সময় নষ্ট না করার ৫ বৈজ্ঞানিক উপায়
আমেরিকান সাইকোলজি অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৩ সালের গবেষণা বলছে, বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ক্রমাগত কাজে গড়িমসি করেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেটা আরও ভয়াবহ। সময়কে সময়মতো কাজে লাগাতে এই গড়িমসি স্বভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
‘হাতে সময় আছে ভেবেই আমি সময় নষ্ট করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অ্যাসাইনমেন্ট ছিল, যেটার জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। ভেবেছিলাম সময় যেহেতু আছে, কদিন পরেই করি। সেই কদিন ভাবতে ভাবতেই দেখি জমা দেওয়ার আগের রাত এসে পড়েছে। তখনো নিশ্চিত ছিলাম রাতের মধ্যে কাজটা শেষ করতে পারব। তা অবশ্য ভুল ভাবিনি! কাজটা ঠিকই শেষ করতে পেরেছিলাম, তবে ফলাফল হিসেবে প্রচণ্ড মানসিক চাপ অনুভব করেছিলাম।’ এভাবেই নিজের একটা বিশেষ দোষের বর্ণনা করছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম।
জারিনের এই স্বভাবকে ইংরেজিতে বলে ‘প্রক্রাস্টিনেশন’। বাংলায় যার মানে হচ্ছে ‘গড়িমসি’। বিশেষ্যটির ভাবার্থ হচ্ছে ঢিলেমি, টালবাহানা কিংবা হচ্ছে-হবে ভাব।
আমেরিকান সাইকোলজি অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৩ সালের গবেষণা বলছে, বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ক্রমাগত কাজে গড়িমসি করেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেটা আরও ভয়াবহ। কলেজগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ গড়িমসি করে সময় নষ্ট করে। সময় নষ্টের পেছনের অন্যতম পাপী এই স্বভাবের পেছনের কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা, দিয়েছেন নানান রকম মতবাদ। তবে মাত্র দুই লাইনের একটা কৌতুক দিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছেন মোটিভেশনাল প্রক্রাস্টিনেশন বিজ্ঞানের মুখ্য গবেষক ও কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. পিয়ার্স স্টিল—
‘আমার পছন্দের একটা কৌতুক শুনতে চাও?
এখন নাহ, পরে বলব।’
তাই সময়কে সময়মতো কাজে লাগাতে এই গড়িমসি স্বভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কীভাবে এটা দূর করা যায়, তাই নিয়ে আস্ত একটি বই–ই লিখে ফেলেছেন ডা. স্টিল, নাম ‘দ্য প্রক্রাস্টিনেশন ইকুয়েশন: হাউ টু স্টপ পুটিং থিংস অফ অ্যান্ড স্টার্ট গেটিং স্টাফ ডান’ (গড়িমসির সমীকরণ: কাজ ফেলে না রেখে কীভাবে শুরু করা যায়)। চলুন, তাঁর কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক গড়িমসির হাত থেকে বাঁচার কিছু কার্যকরী উপায়।
কম কিংবা বেশি ‘আশাবাদী’, কোনোটাই হওয়া যাবে না
ডা. স্টিল বলেন, ‘কোনো কাজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনি যত বেশি অনিশ্চিত হবেন, কাজটি শুরু করা ততটাই কঠিন মনে হবে।’ অতিরিক্ত আশাবাদী মনোভাব মানুষের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে সে সময়কে অবমূল্যায়ন করে। আবার কাজের ভবিষ্যতের প্রতি কম আশাবাদী হলে কাজের আগ্রহও কমে যায়। তাই যেকোনো কাজের প্রতি আশাবাদী মনোভাব হতে হবে মাঝামাঝি। কিছুটা সংশয় আপনাকে যেকোনো কাজ সময়মতো করতে আগ্রহী করে তুলবে।
কাজের পর নিজেকে নিজেই পুরস্কৃত করুন
খুব ছোটবেলায় আপনি যখন অসুস্থ অবস্থায় তিতা কোনো ওষুধ খেতে চাইতেন না, তখন মা আপনাকে লজেন্সের লোভ দেখাতেন। আর আপনিও ভালো মানুষের মতো ওষুধটা খেয়ে নিতেন। একই উপায়ে কাজের প্রতি নিজের গড়িমসি দূর করতে কাজ শেষে নিজেই নিজেকে দিতে পারেন ছোট-বড় কোনো উপহার। এতে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
কাজটিকে ভালোবাসুন, নয়তো ছেড়ে দিন
মানুষ তার অপছন্দের কাজের প্রতিই বেশি গড়িমসি করে। সে জন্য যে ব্যক্তি যে কাজে উৎসাহী, সে কাজটিই তার বেছে নেওয়া উচিত। তবে অপছন্দের কাজটি ছেড়ে দেওয়া সম্ভব না হলে কাজের একঘেয়েমি এড়ানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের সঙ্গে কাজগুলোকে যুক্ত করে সেগুলোকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারেন।
কঠিন কাজগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিন
চাকরিপ্রার্থী আরমান বেশ কয়েক দিন ধরেই ভাবছেন কিছু কম্পিউটারের ভাষা শিখবেন। কিন্তু কাজটা বেশ কঠিন ভেবে শুরুই করতে পারছেন না। ‘অনেক দিন আগেই ভেবেছি চাকরির জন্য পাইথন শেখাটা বেশ প্রয়োজন, কিন্তু শুরুই করতে পারছি না।’ আরমানের মতো এমন পরিস্থিতি এড়াতে যে কাজগুলো কঠিন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোকে বেছে নিয়ে গুরুত্ব দিলে সময়মতো সেগুলো শুরু ও শেষ করা সম্ভব।
নিয়ন্ত্রণ করুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার
‘ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক আর ইউটিউবে স্ক্রলিং করতে, মজার কোনো ছবি বা ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে কেন জানি আমরা কেউই গড়িমসি করি না, উল্টো দরকারি কাজ ফেলে রেখে এসবে আসক্ত হয়ে থাকি।’ বলেন শিক্ষার্থী রুকাইয়া হাসান। তাই সময়ের অপচয় রোধে কাজ ফেলে কিংবা কাজের ফাঁকে এগুলোর ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। মুঠোফোনের ‘স্ক্রিন-টাইম’ অপশনে অ্যালার্ম সেট করে নিজেই নিজেকে সতর্ক করতে পারেন।