ঘরের দেয়াল রং করার বড্ড হ্যাপা। বড় বড় সব আসবাব সরানো, পুরো বাসা ধুলাবালুতে মাখামাখি করা আর তারপরে কয়েক দিন ধরে সেই রং করার কারণে হওয়া এলোমেলো হওয়া বাসা গোছানো। ব্যস্ত জীবনে এত কিছু করার সময় কোথায়?
আবার শহর মানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাড়াবাড়ি। সেখানে বাসায় ওঠার সময় রং করে দেওয়া হলেও, বছরের পর বছর রং করার আর খবর থাকে না। এত সব সমস্যার এখন সহজ সমাধানের নাম ওয়ালপেপার। ধুলাবালুর ঝামেলা নেই, রঙের কারণে ঘর নোংরা হওয়ার ভয় নেই, শুধু লাগিয়ে নিলেই শেষ।
ইকো ইনোভেটরসের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলছিলেন সে কথাই, ‘আগে আলাদা করে একটা ঘরকে ফোকাস করে আমরা রং করতাম। এখন ধুলা বা সময়ের কথা বিবেচনা করে মানুষ ওয়ালপেপারে ঝুঁকছে। বাজার খুঁজলেই এখন থ্রিডি বা টুডি ওয়াল পেপার পাওয়া যায়।’
দেয়াল রাঙানোর সমস্যার অল্প সময়ের সমাধান এটি। তবে দেয়ালে ওয়ালপেপার লাগানোর আগে কিছু বিষয়ে নজর দেওয়ার কথা বললেন এই ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, ওয়ালপেপার লাগানোর আগে দেখে নেবেন দেয়ালে কোনো স্যাঁতসেঁতে ভাব আছে কি না। দেয়াল স্যাঁতসেঁতে হলে পেপার উঠে যায়। সে ক্ষেত্রে দেয়ালে আগে পিভিসি বোর্ড লাগিয়ে নিতে হবে। পরে তার ওপরে পেপার লাগালে দেয়াল ভালো থাকবে।
দেয়ালে কোন ধরনের ওয়ালপেপার লাগাবেন, তা যেমন আপনাকে বুঝে নিতে হবে তেমনি যেখানে পেপার লাগাবেন, সেই দেয়াল নাকি সেখানে অন্য কোনো কিছু হাইলাইট করতে চাইছেন, সেটাও ভাবতে হবে। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেকেই টিভি ইউনিটের পেছনের দেয়ালে ওয়ালপেপার লাগাই। সেখানে লাগানোর জন্য অনেকে থ্রিডি ওয়ালপেপার বেছে নেন। যদি আপনি টিভি ইউনিটকে ফোকাস করতে চান, তাহলে এমন কোনো পেপার কিনবেন না, যেন টিভি ইউনিট ঢাকা পড়ে যায়। আর ওয়ালপেপারকে ফোকাস করতে চাইলে বেছে নিতে পারেন বেশি আকর্ষণীয় কিছু।
শিশুদের ঘরে ওয়ালপেপার লাগানোর ক্ষেত্রে এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, বাজারে এখন অনেক কার্টুন চরিত্রের ওয়ালপেপার পাওয়া যায়। শিশুর ঘরে কিছু লাগানোর আগে তার পছন্দ জেনে নিন। ওর যদি ডোরেমন কার্টুন পছন্দ হয়, আর আমরা যদি টম অ্যান্ড জেরি লাগিয়ে দিই, তাহলে কেমন হবে? সে জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন। তাঁরা বোঝেন শিশুর মানসিকতা। এক শিশু যেটা পছন্দ করে, অন্য শিশু সেটা পছন্দ করে না। বিশেষজ্ঞরা বোঝেন কে কী চায়।
শোবার ঘরে কোন ধরনের ওয়ালপেপার লাগাবেন, তা নির্ভর করবে ওই ঘরে কে থাকছেন তাঁর ওপর। এই গৃহসজ্জাবিদের মতে, পরদা বা আসবাব যদি আগেই কেনা থাকে তাহলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে এমন কোনো ওয়ালপেপার দেয়ালে লাগাতে পারেন। যেমন পরদা যদি বেগুনি বা আকাশি হয় তাহলে ওয়ালপেপারে যেন সেই রংটা থাকে। পরদায় যদি ফুলেল মোটিফ থাকে পেপারও তাহলে সেই ধরনের বেছে নেওয়া যেতে পারে। তা না হলে পুরো খাপছাড়া মনে হতে পারে। এই ঘরের ওয়ালপেপার হালকা রঙের হলে ভালো লাগবে। করিডরে আবার একটু উজ্জ্বল রং ভালো লাগে।
সমস্যা হলো ওয়ালপেপার খুব ময়লা হয়। যদিও তা ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করলেই হয়। এখন দোকানে নানা পরিষ্কারকও পাওয়া যায়। যেকোনো গৃহসজ্জার উপাদানের দোকানেই এসব ওয়ালপেপার পাওয়া যাবে আর দাম নির্ভর করবে আপনি কোন মানের কিনছেন এবং কতটা কিনছেন তার ওপর।
এই ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের তিন পরামর্শ
১. ওয়ালপেপার যেখানে লাগানো হয়েছে সেখানে আলোর ব্যাপারটা দেখতে হবে। ওয়ালপেপার লাগানো দেয়ালের পাশে লাইটের ব্যবস্থা করে পেইন্টিং দিয়ে ফোকাস করলে ভালো লাগবে।
২. ওয়ালপেপার রোল করা থাকে। তাই লাগানোর সময় একটু বাড়তি নজর রাখতে হয়। যেন পেপারটা ঠিকমতো মেলানো হয়। তা না হলে দেখতে খারাপ লাগবে।
৩. পেপার পুরোটা ঠিকভাবে লাগাতে হবে। এক পাশে পেপার একটু উঠে থাকলে পরে ধীরে ধীরে পুরোটাই উঠে যাবে। সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।