জেনে নিন সিঁড়িতে কেমন টাইলস ব্যবহার করবেন
বাড়ি তৈরি বা সাজানোর সময় আমরা অনেক বিষয়ের প্রতি সূক্ষ্ম নজর রাখলেও কিছু কিছু বিষয়ে থাকি উদাস। দেয়ালের রং কিংবা অন্দরসজ্জা নিয়ে চিন্তাভাবনা যেন শেষই হয় না আর বাড়ির মেঝে কিংবা সিঁড়ি নিয়ে ভাবতে বসেন সবার শেষে। অথচ বাড়িতে অতিথি এলে প্রথমেই চোখ আটকায় সিঁড়ি ও মেঝেতে। অনেক সময় বাড়ির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সিঁড়ি বা মেঝেতে যেমন–তেমন টাইলস করে ছেড়ে দেয় আর আমরাও তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। যেটা একেবারেই ঠিক নয়। বাড়ির সিঁড়িতে কেমন টাইলস হবে, সেই ভাবনা আগে থেকেই ভাবতে হবে। এমনকি বাড়ির অন্দরের সঙ্গে মিলিয়ে নির্বাচন করা উচিত সিঁড়ির টাইলস। একসময় টাইলস বলতে শুধু বাড়ির ছাদে ব্যবহৃত খটখটে মাটির ফলককেই বোঝাত। হাতে তৈরি সেসব টাইলস শিল্পকর্ম হিসেবে আজও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। প্রযুক্তির এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে টাইলসের গুণগত মান। নকশায় এসেছে ভিন্নতা। সর্বাধুনিক ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করেও তৈরি হচ্ছে টাইলস। বাংলাদেশেও ব্যবহৃত হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি।
সিঁড়ির টাইলসের নকশা
যুতসই টাইলস লাগানো একটি সিঁড়ি বাড়ির সামগ্রিক সাজসজ্জায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সেটি হতে পারে ট্র্যাডিশনাল (প্রথাগত) বাড়ি বা একটি আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট। একঘেয়ে এবং আপাতভাবে অবহেলিত সিঁড়ির চেহারা বদলে দিতে পারে ভালো মানের টাইলস। সিঁড়িতে স্টোন বা পাথর মোটিফের টাইলস মানায় বেশি। বর্তমানে মেক্সিকান ও স্প্যানিশ ডিজাইনের সিঁড়ির টাইলস বেশ জনপ্রিয়। সিঁড়ির ক্ষেত্রে সাধারণত অমসৃণ ধরনের রাস্টিক টাইলস, টালি টাইলস বেশি ব্যবহার করা হয়। জ্যামিতিক নকশার টাইলসে সিঁড়িতে আসবে নতুনত্ব। বাজারে এখন আলপনা করা টাইলসও পাওয়া যায়। অনেক রং যাঁদের পছন্দ, তাঁরা এ ধরনের টাইলস ব্যবহার করতে পারেন। বাজেট যাঁদের বেশি বা আভিজাত্য বাড়াতে চান, সিঁড়িতে তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন মার্বেল বা গ্রানাইট। ছিমছাম বা নকশা করা—সব ধরনের মার্বেল বা মার্বেল টাইলস ব্যবহার করতে পারেন। আবার একটু কম খরচে আভিজাত্য আনতে চাইলে মার্বেল বা গ্রানাইটের সঙ্গে টাইলস ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মার্বেল, গ্রানাইট ও টাইলস কেটে কেটে নকশা করে বসাতে হবে। আবার সিঁড়িতে কাঠের আমেজ আনতে ব্যবহার করা যায় উডেন টাইলস।
সিঁড়ির টাইলসের ধরন
সিঁড়িতে সাধারণত তিন ধরনের টাইলস বেশি ব্যবহার করা হয়। হোমোজিনাস টাইলস, সিরামিক টাইলস ও রাস্টিক টাইলস। ডুপ্লেক্স বাড়িতে ডেকোরেটিভ টাইলসও ব্যবহার করেন অনেকে। বাড়ির সিঁড়িগুলোতে রাস্টিক টাইলসের ব্যবহারই বেশি দেখা যায়। এই টাইলসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এগুলো পিচ্ছিল হয় না। নকশাও আধুনিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। সিঁড়ি ছাড়া বাড়ির বাইরের দেয়াল, বাগান, ছাদ, লনের মতো জায়গায়ও এগুলো মানানসই। এই টাইলস ছোট ও মাঝারি সাইজে পাওয়া। তাই ব্যবহার সহজ।
