২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

গ্রিন হোম ওয়ার্কস্টেশন

ছবি: পেকজেলসডটকম

টেবিলে ফাইলের স্তূপ, বসের তাড়া, সহকর্মীর অনুরোধে গেলা ঢেঁকি আর ডেডলাইনের বুড়ি ছুঁয়ে যাওয়ার পর নতুন কাজের নতুন টাইমলাইনে ছুটে চলা—অফিসের কাজের মাঝে মন চায় একটু স্বস্তি। বন্ধ চোখে ভেসে ওঠে এক টুকরো সবুজ আর আনচান হৃদয় চায় সতেজ বাতাস। কিন্তু বেগবান এই যাপিত জীবনে কয়জনের ভাগ্যে শিকা ছেঁড়ে? করতে চাইলে অবশ্য অসম্ভব কিছু না। অফিসের ডেস্কে ইচ্ছা করলেই রাখা যায় ছোট্ট ইনডোর প্ল্যান্ট। মাটি, সিরামিক বা প্লাস্টিকের বাহারি টব কিংবা কাচের বোতলে রাখা যায় মাটিতে এবং পানিতে বাঁচে এমন নানা জাতের ছোট–বড় গাছ। আবার অনেক অফিসে ডেকোরেশনের অংশ হিসেবেও রাখা থাকে বিভিন্ন গাছ। আর শুধু আকর্ষণীয় অফিস কিংবা সৌন্দর্যবর্ধন নয়, বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন গাছ মানসিক চাপ কমায়, প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে, কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা কমিয়ে অনুপস্থিতির হার কমায়, সৃষ্টিশীলতা বাড়ায়, বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে এমনকি শব্দদূষণের মাত্রা কমায়। তাই এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই কর্মীদের টেবিলে গাছ দেওয়া হয়।  

ছবি: পেকজেলসডটকম

তবে অতিমারীকালীন নিও নরমাল লাইফে ঘরের একটা কোণেই গড়ে উঠেছে ছোট্ট ওয়ার্কস্টেশন। ঘরে বসেই অফিস করতে হচ্ছে বিভিন্ন পেশায় জড়িত অসংখ্য কর্মীকে। হয়তো নিয়মিত অফিসে না যেতে হলেও কাজের চাপে ফুরসত পাওয়া দায় বাড়িতেও। অফিসের নিয়মকানুন এবং বাঁধা সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে যদি সবুজ প্রতিষ্ঠা পায় তবে ঘরের ওয়ার্কস্টেশনে কেন নয়? তবে ইনডোর প্ল্যান্টের কথা ভেবে অনেকেই পিছিয়ে আসেন, অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার নয়তো? ঠিকমতো যত্ন করে বাঁচিয়ে রাখা যাবে তো? আবার কেউ পকেটের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন, কারণ বাজারে বেশির ভাগ ইনডোর প্ল্যান্টের দাম বেশ চড়া। কিন্তু কম খরচে খুব সহজে আপনিও সুন্দর গাছ দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। প্রথমেই জেনে নিই কম খরচে পাওয়া যায় এবং কম পরিশ্রমেই ভালো থাকে এমন কিছু ইনডোর প্ল্যান্টের কথা।

জিজি প্ল্যান্ট: প্রতিকূল আলো–বাতাস আর পানিস্বল্পতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে জিজি প্ল্যান্ট। এই গাছের পাতা এতটাই সতেজ আর তীব্র সবুজ যে দেখলেই মনে হয় প্লাস্টিকের গাছ। খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না, বরং যত্ন করতে গেলেই বিপদ। মাঝেমধ্যে পানি দেওয়ার পাশাপাশি পাতা মুছে দিলেই হয়। তবে বিষাক্ত পাতার কারণে বাসায় শিশু এবং পোষা প্রাণী থাকলে এই গাছ না রাখাই ভালো, রাখলেও নাগালের বাইরে। ছবি: পেকজেলসডটকম

