ডায়রিয়া থেকে সেরে ওঠার সময় করণীয়
ডায়রিয়া কোনো রোগ নয়। এটি রোগের উপসর্গ মাত্র। পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন ব্যাধি থেকে শুরু করে নানাবিধ কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। সাধারণত দিনে তিন বা ততোধিকবার পাতলা পায়খানা হলে সেটিকে ডায়রিয়া বলে। এটি স্বল্প থেকে দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
সাধারণত অস্বাস্থ্যকর দূষিত খাদ্য গ্রহণ করলে বা বিশুদ্ধ পানি পান না করলে জীবাণুর সংক্রমণে ডায়রিয়া হয়। সব সময় ডায়রিয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। পানিশূন্যতা রোধ করাই এর মূল চিকিৎসা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমনিতেই সেরে যায়। ডায়রিয়ার ফলে শরীরে দুর্বলতা, লবণ ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সেরে ওঠার পরও কয়েক দিন এই দুর্বলতা থাকতে পারে, রুচি কমে যেতে পারে। সেরে ওঠার সময় আরও যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলো—
দেহের জন্য অপরিহার্য ইলেকট্রোলাইট যেমন পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্লোরাইডের ঘাটতিসহ ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে মাংসপেশিতে টান বা ব্যথা লাগা ইত্যাদি।
পানিশূন্যতার জন্য মাথাব্যথা/ঝিমঝিম লাগা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
ডায়রিয়ায় জিংক সেবন
এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও হজমশক্তি বাড়ায় এবং ডায়রিয়ার পরিমাণ দ্রুত কমাতে সহায়ক। তাই পর্যাপ্ত পানি ও স্যালাইনের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শমতো জিংক সেবন করা যেতে পারে।
ডায়রিয়া–পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
পর্যাপ্ত পানি, খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুর শরবত খেতে হবে। তবে ক্যাফেইনসমৃদ্ধ খাবার—চা, কফি, চকলেট ইত্যাদি মিষ্টিজাতীয় খাদ্য, বাজারে প্রস্তুতকৃত জুস/শরবত, কার্বোনেটেড ড্রিংক, কোমল পানীয় অথবা মদ ক্ষতিকারক।
ঝাল, মসলাযুক্ত বা চর্বিযুক্ত/তৈলাক্ত খাবার না খেয়ে স্বাভাবিক খাবার হজমশক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। যেমন কলা, নরম ভাত, সাদা রুটি, সেদ্ধ আলু, চিড়া, টোস্ট, শস্যদানা, সুজি, ভুট্টা, বার্লি, সেদ্ধ আপেল দিয়ে আপেল সস, কর্ন স্যুপ, ওটস এসব উপকারী। কাঁচা শাকসবজি বা ফলমূল না খেয়ে এ সময় রান্না করা সবজি, মটরশুঁটি, জলপাই তেল, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন চর্বিহীন মাংস, মুরগি, মাছ, ডিম, বাদাম ও বীজ ইত্যাদি গ্রহণ করা যায়। ডায়রিয়া বন্ধের এক-দুই দিন পর দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়া ভালো।
ক্ষেত্রবিশেষ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রোবায়োটিকস (অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়) বা ভিটামিন ওষুধ সেবন করা লাগতে পারে।
যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। ডায়রিয়া থেকে সেরে ওঠার সময় পরিশ্রমের কাজকর্ম না করে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক শারীরিক কার্যকলাপে ফিরতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ডায়রিয়া প্রতিরোধে নিয়মিত সাবান-পানিতে হাত ধোয়া, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোনো বিকল্প নেই।
সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