যাঁরা সিঁড়ির খরচ কমাতে চান, তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন সিরামিক টাইলস। আমাদের দেশে বাসাবাড়ির সব জায়গা মিলে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে সিরামিক টাইলস। এ ধরনের টাইলসের সুবিধা ও অসুবিধা—দুটিই হচ্ছে এর হালকা ওজন। কম ওজনের কারণে যেমন ব্যবহারযোগ্য আবার সিঁড়িতে ব্যবহারে অনেক সময় ভেঙে যেতে পারে। সিঁড়ির জন্য তৈরি কিছু সিরামিক টাইলসে আলাদাভাবে গ্রিপ দেওয়া থাকে। যাতে সিঁড়িতে জুতা স্লিপ কম করে। বাজারে ছোট ও মাঝারি সাইজে পাওয়া যায় এই টাইলস। দামও তুলনামূলকভাবে কম।
তবে সিঁড়ির জন্য সবচেয়ে উপযোগী টাইলস হচ্ছে হোমোজিনাস টাইলস। মেঝেতে ব্যবহারের জন্যও এই টাইলস উপযোগী। একই উপকরণে পুরো টাইলস তৈরি হয় বলে এগুলো অনেক বেশি টেকসই এবং বেশি পরিমাণে ভার বহনে সক্ষম। আকারও ছোট।
টাইলস নির্বাচনে খেয়াল রাখুন
সঠিক টাইলস কিনতে চাইলে কিছু প্রযুক্তিগত শব্দের সঙ্গে অবশ্যই আপনার পরিচিত হতে হবে। কেনার সময় এর নকশা, আকার, কোয়ালিটি, ডেলিভারি–সুবিধা, প্রয়োজনীয় পরিমাণে আছে কি না, জেনে নিন। সেই সঙ্গে বিক্রয়–পরবর্তী কী কী সেবা আছে, তা–ও জেনে নিতে হবে। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয়ও জানতে হবে।
পানি শোষণক্ষমতা
একটি টাইলস পানির সংস্পর্শে এলে কত ভাগ পানি শোষণ করে, সেটাই টাইলসের পানি শোষণক্ষমতা। একটি টাইলস যত কম পানি শোষণ করবে, তা তত ভালো মানের টাইলস। মনে রাখতে হবে, বেশি পানি শোষণকারী টাইলস সহজে ভেঙে যেতে পারে, হারাতে পারে উজ্জ্বলতা।
সারফেস ফ্ল্যাটনেস
টাইলসের সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে এর সারফেস ফ্ল্যাটনেস বা টাইলসের নিচের সমতা। পাশাপাশি কয়েকটি টাইলস রেখে সহজে এর সমতলতা যাচাই করা যায়। অবশ্যই টাইলসের আকার ও সমতলতা যাচাই করে নেওয়া জরুরি।
টাইলসের যত্ন
কোনো দাগ যেন না পড়ে, সে জন্য মাঝেমধ্যেই পানি দিয়ে মুছতে হবে। টাইলস পরিষ্কার না রাখলে সহজেই কালো দাগ পড়ে যায়।
টাইলসের ওপর যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সাধারণত টাইলসের জোড়া লাগানো স্থানের কোনায় ময়লা জমে কালচে দাগ পড়ে, সপ্তাহে অন্তত এক দিন লিকুইড ক্লিনার ব্যবহার করা যেতে পারে।
টাইলসের ফাঁকে যে দাগ থাকে, তা পরিষ্কারের জন্য অবশ্যই ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। এতে খুব সহজেই টাইলসের দাগ উঠে যাবে।
তেল, চর্বিজাতীয় দাগ থেকে টাইলস রক্ষা করতে দাগ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাবানের পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
এক বালতি গরম পানির মধ্যে আধা কাপ ভিনেগার মিশিয়ে সিঁড়ির টাইলস মোছা হলে দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি টাইলসে জন্ম নেওয়া ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস হবে।
টাইলসের ওপর দিয়ে ভারী কোনো কিছুই টেনে সরানো উচিত নয়। সিঁড়ির টাইলসে এমন জিনিস টেনে নেবেন না, যাতে টাইলস ভেঙে যেতে পারে বা ফেটে যায়।