ছবি: পেকজেলসডটকম

এরিকা পাম: অন্য গাছের চেয়ে উচ্চতায় বেশি, তাই ঘরের কোণে ভিন্নমাত্রা আনতে এরিকা পামের জুড়ি নেই। এই গাছের পাতা সুপারিগাছের মতো। পাতার পৃষ্ঠভূমি বেশি, অক্সিজেনের উৎপাদনও হয় বেশি। দেখভাল করা সহজ এবং দামটাও সাধ্যের মধ্যেই।
মানিপ্ল্যান্ট: এই গাছটির সঙ্গে প্রায় প্রত্যেকেই পরিচিত। ছোট টবে করতে পারলে ভীষণ সুন্দর লাগে এই গাছ, তা ছাড়া পানিতেও খুব সহজেই লতানো এই গাছ। নার্সারি থেকে স্বল্পমূল্যে কিনে এনে বা কারও কাছ থেকে কাটিং চেয়ে নিলেই হলো, মাটি বা পানিতে দিনে দিনে বাড়তে থাকবে বায়ু পরিশোধনেও দক্ষ এই মানিপ্ল্যান্ট। আর এ গাছের দেখভালের ঝক্কি নেই বললেই চলে। পাতার নকশাভেদে কয়েক ধরনের মানিপ্ল্যান্ট রয়েছে।

অ্যালোভেরা: বাংলায় এ গাছের নাম ঘৃতকুমারী। ইনডোর গাছ হিসেবে অ্যালোভেরা শুধু যে বায়ুশোধনে কাজে লাগে তা–ই নয়, এর দুর্দান্ত ঔষধি গুণ আছে। অ্যালোভেরার একটা গাছ থেকে অনেক চারা হয়। তাই কারও কাছে চাইলে না করবে না, তা ছাড়া বাজারেও খুব বেশি দাম হয় না। যত্ন বলতে শুধু খেয়াল রাখতে হবে গোড়ায় যেন পানি আটকে না থাকে, পানি জমে থাকলে গোড়া পচে যাবে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

স্নেক প্ল্যান্ট: এই গাছের আরেক নাম মাদার-ইন-লস টাং, সোজা বাংলায় শাশুড়ির জিহ্বা। এই গাছ দেখতেও বেশ অন্য রকম, ঘরের কোণে অল্প জায়গাতেই রাখা যায়। বায়ুশোধক ইনডোর গাছের মধ্যে স্নেক প্ল্যান্ট সেরা—অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আর পানিবিহীন বিরূপ পরিবেশেও মানিয়ে চলার অদ্ভুত সহ্যশক্তি তার। বাজারদর বেশি নয়, তবে রং আর আকারের রকমভেদে দাম কমবেশি হয়। অ্যালোভেরার মতোই চারা বের হয় এই গাছের।

লাকি ব্যাম্বু: বাঁশ, তা–ও আবার লাকি। বাঁশগাছের ছোট ভার্সন হচ্ছে লাকি ব্যাম্বু। নামে বাঁশ হলেও লাকি ব্যাম্বু ড্রেসিনা প্রজাতির গাছ। কেউ কেউ মনে করেন এগুলো বাড়িতে রাখা নাকি শুভ। ভাগ্যে প্রভাব থাকুক আর না থাকুক, সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ করে এই গাছ। কাটিং, প্রুনিং করে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া যায়। টব বা বোতলের পানিতেও খুব ভালো বাড়ে লাকি ব্যাম্বু। যত্নের মধ্যে মাঝেমধ্যে পানি বদলে দিতে হয়।

ছবি: পেকজেলসডটকম

এ ছাড়া সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয়ে নানা জাতের ক্যাকটাস, স্পাইডার প্ল্যান্ট, রাবার প্ল্যান্ট, ফিডল-লিফ ফিগ, ড্রেসিনা, ফিলোডেনড্রন, পিস লিলি, পেপেরোমিয়া, অ্যানথুরিয়াম, অ্যাগলোনিমা, আইভি ইত্যাদি গাছ ওয়ার্কস্টেশনে যোগ করবে অন্য মাত্রা। এমন সবুজের সমাহারে কাজের চাপ কি মানসিক প্রশান্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে? কিছু সতর্কতা মেনে চললেই সবুজ গৃহকোণ সারা বছরই থাকবে সতেজ। কেনার আগে নার্সারি বা অনলাইন নার্সারিগুলো ঘুরে গাছের দাম আর স্বাস্থ্য যাচাই–বাছাই করে নিতে হবে। বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নিয়ে কিংবা গুগলের সাহায্য নিয়ে গাছের যত্নেœসচেতন থাকতে হবে। তবে আর দেরি কেন? প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, মানানসই শোপিস আর বিভিন্ন ধরনের ইনডোর গাছ—সেজে উঠুক আপনার ওয়ার্কস্টেশন।