ঘর অনুযায়ী বেছে নিতে হবে রং

ঘরের আসবাবের ওপর নির্ভর করে বেছে নিন রংছবি: নকশা

ঘরের আকার, রোদের আসা-যাওয়া, ঘরের ব্যক্তি আর কাজ—এসব বিবেচনা করে রং বেছে নিতে হবে।

ঘরের আকার, রোদের আসা-যাওয়া, ঘরের ব্যক্তি আর কাজ—এসব বিবেচনা করে রং বেছে নিতে হবে।

নভেম্বর থেকে জুন—দেয়াল রং করার আদর্শ সময়। কারণ, এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা থাকে কম। আবার বৃষ্টিও একেবারে হয় না বললেই চলে। ফলে দেয়াল থাকে শুষ্ক আর আর্দ্রতামুক্ত। তাই দেয়াল রং করাতে চাইলে বর্ষা মৌসুমের আগেই উদ্যোগ নিতে পারেন।তবে মনে রাখবেন, রং একবার করা হয়ে গেলে সহজে তা পরিবর্তন করা যাবে না। তাই রং করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত।

স্থাপত্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান মেটামরফিকের স্থপতি ফারাহ মৌমিতা জানান, ঘরের ভেতরে বা বাইরে, যেখানেই রং করেন না কেন, সেটা বেশ ব্যয়বহুল। তাই হুট করে রং নির্বাচন না করে, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত। দোকানে যে রং ভালো লাগবে, সেটা আপনার দেয়ালে না–ও ভালো লাগতে পারে। তাই রং করার আগে দেয়ালের ছোট একটি অংশে রং করে যাচাই করে নিতে পারেন। এভাবে পরীক্ষা করে নিলে রং নির্বাচনটা যথাসম্ভব নিখুঁত হবে। বিশেষ কোনো থিমে রং করবেন কি না, তা–ও ভাবতে হবে। ঘরের আকার, রোদের আসা-যাওয়া, ঘরের ব্যক্তি আর কাজ—এসব বিবেচনা করে রং বেছে নিতে হবে।

আবার ঘরের আসবাবের কথা মাথায় না রেখেই অনেক সময় আমরা ঘরের জন্য রং নির্বাচন করে ফেলি। ঘরের আসবাবের সঙ্গে যায় এমন রং বেছে নেওয়া উচিত। প্রতিটা ঘরের আলাদা আবহ থাকে। একই ঘরে একাধিক রং ব্যবহার করতে চাইলে, সেটাও খুব সাবধানতার সঙ্গে করতে হবে। কেননা একাধিক রঙের ব্যবহারে ঘর দেখতে বড় বা ছোট লাগতে পারে। ঘরের সিলিংয়ের রং নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। সিলিংয়ে সাদা বা দেয়ালের রং থেকে হালকা রং ব্যবহার করলে ঘর উজ্জ্বল দেখায়। ঘরে যদি যথেষ্ট আলো–বাতাস প্রবেশ করে, তাহলে হালকা বা গাঢ় রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘরের অবস্থান যদি এমন হয় যে খুব বেশি দিনের আলো ঢুকতে পারে না, সে ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করতে পারেন।

প্রধান দরজার আশপাশে

ঘরের প্রধান দরজা দিয়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে ঘরে ঢুকি কিংবা সতেজ হয়ে বের হই। তাই প্রধান দরজার আশপাশে উজ্জ্বল রং যেমন হলুদ, কমলা, ম্যাজেন্টা, হলদে সবুজের মতো রংগুলো ব্যবহার করতে পারেন। কালো, নীল, ধূসর—এ ধরনের রং এখানে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

দরজার ঢোকার মুখে কমলা রং
ছবি: নকশা

বসার ঘর

ড্রয়িংরুম বা বসার ঘর একটি বাড়ির মূল আকর্ষণ। তাই ড্রয়িংরুমটা রুচিশীল রঙে রাঙানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে গোলাপ রঙের গোলাপি, ওশান গ্রিন, ফ্রেঞ্চ ধূসর, বেগুনি, ক্রিম কালার ও লেমন ইয়েলো হতে পারে ভালো রং। পুরো ঘরে এই রং না লাগিয়ে একাংশেও ব্যবহার করতে পারেন। চিকন একটা লাইন চলে যেতে পারে লম্বালম্বি বা আড়াআড়ি। এই উজ্জ্বল রংগুলো মনকে উজ্জীবিত ও সতেজ করে তোলে।

বসার ঘরে আড়াআড়িভাবে রং করা
ছবি: নকশা

খাবার ঘর

হলুদ বা কমলার মতো উষ্ণ, উজ্জ্বল রংগুলো আমাদের ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বিভিন্ন রেস্তোরাঁর দেয়ালে সাধারণত এই রংগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার হইহুল্লোড়, আড্ডা এগুলো খাবার ঘরেই বেশি হয়। তাই খাবার ঘরের যেকোনো উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

খাবার ঘরে কমলা রং
ছবি: নকশা

খাবার ঘর

হলুদ বা কমলার মতো উষ্ণ, উজ্জ্বল রংগুলো আমাদের ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বিভিন্ন রেস্তোরাঁর দেয়ালে সাধারণত এই রংগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার হইহুল্লোড়, আড্ডা এগুলো খাবার ঘরেই বেশি হয়। তাই খাবার ঘরের যেকোনো উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

শোবার ঘর

দিন শেষে বেডরুম বা শোবার ঘরটাই আপনার একান্ত স্বস্তির জায়গা। তাই শোবার ঘরের জন্য হালকা, সতেজ, শান্তি ও স্নিগ্ধ আমেজ আনে, এমন রং বেছে নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সাদা, চাঁপা সাদা, হালকা ভায়োলেট, হালকা সবুজ, আকাশি নীল, ফ্রেঞ্চ ধূসর, ক্রিম ইত্যাদি শীতল রং দেওয়া যায়। এ ধরনের রং মনে আনে শান্তি আর স্বস্তি। তাই শোবার ঘরে এই রংগুলোরই বেশি ব্যবহার হয়।

শিশুদের ঘরে আঁকা থাকতে পারে কাল্পনিক চরিত্র
ছবি: নকশা

বাচ্চাদের ঘর

ছোট শিশুদের ঘরের রং বাছাইয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, রং বাচ্চাদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে অনেক বেশি। বাচ্চাদের ঘরে রং করার আগে তার সঙ্গে কথা বলে পছন্দ বুঝে নেওয়া যেতে পারে। শিশুর পছন্দের কোনো চরিত্র থাকলে সেটা আঁকিয়ে নিতে পারেন দেয়ালে। তবে এখানে এমন চরিত্রই আঁকা উচিত, যা শিশুর পছন্দের তালিকায় বেশ কয়েক বছর থাকবে।

বাড়িতে যদি অফিস থাকে

বাড়ির অফিসের জন্য ছাই রঙের বিভিন্ন শেড আদর্শ। গাঢ় নীল রং কম্পিউটার বা ল্যাপটপের প্রেক্ষাপটে ভালো লাগবে। আবার সবুজ, শেওলা অথবা বাঙ্গি রঙের শেডগুলোও ভালো লাগবে।

রান্নাঘরটি সাদাই থাকুক
ছবি: নকশা

রান্নাঘর

রান্নাঘরে সূর্য বা প্রাকৃতিক আলোর প্রবেশ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না পাওয়া গেলে সাদা রংই ভালো। রান্নাঘরে গাঢ় রঙের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে।