আমার হাতে কেন গাছ হয় না
কারও কারও হাতের যত্নে তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে গাছ, আবার কারও হাতে গাছ বাঁচতেই চায় না। ঘরের ভেতর বিস্তৃত মাটি নেই, নেই অবারিত বর্ষণ কিংবা সূর্যের আলো। তাই দরকার বাড়তি যত্ন। গাছের কী প্রয়োজন, আর কী প্রয়োজন না, সেটা বুঝতে হয় আমাদেরই।
সব থেকে বড় সত্য হলো, গাছ একেবারেই আলাদা এক প্রাণ, আলাদা এক অস্তিত্ব। এ সত্যকে অন্তরে ধারণ না করতে পারলে, গাছকে ভালোবাসতে না পারলে কখনোই আপনি গাছের প্রয়োজনগুলোকে অনুধাবন করতে পারবেন না। জানালেন রাজধানীর আসাদগেটে অবস্থিত ফলবীথি হর্টিকালচার সেন্টারের উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা জান্নাতুল মার্জিয়া।
রোদ বুঝে গাছ বাছাই
কিছু গাছ ছায়াতেই দিব্যি বেঁচে থাকে। কিছু গাছ আবার খানিক রোদ পেলেই বাঁচে। কিন্তু এমন অনেক গাছ আছে, যাদের আপনি ভালোবেসে ঘরে রাখতে চান, কিন্তু রোদ ছাড়া তারা বাঁচে না কিংবা বাঁচলেও তার প্রাণপ্রাচুর্য থাকে না। গাছটি অন্দরের যেখানে রাখতে চাচ্ছেন, সেখানে কেমন রোদ আসে, বিবেচনায় রাখুন। যেসব গাছের কিছুটা রোদ প্রয়োজন হয়, সেগুলোকে বারান্দায় রাখলেও কিন্তু সপ্তাহে কিংবা নিদেনপক্ষে প্রতি ১০ দিনে একবার ছাদে বা উঠানে নিয়ে রোদে রাখতে হবে। অন্যদিকে আবার চারা গাছ গরমের সময়কার দুপুরের রোদে নেতিয়ে পড়তে পারে।
গাছ লাগানোর সময়
• নার্সারি থেকে কিনে আনা গাছটি টবে লাগাবার সময় শিকড় নড়ে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন।
• গোবর-মাটিতে গাছ লাগানো ভালো।
• গাছ লাগাবার সময় মাটিতে সরাসরি কোনো রাসায়নিক সার দেবেন না।
পানির ভারসাম্য
অতিরিক্ত পানির কারণে গাছের শিকড় বা কাণ্ড পচে যেতে পারে। তাই মাটি ভেজা থাকলে পানি দেবেন না। পানিপ্রবাহের জন্য অবশ্যই পাত্রের নিচে ছিদ্র রাখুন। ছিদ্র থাকা সত্ত্বেও একটানা বেশ কদিন ধরে মাটি ভেজা রয়ে যাচ্ছে মনে হলে খানিকটা মাটি নিড়িয়ে দেখুন, ভেতরের কী অবস্থা। ভেতরের মাটি ভেজা থাকলে ওই মাটি বদলে দিন। মাটি বদলানোর জন্য প্রথমে চারপাশের মাটি সরিয়ে দিন। এরপর শিকড়সহ বাকি মাটি সাবধানে তুলে নিন। টবের নিচের দিককার স্যাঁতসেঁতে মাটি ফেলে দিন। এবার নতুন গোবর-মাটি নিয়ে তাতে গাছটি আবার লাগিয়ে দিন।
গাছের পুষ্টি
• চার মাস অন্তর গোবর সার দিন।
• এক-দেড় মাস অন্তর টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ আর বোরনের আনুপাতিক মিশ্রণ প্রয়োগ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি ছয় চা-চামচ টিএসপি নেওয়া হয়, তাহলে মিউরেট অব পটাশ প্রয়োজন হবে চার চা-চামচ, আর বোরন আধা চা-চামচ। মোট সাড়ে ১০ চা-চামচ পরিমাণ এই মিশ্রণ থেকে আপনার টবের আকার বুঝে সার নিয়ে প্রয়োগ করুন। সার দেওয়ার পর মাটি নিড়িয়ে খানিকটা পানি দিন। ১২ ইঞ্চি মাপের টবের জন্য দুই চা-চামচ, ১০ ইঞ্চি মাপের টবের জন্য দেড় চা-চামচ সার প্রয়োজন হয়। ছোট টবের জন্য পরিমাণ কমিয়ে নিন। ছোট গাছে দেড় মাস অন্তর সার দিন।
• রাসায়নিক ব্যবহার করতে না চাইলে মাটির পাত্রে মাটি নিয়ে তাতে সবজির খোসা কুচি করে রাখুন (কিংবা বাড়ির বাইরের মাটিতে)। ব্যবহৃত চায়ের লিকার যোগ করে দিন। লিকার দেওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। দুধ-চায়ের লিকার দেবেন না। সবজির খোসা ও লিকারের ওপর মাটি চাপা দিয়ে দিন। বেশি পরিমাণে সার করতে চাইলে বড় মাটির পাত্রে টানা ১০ দিন এভাবে সবজির খোসা ও চায়ের লিকার জমান। মাস দুয়েক পর ওই মাটিই সার হয়ে যাবে। এভাবে পরের ১০ দিন আরেকটি পাত্রে, তারপরের ১০ দিন আরেকটি পাত্রে সার করতে পারেন।
• ডিমের খোসা গুঁড়া করে বেশ খানিকটা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন মুখবন্ধ পাত্রে। ৭-১০ দিন পর তাতে সমপরিমাণ পানি ভালোভাবে মিশিয়ে পাতলা করে নিন। ছেঁকে নিয়ে পানি সেচের মতো করে গাছের গোড়ায় দিন। এভাবে ৭-১০ দিন অন্তর গাছের গোড়ায় পানির বদলে ডিমের খোসার পানি দিতে পারেন। একই নিয়মে পেঁয়াজের খোসা ভেজানো পানিও দিতে পারেন, আলাদা আলাদা দিনে।
• এক মাস অন্তর খইলের পানি দিতে পারেন। অল্প পানিতে খইল ভিজিয়ে রাখুন। ১০ দিন পর সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে পানি সেচের মতো প্রয়োগ করুন। ২-৩ দিন পর মাটি নিড়িয়ে দিন। তখন আর খইলের গন্ধ থাকবে না।
আরও যা
• সপ্তাহে একবার মাটি নিড়িয়ে দিন।
• শীতের সময় গাছের পাতাগুলোকে বারান্দার বাইরের দিকে ছড়িয়ে দিতে পারলে গাছ সজীব হয়। শিশির থেকে পুষ্টি পেয়ে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।