নবদম্পতিদের রান্নাঘরে যেসব থাকতেই হবে

নতুন সংসারের রান্নাঘর থাকুক পরিপাটি
ছবি: নকশা

অল্প কিছু জিনিস নিয়েও শুরু করা যায় নতুন সংসার। প্রয়োজন বুঝে রান্নাঘর গুছিয়ে নিলে কাজের সময় হাতের কাছে সঠিক জিনিসটা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি অকারণ অর্থ ব্যয়ও এড়ানো যায়। বেশি কিছু না কিনে এমন কিছু কিনুন, যেগুলোর ব্যবহারে সহজ হয়ে উঠবে রান্নাঘরের কাজ। তাতে নতুন জীবনের পথচলাটাও হবে মসৃণ।

বাজেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর একটা তালিকা করে নেওয়া ভালো। ভাতের হাঁড়ি, তরকারির পাতিল, ফ্রাইপ্যান বা কড়াই আর থালা-বাটি-চামচ তো প্রয়োজন হবেই। ব্লেন্ডার বা প্রেশার কুকারের মতো কিছু অনুষঙ্গ কেনা হলেও কাজের সুবিধা হয়। আবার সব জিনিস গুছিয়ে রাখার সঠিক ব্যবস্থাও চাই।

এই যেমন পেঁয়াজ, রসুন বা আদা রাখার জন্য প্রয়োজন ছিদ্রযুক্ত পাত্র, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। এভাবে ভেবেচিন্তে কেনা হলে প্রয়োজনের জিনিস সহজে নষ্টও হবে না। নতুন সংসারের রান্নাঘর সাজানো বিষয়ে পরামর্শ দিলেন রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারহানা শরীফ।

বেশি কিছু না কিনে এমন কিছু কিনুন, যেগুলোর ব্যবহারে সহজ হয়ে উঠবে রান্নাঘরের কাজ
ছবি: কবির হোসেন

রান্না ও কাটাকুটির আয়োজন

রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় মাপের পাত্র ও ঢাকনা প্রয়োজন হবে নতুন সংসারে। রান্নার চামচ, পরিবেশনের চামচ, খাবার চামচ—মাপমতো বেছে নিন সবই। রুটি খেতে চাইলে তা তৈরির সরঞ্জামেরও প্রয়োজন পড়বে। খুন্তি বা ডাল ঘুঁটনির মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রীও চাই। পরিবেশনের পাত্রও হবে আলাদা আলাদা। লবণ, চিনি, চা, মসলা প্রভৃতি রাখার জন্য চাই নির্দিষ্ট পাত্র। কাটাকুটির জন্য ভালো মানের ছুরি, চপিং বোর্ড, পিলার, কাঁচি, মাছের আঁশ ছড়ানোর অনুষঙ্গ প্রভৃতিও প্রয়োজন।

পরিমাপের সুবিধার্থে মেজরিং কাপ আর মেজরিং চামচও কিনতে পারেন। গরম পাত্র ধরার জন্য নির্দিষ্ট অনুষঙ্গ ব্যবহার করুন। ভাতের মাড় ঝরানোর জন্য ত্রিভুজাকার স্ট্যান্ড পাওয়া যায়। এটিও কাজে লাগাতে পারেন। শখের পিঠাপুলি করতে চাইলে অবশ্য কিছু ছাঁচও প্রয়োজন হবে।

গুছিয়ে রাখার ব্যবস্থা

রান্নার সরঞ্জামাদি ভাগে ভাগে গুছিয়ে রাখুন রান্নাঘরের নির্দিষ্ট স্থানে, হাত বাড়ালেই যাতে পাওয়া যায়। এই যেমন একদিকে সব ধরনের চামচ রাখতে পারেন। আবার আলাদা একটা নিরাপদ জায়গায় রাখতে পারেন কাটাকুটির সরঞ্জাম। কিচেন ক্যাবিনেটের বিভিন্ন তাকে অনায়াসেই নানা জিনিস সাজিয়ে রাখতে পারেন। ক্যাবিনেটের জন্য কাজে লাগাতে পারেন রান্নাঘরের দেয়ালের ওপর ও নিচের অংশ। অনেক বাড়ির অন্দরেই দেয়ালের সঙ্গে আটকানো এসব ক্যাবিনেট থাকে। চাইলে এমন কিছু ক্যাবিনেট বানিয়ে নিতে পারেন, যা প্রয়োজনমতো সরিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করা যায়।

নিচে চাকা লাগিয়ে ট্রলিজাতীয় ক্যাবিনেট বানিয়ে নিলে এর ওপরের অংশেও কিছু জিনিস রাখতে পারবেন। যে ধরনের ক্যাবিনেটই ব্যবহার করুন না কেন, প্রয়োজন মনে করলে কোন ক্যাবিনেটে কী ধরনের জিনিস রাখছেন, তা ছোট কাগজে লিখে এতে আটকেও দিতে পারেন।

চুলা কেনার সময় সবকিছু দেখেশুনে নিন
ছবি: নকশা

আরও যা মনে রাখতেই হবে

রান্নাঘরের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যেটির বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা আবশ্যক, তা হলো চুলা। অবশ্যই ভালো মানের চুলা কিনুন। চুলা কেনার সময় সবকিছু দেখেশুনে নিন। এ ব্যাপারে কোনো আপস নয়। মনে রাখবেন, সব চুলা সব ধরনের জ্বালানির উৎসের উপযোগী নয়।

সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা আর লাইনের সরবরাহকৃত গ্যাসের চুলা কিন্তু এক নয়। রান্নাবান্না কিংবা তৈজসপত্র ধোয়ার কাজ যিনি করবেন, তাঁর জন্য পানিরোধী অ্যাপ্রনের প্রয়োজন হয়। হাত মোছার তোয়ালে, বাসনপত্র মোছার কাপড়—সবই থাকতে হবে হাতের কাছে।

রান্নাঘরে আলোর ব্যবস্থা করুন ঠিকঠাক। এমন জায়গায় আলোর উৎস রাখুন, যাতে দাঁড়িয়ে কাজ করলেও আলো বাধাপ্রাপ্ত না হয়। অর্থাৎ সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। কিচেন চিমনি বা এগজস্ট ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা ভালো। রান্নাঘরের ময়লা বা খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলার জন্য আলাদা ঝুড়ি রাখা প্রয়োজন।