রান্নাঘর তৈরির আগে এই বিষয়গুলো জেনে রাখুন
সাজানোর সময় শোবার ঘর, বসার ঘরের দিকে বিশেষ নজর থাকলেও কিছুটা অবহেলারই শিকার যেন রান্নাঘর। কিন্তু যেখানে রান্নার মূল কাজটা হবে, তার প্রতিটি স্তরেই থাকা উচিত কাজ সহজে করার সুবিধা। আধুনিক ধারার রান্নাঘরে প্রয়োজন ও পছন্দ—দুটোই থাকতে হবে।
রান্নাঘরের যত নকশা
স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট বা ছোট বাসায় সরলরৈখিক নকশায় রান্নাঘর তৈরি করতে হয়। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এল-আকার রান্নাঘর। তবে ইউ-আকারের রান্নাঘরকে বলা হয় সর্বজনীন রান্নাঘর। তাই একটু বাড়তি জায়গা রেখে মাঝারি বা বড় বাসাগুলোতে এ ধরনের রান্নাঘর তৈরির পরামর্শ দিলেন স্টুডিও সিয়েনার স্থপতি রিজওয়ানুল আলীম। তিনি বলেন, এক পাশে জানালা থাকলেও প্রয়োজনীয় আসবাবের জন্য এখানে আরও দুটি পাশ পাওয়া যায়, মাঝেও পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। দুটি লম্বা দেয়াল থাকলে তৈরি করা যেতে পারে প্যারালাল রান্নাঘর। এর সুবিধা হচ্ছে, একটি দেয়ালে শুকনা (ড্রাই) ও অন্য দেয়ালে ভেজা (ওয়েট) রান্নাঘর তৈরি করা যায়। আইল্যান্ড রান্নাঘরকে বলা হয় সবচেয়ে বিলাসবহুল। এ ক্ষেত্রে সরলরৈখিক, এল বা ইউ-আকারের রান্নাঘর তৈরির পর মাঝের খালি জায়গায় টেবিলের মতো আরও একটি আইল্যান্ড বসানো হয়। এটিকে রান্নার জায়গা, স্টোরেজ, টেবিল ইত্যাদি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মডুলার ও ক্ল্যাসিক রান্নাঘর কী
রান্নাঘরগুলোকে মডুলার ও ক্ল্যাসিক—দুভাবে তৈরি করা যায়। আমাদের বাসাবাড়িতে তৈরি বেশির ভাগ রান্নাঘরই ক্ল্যাসিক। এ ধরনের রান্নাঘরে সবকিছু স্থায়ীভাবে সংযুক্ত থাকে। বাড়ি পরিবর্তন করলে যা খুলে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অন্যদিকে মডুলার রান্নাঘর আপনার প্রয়োজনে খুলে নিয়ে অন্য একই রকম স্থানে পুনরায় লাগিয়ে নিতে পারবেন।
রান্নাঘরে যা কিছু আবশ্যক
বেসিন, যেখানে সব পানির কাজ হবে। চুলা, যেখানে রান্না হবে। গ্যাস অথবা বৈদ্যুতিক চুলা ছাড়াও থাকতে পারে ওভেন। ধোঁয়া বের করে দেওয়ার জন্য চুলার ওপর শক্তিশালী হুড লাগাতে হবে। এরপর গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপ স্ট্যান্ড, যেখানে কাটাকুটির কাজ করা যাবে, রাখা যাবে জিনিসপত্র। প্রথমেই এগুলো নিশ্চিত করতে হবে, জানান স্থপতি আলীম। এ ছাড়া জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য নিচে-ওপরে যথেষ্ট প্যান্ট্রি স্টোরেজ ইউনিট তৈরি করতে হবে। সম্ভব হলে ফ্রিজ রান্নাঘরে রাখা যেতে পারে।
বহুমুখী রান্নাঘর
রান্নাঘরের জন্য সামান্য জায়গা রেখে বাসা তৈরির প্রবণতা আমাদের মধ্যে অত্যন্ত বেশি। খুব সামান্য জায়গায়তেও কিন্তু একটি পরিপাটি রান্নাঘর তৈরি করা সম্ভব। দরকার শুধু সঠিক নকশা ও মানসম্মত সরঞ্জাম। জায়গা খুব অল্প হলে আসবাবগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন সেগুলোর বহুমুখী ব্যবহার করা যায়। যেমন, সিঙ্কের ওপর অতিরিক্ত পানিরোধী কাঠ বা প্লাইউডের নমনীয় ট্রে লাগিয়ে নিলে সেখানে জিনিস রাখা বা কাটাকুটি করা যাবে।
যেমন হয় একটি পরিকল্পিত রান্নাঘর
একটি ‘ত্রিভুজ সূত্র’ আছে, জানান রিজওয়ানুল আলীম। বলেন, তিন দিকে বেসিন, চুলা এবং ফ্রিজ, তিনটি অংশ বসানো হয়। একটি থেকে আরেকটি খুব বেশি দূরে রাখা যাবে না, কাছেও রাখা যাবে না। এরপর ভাবতে হবে বায়ু চলাচলের পথ নিয়ে। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পথ, যেমন জানালা রাখা সবচেয়ে ভালো। আলীম বলেন, এমন যেন না হয় যে রান্নাঘর দিয়ে বাতাস ঢুকে বাসার অন্য ঘরগুলোতে যাচ্ছে। এতে গন্ধের সমস্যা হবে। সে জন্য অতিরিক্ত হুড রাখতে হবে।
চুলার পাশে না, বেসিনের পাশে হ্যাঁ
জানালা হতে হবে বেসিনের ওপর। যেন বাইরের তাপে ভেজাভাব সহজে শুকিয়ে যায়। চুলার ওপর জানালা রাখা যাবে না, বাতাসে আগুনের প্রবাহ নষ্ট হবে। রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা জরুরি। রান্নাঘরের আসবাবের ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল মার্বেল, টাইলস, প্লাইউড বা অ্যাক্রেলিক বোর্ড ইত্যাদি মসৃণ পৃষ্ঠের উপকরণ বেছে নিতে হবে। এগুলো যেন দাগ ও পানিরোধী হয়। রান্নাঘরে যথাযথ পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা চাই। এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং নষ্ট হলেও সহজে মেরামত করা যায়। ময়লা ফেলার জন্য আলাদা দরজাযুক্ত ক্যাবিনেট তৈরি করুন।
থাকা চাই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা
এটি খুব জরুরি, কিন্তু আমাদের এখানে উপেক্ষিত। স্থপতি আলীম বলেন, রান্নাঘর যেমনই হোক, বাড়ির সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই–অক্সাইড বা আর্গন গ্যাসসমৃদ্ধ একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিনে রাখতে পারেন।