দেয়াল রং করার আগে যা জেনে নিতে হবে
দেয়ালে ঠিকঠাক রঙের ছোঁয়া পাল্টে দিতে পারে পুরো ঘরের আবহ। তবে মন চাইলেই তো দেয়াল রাঙানো সম্ভব নয়, বাজেটের একটা ব্যাপার আছে, রয়েছে আলাদা কিছু নিয়মকানুন। বছরের কোন সময় দেয়াল রং করাতে চাচ্ছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ, জানালেন গিজমো স্টুডিওর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও স্থপতি নাজিফা তাবাসসুম।
রং বাছাইয়ের সময়
বর্তমানে দেয়ালের রঙের নতুন ট্রেন্ড হলো টেক্সচার পেইন্ট ও স্ক্রিন পেইন্ট। ঘরের তিন দেয়াল অফ হোয়াইট কিংবা হালকা কোনো রং রেখে বাকি এক দিকের দেয়ালে টেক্সচার পেইন্ট করা হয়। টেক্সচার পেইন্ট দেয়ালে অমসৃণ একটা ভাব ফুটিয়ে তোলে। এই দেয়ালে পারিবারিক ফটো ফ্রেম বা পেইন্টিং ঝুলিয়ে ঘরের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা যায়।
রং বাছাইয়ের সময় আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত।
ঘরের আসবাবের কথা মাথায় না রেখেই অনেক সময় আমরা ঘরের রং নির্বাচন করে ফেলি। এই ভুল করা যাবে না। প্রথমে আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ঘরে কোন কোন রঙের আসবাব রয়েছে। সেই রঙের সঙ্গে যায়, এমন ওয়াল পেইন্ট বেছে নেওয়া উচিত।
সব ঘরে একই টাইপের রং ব্যবহার করলে, সেটা হয়ে ওঠে একঘেয়ে। এ জন্য ঘরের ব্যবহার বুঝে উজ্জ্বল বা হালকা রং বেছে নিতে হবে।
যত বৈচিত্র্যপূর্ণ লাইটই ব্যবহার করি না কেন, ঘরে প্রাকৃতিক আলো কতটুকু প্রবেশ করতে পারছে, তার ওপর আউটলুক নির্ভর করে। যদি যথেষ্ট আলো-বাতাস ঘরে প্রবেশ করে, তাহলে হালকা রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘরের অবস্থান যদি এমন হয় যে খুব বেশি দিনের আলো ঢুকতে পারে না, সে ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা উচিত।
ভেতরে বা বাইর, ঘরের যেখানেই রং করুন না কেন, সেটা বেশ ব্যয়বহুল। তাই হুট করে রং নির্বাচন না করে সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত। দোকানে যে রং ভালো লাগবে, আপনার দেয়ালে সেটা না-ও লাগতে পারে। তাই রং করার আগে ছোট করে ট্রায়াল দিয়ে নিতে পারেন। এভাবে পরীক্ষা করে নিলে রং নির্বাচনটা যথাসম্ভব নিখুঁত হবে।
কোন ঘরে কোন রং
ড্রয়িংরুম: এই ঘরই সবার আগে বাইরের মানুষের চোখে পড়ে। এ ক্ষেত্রে রোজ বেরি, ওশান গ্রিন, ফ্রেঞ্চ গ্রে, ভায়োলেট, ক্রিম ও লেমন ইয়েলো হতে পারে ভালো রং। এই রংগুলো মনকে উজ্জীবিত ও সতেজ করে।
ডাইনিং রুম: হলুদ বা কমলার মতো উষ্ণ, উজ্জ্বল কোনো রঙের ব্যবহার ডাইনিং রুমে সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। খাবার ঘরের দেয়াল ফ্লোরাল মোটিফের হতে পারে। কিংবা ফুলের মধ্যে প্রজাপতির কোনো মোটিফ বেছে নিতে পারেন।
বেডরুম: দিন শেষে বেডরুমটাই আপনার স্বস্তির জায়গা। তাই শোবার ঘরে হালকা, সতেজ, শান্তি ও স্নিগ্ধ আমেজ আনে, এমন রং থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে হোয়াইট, অফ হোয়াইট, লাইট ভায়োলেট, লাইট গ্রিন, লেমন ইয়েলো, ফ্রেঞ্চ গ্রে, ক্রিম ইত্যাদি শীতল রং ব্যবহার করা যেতে পারে। স্নিগ্ধতা ছড়াতে সোনালু ফুলের অ্যামবুশ ইলিউশন প্যাটার্ন, কাঠগোলাপের প্যাটার্ন কিংবা ঘাসফুল সুন্দর সমাধান হতে পারে।
শিশুদের ঘর: রং শিশুদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে অনেক বেশি। ছোট শিশুদের ঘরের রং বাছাইয়ে তাই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শিশুদের ঘরে রং করার আগে তার সঙ্গে কথা বলে পছন্দ বুঝে নেওয়া যেতে পারে। শিশুর পছন্দের কোনো চরিত্র থাকলে সেটাও আঁকিয়ে নিতে পারেন।
এশিয়ান পেইন্টসের কর্তৃপক্ষ জানায়, কয়েক বছর আগে দেখা যেত, ঘরের তিনটি দেয়াল হালকা রং দিয়ে একটি উজ্জ্বল রং করা হচ্ছে। অনেকে এখন এই উজ্জ্বল রঙের পরিবর্তে টেক্সচার পেইন্ট পছন্দ করছেন। এই রং দেয়ালে একটি ত্রিমাত্রিক ভাব ফুটিয়ে তোলে। দেশীয় আমেজ তৈরি করতে এশিয়ান পেইন্টসের শীতলপাটি ডিজাইন করে নিতে পারেন। এ ছাড়া শিশুদের রুমের জন্য আছে কিডস ওয়ার্ল্ড ডিজাইন। তুফান সিনেমার কয়েকটি সেটের দেয়ালে এশিয়ান পেইন্টস ব্যবহার করে নব্বই দশকের আবহ আনা হয়েছে। সেখানে বেশ উজ্জ্বল রংগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল।
রং কেনার আগে অবশ্যই তা পরিবেশবান্ধব কি না, খেয়াল করে কিনুন।