ার অভ্যাস করুন

সবাই কি শুধু গল্প-উপন্যাসই পছন্দ করে? কেউ কেউ কবিতাপ্রেমী, কেউ প্রবন্ধ কিংবা ভ্রমণবিষয়ক বই পেলে নাওয়াখাওয়া ভুলে যাই। আপনি হয়তো শুধু কবিতা পড়তেই আনন্দ পান। যদি এমন হয়, তবে সেখানে ভিন্নতা আনুন। সাধারণত আপনি যা পড়েন না, যেমন ধরুন উপন্যাস বই কিংবা কোনো ম্যাগাজিন, সেসবও পড়তে শুরু করুন। বই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে। মনের জট খুলে উন্মুক্ত করতে পারে। আবার বই পড়ে সহজেই নির্ভার হওয়া যায়। গান শুনে, বিকেলে একটু হেঁটে কিংবা ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়েও নির্ভার থাকা সম্ভব। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের এক গবেষণা বলছে, মাত্র ছয় মিনিট শুধু মন দিয়ে বই পড়লেই নির্ভার হওয়া সম্ভব। তাই জীবনে সৌভাগ্য পেতে চাইলে বই পড়ার অভ্যাস করুন।

ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের এক গবেষণা বলছে, মাত্র ছয় মিনিট শুধু মন দিয়ে বই পড়লেই নির্ভার হওয়া সম্ভব
ছবি: পেক্সেলস

আরও বেশি উদার হোন

কর্মক্ষেত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বা নিজের বাড়িতে—যেখানেই থাকুন না কেন, সব সময় উদার থাকুন। উদারতা মানেই শুধু টাকাপয়সা দিয়ে কাউকে উপকার করা নয়। আপনার সামান্য প্রশংসাটুকুও হতে পারে আপনার উদারতার বহিঃপ্রকাশ। উদার মানুষদের কর্মক্ষেত্রে বা বন্ধুমহলে গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তাই তাদের সামনে নতুন নতুন সুযোগও তৈরি হয়। উদার মানুষদের হতাশা সহজে স্পর্শ করতে পারে না।

অন্যের সাহায্য নিন

খারাপ সময়ে আসতেই পারে; তাই বলে খারাপ সময়ের চক্র থেকে নিজেকে বের করে আনতে একাই চেষ্টা চালিয়ে যাবেন—এমনটা নয়। অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। সেটা হতে পারে একজন কাউন্সেলর বা একজন বন্ধু। কাউন্সেলরের কাছে সমস্যার কথা জানালে তাঁরা তা থেকে মুক্ত হওয়ার পথ দেখিয়ে দেন। বন্ধুরাও অনেক সময় আমাদের জীবনে একজন দক্ষ কাউন্সেলরের চেয়েও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন