স্নানঘর যেভাবে বিলাসবহুল হতে পারে

আগেকার সময় নাকি কনের বাড়িতে গেলে কনে দেখার পাশাপাশি একছুতোয় বাথরুমটাও ঘুরে আসতেন গুরুজনেরা। কেননা ড্রয়িংরুম তো সবাই গুছিয়েই রাখে। বাথরুম দেখেই নাকি সেই পরিবারের রুচি আর আভিজাত্য বোঝা যায়! এই সময়ে দাঁড়িয়েও বিষয়টি একই রকমভাবে প্রাসঙ্গিক। একজন তরুণী ফ্যাশনসচেতন কি না, সেটা নাকি বিচার করা যায় হাতব্যাগ দিয়ে, ছেলের ফ্যাশন মাপা হয় তাঁর পায়ের জুতা দিয়ে আর ঘর চেনা যায় বাথরুম দিয়ে। তাই আধুনিক লাক্সারি বাসায় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয় বাথরুমের নকশা। স্নানঘরের ২০২৪ সালের ট্রেন্ডগুলোর খবর জানাচ্ছেন জিনাত শারমিন

কয়েক বছর হলো বাথরুমে বড় আয়নার ব্যবহার বাড়ছে
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

বড় আয়না

বহুকাল ধরে বাথরুমে ছোট চারকোনা বা গোলাকৃতির আয়নার চল ছিল। তবে কয়েক বছর হলো বাথরুমে বড় আয়নার ব্যবহার বাড়ছে। বড় আয়নায় বাথরুমের একটা বড় অংশের প্রতিবিম্ব পড়ে। ফলে বাথরুমটাকে মনে হয় দ্বিগুণ। এ ছাড়া গোল আর চারকোনার পাশাপাশি চলছে অনিয়মিত আকারের (ইরেগুলার শেপ) বড় আয়না। কিছু কিছু আয়নার ভেতরে এলইডি লাইটও বসানো থাকে।

 ভ্যানিটি ও ক্যাবিনেট

বাথরুমে ভ্যানিটি ঢুকে পড়েছে, এ তো পুরোনো খবর। এই ভ্যানিটিতে বাথরুমের তোয়ালে থেকে শুরু করে টয়লেট টিস্যু, সাবান, শ্যাম্পুর সঙ্গে মাঝেমধ্যে বই, আইপ্যাডও পাওয়া যায়। নতুন খবর হলো, চলতি ধারায় ভাসমান (ফ্লোটিং) ভ্যানিটিও রয়েছে। মেঝে থেকে এক ফুট বা দুই ফুট উঁচুতে থাকে এই ভ্যানিটি। বাথরুমের দরজার ওপরে, বেসিনের নিচে অথবা টয়লেটের সিটের ওপরে রাখা হয় এই স্টোরেজ। এখন টয়লেটের ভিতও মেঝে থেকে কয়েক ইঞ্চি ওপরে বসানো হয়, যাতে মেঝে পুরোটাই দেখা যায়। এ ছাড়া থাকে তাক। টাইলসের ভেতরে–ভেতরে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়। তাতে আলাদা করে জায়গা লাগে না। হ্যান্ডওয়াশ বা বডিওয়াশের জন্য অনেকে বাথরুমের নকশা আর রঙের সঙ্গে মানানসই দেয়ালের সঙ্গে জোড়া স্থায়ী ডিসপেনসার রাখেন। খালি হলে সেটা ভরে নিলেই আলাদা করে সেসবের কৌটা রাখার প্রয়োজন পড়ে না।

বৃষ্টি ভালোবাসেন না, এমন মানুষ হয়? বাথরুমের ঝরনা থেকে বৃষ্টির অনুভূতি আনতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখছেন না বিশেষজ্ঞরা
ছবি: কবির হোসেন

ফলস সিলিং

ড্রয়িংরুম থেকে বাথরুমেও ঢুকে পড়েছে ফলস সিলিং। বাথরুমে সাধারণত ফলস সিলিং ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকৃতিকে ডেকে আনা হয়। যেমন ফলস সিলিংয়ে থাকে খোলা আকাশ, গাছ–পাতা, ফুল, পাখি, ঝরনা ইত্যাদি। বাথরুমে ঢুকলে মনে হবে, আপনি যেন প্রাকৃতিক পরিবেশে এসে পড়েছেন। এ ছাড়া দেয়ালে কোরিয়ান ওয়ালপেপার ব্যবহার করা হয়। ওয়ালপেপার লাগানোর জন্য দেয়ালে আগে ডব্লিউপিসি (উড প্লাস্টিক কম্পোজিট) বোর্ড লাগানো হয়। এই ওয়ালপেপার পুরোদস্তুর পানিরোধী। তাই সামনের দিকে পানি লাগলে কোনো অসুবিধা নেই। আর পেছন থেকে যাতে দেয়ালের ভেতর দিয়ে পানি ঢুকে গ্লু নষ্ট না হয়ে যায়, সে জন্যও আগে ডব্লিউপিসি বোর্ড লাগিয়ে নিতে হবে।

রেইন শাওয়ার

বৃষ্টি ভালোবাসেন না, এমন মানুষ হয়? বাথরুমের ঝরনা থেকে বৃষ্টির অনুভূতি আনতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখছেন না বিশেষজ্ঞরা। সে রকম একটা শাওয়ারও লাগিয়ে নিতে পারেন। প্রাকৃতিক ভাব এনে দেবে, এ রকম ফলস সিলিংয়ের নিচে রেইন শাওয়ার নেওয়ার সামর্থ্য থাকলে লুফে নিতে পারেন।

পার্টিশনের ফলে আপনার শুকনা অংশটা ভিজবে না। এ ছাড়া অনেকেই টয়লেট আর গোসলের অংশটি আলাদা থাকাটাই সমীচীন মনে করেন
ছবি: কবির হোসেন

পার্টিশন

টয়লেটের জন্য বিশেষ স্থানটি গোসলের জায়গা থেকে কাচের দেয়ালের মাধ্যমে আলাদা করার চল আগে শুধু হোটেলে দেখা যেত। এখন সেটা অনেক বাড়িতেও ঢুকে পড়েছে। এতে আপনার শুকনা অংশটা ভিজবে না। এ ছাড়া অনেকেই টয়লেট আর গোসলের অংশটি আলাদা থাকাটাই সমীচীন মনে করেন। স্বচ্ছ কাচের দেয়ালটায় চিকন বর্ডার ব্যবহার করতে পারেন। তাতে দেয়ালটা সহজেই চোখে পড়বে। আবার স্বচ্ছ কাচের হওয়ায় জায়গাটা ভাগাভাগিও হবে না, ফলে ছোট হয়েও যাবে না।

এসব ছাড়াও অনেকে বাথরুমে বাথটাব, ভাস্কর্য, চিত্রকর্ম, গাছ রাখেন। সেগুলোর জন্য বাথরুমে একটু বাড়তি জায়গার দরকার পড়ে।

স্নানঘরের সজ্জার ক্ষেত্রে শতকরা ৫০ ভাগই হলো লাইটিং, বাকি ৫০ ভাগ অন্য সবকিছু মিলিয়ে। বুঝতেই পারছেন, আলোকসজ্জা কতটা গুরুত্বপূর্ণ
ছবি: কবির হোসেন

বাথরুমের আলোকসজ্জা

স্নানঘরের সজ্জার ক্ষেত্রে শতকরা ৫০ ভাগই হলো লাইটিং, বাকি ৫০ ভাগ অন্য সবকিছু মিলিয়ে। বুঝতেই পারছেন, আলোকসজ্জা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বাথরুম সবচেয়ে ব্যক্তিগত জায়গা হওয়ায় সেখানে প্রাকৃতিক আলো ঢোকানোর খুব একটা সুযোগ থাকে না, বিশেষ করে শহরের ঘনবসতিতে। তাই তিন ধরনের লাইট দিয়ে বাথরুম সাজানো যায়। সাধারণ আলোকসজ্জা (জেনারেল লাইটিং), অদৃশ্য আলোকসজ্জা (ইনভিজিবল লাইট) আর আলংকারিক আলোকসজ্জা (ডেকোরেটিভ লাইট)। জেনারেল লাইটের ভেতর প্যানেল লাইট ব্যবহার না করে কোব লাইট ব্যবহার করলে ভালো হবে।

ইনভিজিবল লাইটে আলোর উৎস দেখা যায় না। বাথরুমে লাইট ব্যবহারের একটা সূত্র আছে। বাথরুম যত বর্গফুট, সেই সংখ্যাকে দশমিক ৬ দিয়ে গুণ করলেই বের হয়ে যাবে সেই বাথরুমে কত ওয়াটের আলো ব্যবহার করতে হবে। মনে করুন, আপনার বাথরুম ১০ ফুট বাই ৫ ফুট, মানে ৫০ বর্গফুট। ৫০–কে দশমিক ৬ দিয়ে গুণ করুন, ৩০। তাহলে আপনার বাথরুমে ৩০ ওয়াটের আলো প্রয়োজন। এখন এই ৩০ ওয়াটের আলোর জন্য আপনি ৬টি কোব লাইট ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিটা কোব লাইট হবে ৫ ওয়াটের। ওয়ার্ম হোয়াইট, কুল হোয়াইট আর ন্যাচারাল হোয়াইটের ভেতর আপনি ন্যাচারাল হোয়াইট রঙের আলো ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে বাথরুমে নাটকীয় আবহ আনতে বিভিন্ন ধরনের ডিম লাইটও ব্যবহার করে থাকেন।

তবে আপনার বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত জায়গা থাকে, তাহলে সাজাতে পারেন খোলামেলা করে। অনেকে গোসলের জায়গার ওপরে বাড়তি ছাদ না রেখে খোলা রাখছেন, কেউ কেউ আবার কাচের স্বচ্ছ ছাদ ব্যবহার করছেন। এতে প্রকৃতিটা উপভোগ করা যায় ঠিকমতো। স্থপতি বাড়ির নকশা করার সময় চাইলে বিশেষভাবে স্নানঘর নিয়ে আপনার পছন্দটা জানাতে পারেন। সেই মতে খোলামেলা, প্রকৃতিকে ঘরে আনার নানা উপায় তাঁরাও বাতলে দেবেন।

সূত্র: নাইনটিওয়ান হোমস

লেখাটি প্রথম আলোর বিশেষ ম্যাগাজিন বর্ণিল বসত মে ২০২৪–এ প্রকাশিত