কাপড় থাকুক গোছানো
ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা আক্তার জানান, আলমারি বা ওয়ার্ডরোবে রাখা পোশাক সঠিকভাবে গোছাতে এবং সেগুলো ভালো রাখতে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। পোশাক রাখার আসবাবটি কোথায় রাখা হচ্ছে, সেটি পরিষ্কার রাখা হচ্ছে কি না, কীভাবে পোশাক রাখা হচ্ছে—এসব বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ।
কাপড়ের ক্ষতি নয়
পোশাক রাখার আসবাব শুষ্ক জায়গায় রাখুন। পোশাকের আসবাবের পেছনের দেয়াল, সে পাশের ঘরের কোণ এবং এর নিচের মেঝে যেন স্যাঁতসেঁতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্লাস্টার উঠে যাওয়া দেয়ালের পাশে আসবাব না রাখাই ভালো। দেয়ালের কেবিনেটে কাপড় রাখতে চাইলেও এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
কাঠের আসবাবে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। ভেজা ভাব থাকলে এমনটা হতে দেখা যায়। আসবাবের ভেতরের দরজার দিকে ধুলার আস্তরণের মতো হয়ে ছত্রাক দেখা দিতে পারে। তাই আসবাবের ভেতর থেকে সব পোশাক সরিয়ে আসবাবের ভেতরটা পরিষ্কার শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে রাখা প্রয়োজন।
আসবাবের তাকগুলোতে কাগজ বিছিয়ে এর ওপর কাপড় গুছিয়ে রাখুন।
আসবাবের ভেতরের কোনায় কোনায় ন্যাপথলিন রাখতে পারেন।
পোশাক সুন্দরভাবে ভাঁজ করে সংরক্ষণ করা উচিত। কোনো পোশাক এক-দুবার ব্যবহার করার পর তা না ধুয়ে উঠিয়ে রাখতে চাইলে অবশ্যই আগে রোদে দিয়ে নিতে হবে। নইলে ঘামের স্যাঁতসেঁতে ভাব রয়েই যাবে।
বছরে অন্তত দুবার আলমারি ও ওয়ার্ডরোবের সব কাপড় রোদে দেওয়া উচিত। বছরে দুবারের বেশি পারলে আরও ভালো। তবে কাপড় সরাসরি রোদে দিলে অবশ্যই উল্টে দিন। সরাসরি রোদে দেওয়ার চেয়ে যে জায়গায় রোদের তাপ আসছে, সেখানে কাপড় দেওয়া ভালো। শখের পোশাক বা একটু জমকালো পোশাকের ওপরে অন্য একটি পাতলা কাপড় দিয়ে নিতে পারেন।
ঘন ঘন পোশাক রোদে দেওয়ার সুযোগ না পেলেও আসবাব পরিষ্কার করার সময় পোশাকগুলো বের করে একটু ঝেড়ে রাখা ভালো। এমন অভ্যাস থাকলে আসবাবের স্থায়িত্বও বাড়ে, পোশাকও ভালো থাকে।
দীর্ঘদিনের জন্য পোশাক সংরক্ষণ করতে চাইলে তাতে মাড় না দেওয়াই ভালো। মাড় দেওয়া কাপড় বেশি দিন রেখে দিলে তাতে পোকা আক্রমণ করতে পারে বা ভাঁজে ভাঁজে ছত্রাক হতে পারে।
গোছানোর নিয়মকানুন
ছোট ও বড় কাপড় আলাদা করে গুছিয়ে রাখুন। তাহলে সহজেই খুঁজে পাবেন। মোজা ও অন্তর্বাস ড্রয়ারে গুছিয়ে রাখতে পারেন। ব্লাউজ ও পেটিকোট আলাদা তাকে রাখা যায়। শার্ট রাখার জন্যও আলাদা একটি তাক ব্যবহার করতে পারেন।
জমকালো জামদানি শাড়ি, যা হয়তো বছরে এক-দুবার পরা হয়, সেটিকে সংরক্ষণ করার জন্য একটি নষ্ট টিউবলাইটেও পেঁচিয়ে আলমারিতে তুলে রাখতে পারেন। তাহলে আর ভাঁজে ভাঁজে ফেঁসে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
হ্যাঙ্গারের ব্যবহার
কিছু শাড়ি ভাঁজ করা থাকলে, কিছু ঝুলিয়ে রাখলে আলমারিতে জায়গা বাঁচানো যায়। কৃত্রিম তন্তুর শাড়ি ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। সুতি শাড়ি ভাঁজ করে রাখা যায়। কোনো শাড়ির সঙ্গে নির্দিষ্ট ব্লাউজ, পেটিকোট ও হিজাব গুছিয়ে রাখতে চাইলে তিন-চার স্তরের হ্যাঙ্গার ব্যবহার করতে পারেন। একসঙ্গে পরার এ পোশাকগুলো একটি হ্যাঙ্গারে রাখলে সহজেই খুঁজে পাবেন।
ব্লেজারের সঙ্গে সাধারণত ব্যাগ থাকে, যেন ব্লেজারটি ব্যাগে রেখে একটি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে দেওয়া যায়। স্যুট-জাতীয় পোশাক আসবাবের রডে হ্যাঙ্গার ঝুলিয়ে রাখাই ভালো। সুতি পোশাক ঝুলিয়ে রাখা যায়। শিশুদের পোশাকও ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। তবে সোয়েটার বা অন্যান্য পশমি কাপড় কখনো ঝুলিয়ে রাখতে নেই, ঝোলানো হলে এগুলোর পরিধি বেড়ে যায়।
জায়গা কম পড়ছে?
পোশাকের জন্য আসবাবে জায়গা কম পড়লে প্লাস্টিকের বড় ও স্বচ্ছ বাক্সে পোশাক রাখতে পারেন। তাহলে বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যাবে কোন পোশাকটি বাক্সে আছে। হিজাব, ওড়না বা অন্যান্য ছোট কাপড়ও বাক্সে রাখা যায়। বায়ুরোধী বা এয়ারটাইট বাক্সে কাপড় রাখা ভালো। তাহলে পোকামাকড় বা ধুলাবালুর কারণে কাপড়ের ক্ষতি হবে না।