বিবাহিত সেজে বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম, তারপর যা হলো
আমাদের আহ্বানে ভালোবাসার টক–ঝাল–মিষ্টি গল্প লিখে পাঠিয়েছেন পাঠক। ‘ছুটির দিনে’তে পর পর দুই সংখ্যায় ছাপা হওয়ার পর নির্বাচিত আরও একটি লেখা প্রকাশিত হলো এখানে।
বাসা ভাড়ার ব্যাপারে আলাপ হচ্ছে। যিনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন, ড্রয়িংরুমে ঢুকে শুরুতেই তাঁকে আন্টি বলে সম্বোধন করেছি। বাসায় আর কেউ আছে কি না, জানি না। আন্টি আমার বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করলেন। বিস্তারিত জানার পর কপাল ভাঁজ করে বললেন, ‘ওহ, তুমি বিবাহিত ব্যাচেলর?’
এমন সময় পাশের রুম থেকে জাদুকরি কণ্ঠ ভেসে এল, ‘যেহেতু বিবাহিত, সমস্যা নাই। হ্যাঁ বলে দাও, মা।’
বাসা ভাড়ার ব্যাপারে বাড়িওয়ালির প্রধান শর্ত ছিল, বিবাহিত হতে হবে, যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়া যাবে না। সংযুক্ত আরও একটি শর্ত, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বা বাইরে থেকে বাসায় ঢোকার সময় এদিক-ওদিক তাকানো যাবে না।
দীর্ঘদিন শহরে ব্যাচেলর থাকার অভিজ্ঞতায় জানি, বাসায় অবিবাহিত মেয়ে থাকলে সাধারণত এমন শর্ত দেওয়া হয়! আমি তাঁর শর্তগুলো বিনা বাক্যে মেনে নিয়ে মাসের শুরুতেই নতুন বাসায় উঠি। নিচের দিকে তাকিয়ে স্যুট-কোট পরে বাসায় আসা-যাওয়া করি। মাঝেমধ্যে আন্টির সামনে পড়লে মুঠোফোন কানে তুলে কথা বলার ভান করি, ‘নিতু, কেমন আছ? ছেলেটা ভালো আছে তো? বাসার সবাই কেমন আছে? আর কদিন পরই বাড়ি আসব...’
আমি বিবাহিত, নতুন চাকরি পেয়েছি। স্ত্রী-সন্তান গ্রামে থাকে। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় এমন কথা বলেই রাজি করিয়েছি। অফিসে যাওয়া-আসার সময় পরিবারের খোঁজ নিচ্ছি দেখে আন্টি নিশ্চয়ই খুশিই হন।
আন্টির মেয়ের নাম তিথি। একদিন ছাদে শুকানো কাপড় তুলতে গিয়ে আন্টির মুখ থেকেই নামটি শুনেছি। ইচ্ছা থাকলেও মেয়েটির দিকে কখনো তাকাইনি। কিন্তু একদিন তাকাতেই হলো। সিগারেট মুখে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সাধারণত রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধূমপানের আগে এদিক-ওদিক তাকিয়ে নিই। সেদিন কেন যেন সিগারেট ধরিয়ে আনমনে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি! হঠাৎ দেখি, তিথি চোখ বড় বড় করে বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কোনোমতে সিগারেট ফেলে আড়াল হই। ভয় পাওয়ার চেয়ে মেয়েটির চোখে চোখ পড়ার আনন্দ খেলে গেল!
বাসায় ঢুকতেই তাঁদের কাজের মহিলা দরজায় হাজির, ‘খালামণি আপনাকে ডাকছে।’
এবার হয়তো ব্যাগ গোছানোর পালা। মুখ নিচু করে আন্টির রুমে প্রবেশ করি। মা-মেয়ে বসে আছে। আন্টি বলে ওঠেন, ‘তুমি তো বাবা বলেছিলে অর্থনীতিতে থিসিসসহ মাস্টার্স করেছ। আমার মেয়েও একই বিষয়ে শেষ সেমিস্টারে। ওর পরীক্ষার আগে একটু সমস্যায় পড়েছে, তাই তোমার কথা মনে পড়ল।’
দুই মাসের জন্য তিথিকে আমি পড়াচ্ছি। পড়ানো শুরুর পর মেয়েটা কথাবার্তায় আমার সঙ্গে সহজ হয়ে গেছে। একদিন পড়ানোর সময় কী প্রসঙ্গে যেন তিথি বলল, ‘আপনি যে বিবাহিত, এই কথা আমার বিশ্বাস হয় না!’
কাশি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেন?’
বিবাহিত পুরুষের ফেসবুক টাইমলাইন এমন থাকে না। আর বিবাহিত পুরুষেরা সিগারেট খাওয়ার সময় এদিক-ওদিক করে না।
তিথির কথা শুনে বিস্মিত হলাম। মেয়েটির বাস্তবজ্ঞান দার্শনিক পর্যায়ের!
তিথিকে পড়ানোর সময় আন্টি একদিন হাজির। আক্ষেপ করে বললেন, ‘মেয়েটির বিয়ে নিয়ে টেনশনে আছি। আসলে বাবা, তোমাদের মতো ভদ্র ছেলে পাওয়া কঠিন।’
কিছুদিনের জন্য আমি গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। হঠাৎ আন্টির ফোন। চমকে উঠি, কী হলো আবার! ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আন্টি বলে ওঠে, ‘তুমি যে বাবা ব্যাচেলর, এই কথা লুকিয়েছ কেন!’
তাঁর কথায় মৃদু উচ্ছ্বাস। কিন্তু আমি আকাশ থেকে পড়ি। আমতা-আমতা করে আনমনেই বলে ফেলি, ‘কে বলল আন্টি?’
কেন, তিথি!
আমি আর কথা বাড়াই না। ফোনটা রাখেন আন্টি। তাঁর নির্দেশ মোতাবেক কাঁপা কাঁপা হাতে মা-বাবার নম্বরটা তাঁকে এসএমএস করি!