২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বসার ঘরের টাইলস কেমন হবে

আর দশটা সাধারণ দিনে হয়তো একবারও যাওয়া পড়ে না। আবার অতিথি এলে এ ঘরটাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; অতিথি আর বাড়ির মানুষের মিলনমেলা। বাইরের মানুষের কাছে তখন আপনার পছন্দ–রুচিও তুলে ধরে এ ঘর। কেমন হবে এ কালের বসার ঘরের মেঝের টাইলস, খোঁজখবর করলেন মৃণাল সাহা

বসার ঘরের টাইলস হওয়া চাই ঝকঝকে আর আকারে বড়
ছবি: সুমন ইউসুফ

কয়েক বছর আগেও ঘরের মেঝের জন্য মানুষের প্রথম পছন্দ ছিল মোজাইক। বসার ঘর থেকে শোবার ঘর, এমনকি রান্নাঘর, বাথরুমেও ছিল মোজাইকের একাধিপত্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোজাইকের রাজত্ব দখল করে নিয়েছে এখন টাইলস।

তবে টাইলসের এই জনপ্রিয়তা এক দিনে আসেনি। এক দশক আগেও মানুষের কাছে টাইলস ছিল বিলাসপণ্য। অভিজাত পরিবারের বিলাসবহুল কোনো বাসাতেই শুধু টাইলসের দেখা মিলত। মধ্যবিত্তের ঘরে জায়গা করে নিত মোজাইক কিংবা মার্বেল পাথর। সময় পাল্টেছে, বর্তমানে বাড়ি তৈরির জন্য ইট, বালু, রড, সিমেন্টের মতো টাইলসও অতি আবশ্যকীয় একটি বস্তু।

টাইলসের এই বিলাসপণ্য থেকে সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে দুটি বিষয়। আরএসি সিরামিকসের প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমানের মতে, সহজলভ্যতা আর তুলনামূলক কম দামের কারণে মোজাইককে সরিয়ে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে টাইলস। ঘরের মেঝেতে যেমন খুবই অল্প সময়ে টাইলস লাগানো যায়, তেমনি যত্ন নিতেও খুব একটা বেগ পোহাতে হয় না। মোজাইকের তুলনায় খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে ঘরে টাইলস লাগানো সম্ভব। রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও অনেকে মোজাইক থেকে বেশি টাইলসে নজর দিচ্ছেন।

দেয়ালের মত ধবধবে সাদা টাইলস মেঝেতেও
ছবি: প্রথম আলো

কথায় আছে, প্রথমে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। টাইলসের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সত্য। টাইলসেও প্রথম সৌন্দর্যের দিকেই নজর যায়। মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগেও টাইলসের ডিজাইনে বেশ সীমাবদ্ধতা ছিল। চাইলেও যেকোনো ডিজাইন করা সম্ভব হতো না। এখন ডিজিটাল প্রিন্টিং আসার পর থেকে টাইলসের ওপর যেকোনো ডিজাইন করা সময়ের ব্যাপারমাত্র। ইন্টারনেটের যুগে বেশির ভাগ মানুষই বিদেশি ঘরবাড়ি দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তাঁদের মতো করে ঘর সাজানোর পরিকল্পনা করেন। উড, ম্যাট কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দৃশ্য—যেকোনো ডিজাইনই এখন টাইলসে সহজে তৈরি করা সম্ভব।

টাইলসে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বাসার সব ঘরে একই ধরনের টাইলস বসাবেন না যেন। বাসাজুড়ে একই ধরনের টাইলসের ব্যবহার আনতে পারে একঘেয়েমি। ঘর থেকে ঘরে গেলে যাতে মানসিকতায়ও পরিবর্তন আসে, সে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন, ঘরভেদে টাইলসের আকার, ধরন ও নকশায় আসতে হবে পরিবর্তন। এখন বাথরুম থেকে রান্নাঘর—সব ঘরের জন্যই আলাদা নকশা ও ধরনের টাইলস পাওয়া যাচ্ছে। ড্রয়িংরুমের মেঝে ও দেয়ালের জন্যও আছে বিশেষ টাইলস।

মেঝের টাইলস আকারে বড় হয়ে থাকে
ছবি: প্রথম আলো

ড্রয়িংরুম হওয়া উচিত এমন, যেন বেড়াতে আসা অতিথি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, আবার আপনার শৈল্পিক চিন্তাধারাও ফুটে ওঠে। আবার ড্রয়িংরুমের টাইলস হওয়া উচিত ঝকঝকে ও চকচকে। এসব বিচারে ড্রয়িংরুমের মেঝের টাইলস হিসেবে পোরসেলিন বেশ জনপ্রিয়। অন্যান্য টাইলসের তুলনায় পোরসেলিন বেশ টেকসই। আবার মিরর পলিশ টাইলসও লাগাতে পারেন। সাধারণ ডিটারজেন্ট দিয়ে একবার পরিষ্কার করলেই নতুনের রূপ পাবে এই টাইলস।

ড্রয়িংরুমের সৌন্দর্য বাড়াতে লাগাতে পারেন প্যাটার্ন টাইলস। বর্তমানে বিভিন্ন প্যাটার্নের বড় টাইলস পাওয়া যায়। ৪ কিংবা ৮টি টাইলস মিলে একটি ভিন্ন নকশা তৈরি করে, বাকি সব টাইলস থেকে যা আলাদা। এই নকশা ড্রয়িংরুমের সৌন্দর্যে আনে আলাদা মাত্রা। ‘ডেকোরেটিভ টাইলস’ নামে পরিচিত এই টাইলসগুলো শুধু মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেই সাহায্য করে না, বরং মেঝেকে খানিকটা বড়সড় দেখাতেও সাহায্য করে।

প্রথম প্রথম কিছুটা সংকোচ থাকলেও ধীরে ধীরে ড্রয়িংরুমের দেয়ালেও জায়গা করে নিতে শুরু করেছে টাইলস। ড্রয়িংরুমের দেয়ালেই শোভা পায় টেলিভিশন। তার পেছনের দেয়ালটা টাইলস দিয়ে সাজাতে পারেন। এই টাইলসে থাকতে পারে টেরাকোটার নকশা। এতে সুবিধাও আছে। দেয়ালের রং যেখানে মলিন হতে শুরু করে, সেখানে একবার ঠিকভাবে পরিষ্কার করলেই আবার পুরোনো সৌন্দর্য ফিরে পায় এই টাইলস। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য, কাঠ কিংবা মার্বেলের নকশা শোভা পেতে পারে ড্রয়িংরুমের দেয়ালে।

টাইলস যেমনই হোক না কেন, দিন শেষে ঘরের সৌন্দর্যই আসল। আর তার একটা বড় অংশ নির্ভর করে উপস্থাপন ও পরিবেশনার ওপর। ঘরের সৌন্দর্য যেমনই হোক না কেন, তা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় আন্তরিকতা।