বিছানার চাদর নিয়মিত বদলাচ্ছেন তো?

শেষ কবে বিছানার চাদর বদলেছেন আপনি? প্রশ্নটা শুনে অবাক লাগতে পারে, খটকাও লাগতে পারে। সচরাচর কেউ এ রকম প্রশ্ন করে না। যার ওপর সারা দিনের ক্লান্তি শেষে গা এলিয়ে দিচ্ছেন, তার খেয়াল শেষ কবে রেখেছেন? দিনশেষে যেটি আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী, তার পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কথা বেমালুম ভুলে যাননি তো?

গ্রীষ্মে দুই সপ্তাহ পরপর বদলাতে হবে বিছানার চাদর
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক জরিপে দেখা গেছে, আড়াই হাজার মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষ প্রতি চার মাসে একবার তাদের বিছানার চাদর পরিষ্কার করেন। ১২ শতাংশ মানুষ শেষ কবে চাদর ধুয়ে বিছানায় নতুন চাদর পেতেছেন, তা তাদের মনে নেই। যদিও নারীদের মধ্যে চাদর বদলানোর প্রবণতা একটু বেশি। ৬২ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, প্রতি মাসেই তারা একবার বিছানার চাদর পরিষ্কার করেন।

কেন বদলাতে হবে বিছানার চাদর?

সুস্থ থাকার জন্য যতটা প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ঠিক ততটাই প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কথায় আছে, সুস্থ দেহে সুস্থ মন। আর সেই সুস্থ দেহের জন্য আশপাশের পরিবেশ সুস্থ রাখা জরুরি। নিউরোসাইটিস্ট ও নিদ্রা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার লিন্ডসে ব্রাউনিংয়ের মতে, আমাদের আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের মধ্যে বিছানার চাদরই সবচেয়ে দ্রুত অপরিষ্কার হয়। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে বিছানার চাদরের ওপরই গা এলিয়ে দিতে হয় আমাদের। আর তাতে লেগে থাকে সারা দিনের শরীরে জমা হয়ে থাকা ঘাম, ধুলা।

দিনের ক্লান্তি শেষে বিছানার চাদরের ওপরই গা এলিয়ে দিই আমরা
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

অনেকে বলতে পারেন, আমি তো গোসল করে এসে এরপর বিছানায় যাই, আমার সারা দিনের শরীরের ময়লা তো বিছানার চাদরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সেটা অনেকাংশে সত্য। তবে শরীর যতই পরিষ্কার করুন না কেন, শরীরে নিয়মিত বিরতিতেই ঘাম উৎপন্ন হয়, বিশেষত গ্রীষ্মকালে। যখন ঘুমানোর সময় কমবেশি প্রচুর ঘাম উৎপন্ন হয়, তখন বিছানার চাদরের যত্ন নেওয়াটা আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়ে।

সময়মতো বিছানার চাদর না বদলানোর প্রভাব

সময়মতো বিছানার চাদর পরিবর্তন না করার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। বিছানার চাদরে জমে থাকা ধুলাবালু, ব্যাকটেরিয়া আমাদের ঘুমের সময় সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা থেকে শরীরে দেখা দিতে পারে অ্যালার্জি, ব্রণ কিংবা একজিমা। এ ছাড়া অপরিষ্কার বিছানা ব্যাঘাত ঘটাতে পারে ঘুমের। কারণ, মানুষের ঘুম পুরোটাই নির্ভর করে তার আরামের ওপর। অপরিষ্কার বিছানায় নিশ্চয়ই সেই আরামের ঘুম হবে না। আর ঘুমে নিয়মিত ব্যাঘাত সুযোগ করে দেয় দেহে আরও অনেক রোগ বাসা বাঁধার।

বিছানার চাদরে জমে থাকা ধুলাবালু, ব্যাকটেরিয়া আমাদের ঘুমের সময় সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

প্রতিদিন ঘুমের সময় আমাদের শরীর থেকে শুধু ঘামই নয়, নিয়মিত বিরতিতে মৃত কোষ খসে পড়ে। খালি চোখে দেখা অসম্ভব সেসব মৃত কোষ জমা হয় বিছানার চাদরে, যা আকর্ষণ করে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া ও পোকামাকড়কে। তাদের থেকে সরাসরি বড় রকম রোগ-বালাই হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু ভালো ঘুমের ব্যাঘাতেও তাদের জুড়ি মেলা ভার। এমনকি তাদের সংস্পর্শে শরীরে র‍্যাশ, চুলকানি, লাল স্পটের দেখাও মিলতে পারে। অনেক দিন এক জায়গায় থাকলে তারাই বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ সব রোগের জীবাণু।

বিছানার চাদর ঠিক কত দিন পর পর বদলানো উচিত?

ডাক্তার লিন্ডসে ব্রাউনিংয়ের মতে, দুই সপ্তাহ পরপরই বিছানার চাদর বদলানো প্রয়োজন। বিছানায় জমা হওয়া মৃত কোষ ও ঘাম, ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করতে দেড় থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। যে কারণে দুই সপ্তাহ পরপর অবশ্যই বিছানার চাদর পরিবর্তন করা উচিত। তবে এটা সময়ের ওপরও নির্ভর করে। শীতকালে যেহেতু তাপমাত্রা কম থাকে, তাই ঘামও তৈরি হয় কম। সে সময় চাইলে একটু বেশি সময় একই চাদর রাখা যেতে পারে। তবে এ সময় শরীরের মৃত কোষের উৎপাদন কিন্তু কমে যায় না। শীতকালে একটু শিথিল করে প্রতি মাসে একবার চাদর বদলালেও চলবে। তবে গ্রীষ্মকালে তা যেন কোনোভাবেই দুই সপ্তাহের বেশি না হয়, সে ব্যাপারে লক্ষ রাখা প্রয়োজন।

ডাক্তার ব্রাউনিংয়ের মতে, বিছানা হবে শরীরের অভয়ারণ্য। যেখানে শরীর নিজের মর্জিমতো খেলা করবে। কিন্তু সে জায়গাটাই যদি পরিপূর্ণ থাকে ব্যাকটেরিয়া আর অদৃশ্য আবর্জনায়, তাহলে দিনের শুরু আর শেষ দুটোই হবে জীবাণুর অভয়ারণ্যে। মনে রাখবেন, চাদর পরিষ্কার দেখাচ্ছে মানেই সেটা জীবাণুমুক্ত নয়। পনেরো দিন হয়ে গেলে সেখানে ময়লা না থাকুক, জীবাণু অবশ্যই বাসা বেঁধেছে।