কমলাপুর থেকে রিকশায় করে বাসায় ফিরছি। অভ্যাসবশত প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে চোখ রাখতেই কাওসার আহমেদ চৌধুরীর প্রয়াণের খবর। সঙ্গে সঙ্গে বিস্মৃতির গহিন থেকে টুকরা টুকরা কিছু স্মৃতি এসে ভর করল।
শ্রদ্ধেয় কাওসার আহমেদ চৌধুরী মহোদয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় প্রথম আলোর হাত ধরেই। প্রতি শনিবার তাঁর রাশিফল পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম; সেটা শুধু আমার রাশি জানার জন্য নয়। তাঁর লেখা এত ভালো লাগত, ১২টি রাশির সবই পড়তাম। কোনো এক শনিবার অনেকটা মজা করেই লেখায় তাঁর মুঠোফোন নম্বরটা দিয়েছিলেন। আমি কিছু না ভেবেই তাঁর নম্বর টুকে রেখেছিলাম।
আমার ঘোর লাগা চমক মুহূর্তেই ভেঙে গেল। মনে মনে বলেছিলাম, এই বুঝি জ্যোতিষশাস্ত্র!
সময়টা যত দূর মনে পড়ে, ২০০৬ সাল। আমি তখন এনজিও ফোরাম নামে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের চাকুরে। তখনো বিয়ে করিনি। দিনের কাজ সেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সান্ধ্য কোর্স সবে শেষ করেছি। সময়টা নিজের কাছে কেমন এলোমেলো লাগছিল। একদিন ভাবলাম, ভাগ্যে কী আছে, একটু জেনে নিই। কাওসার আহমেদের মুঠোফোনে কল দিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিলাম।
যেদিন বিকেলে কাওসার আহমেদের বাসায় গেলাম, খোলা দরজা দিয়ে ঘরের যতটা দৃশ্যমান ছিল, তাতেই অবাক হয়েছিলাম। এতটা সাদামাটা হবে, কল্পনায় ছিল না। দরজাটা তিনিই খুলেছিলেন, তিনিই বসার জায়গা দেখিয়ে দিলেন। আর বললেন, ‘আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিন, তৈরি হয়ে আসি।’
কাওসার আহমেদ এলেন। আমাকে বসতে দিয়েছিলেন একটা ছোট মোড়ায়। তিনি বসলেন মেঝেতে পেতে রাখা বিছানায়। প্রথমেই বললেন, ‘আপনি কি আর্মি বা পুলিশে চাকরি করেন?’ আমার ঘোর লাগা চমক মুহূর্তেই ভেঙে গেল। মনে মনে বলেছিলাম, এই বুঝি জ্যোতিষশাস্ত্র!
আমি এনজিওতে চাকরি করি। আর্মি-পুলিশ আমার জগতে নেই। এরপর এটা-সেটা, অনেক কথাই হলো। চলে যাব, ওই সময় তিনি বললেন, ‘পাসপোর্টটা তাড়াতাড়ি করে ফেলুন।’ আমি আর একবার হতাশ হয়েছিলাম। আমি তখন যে চাকরি করতাম, বিদেশ যাওয়া নিছক কল্পনামাত্র!
ঘটনাক্রমে, ২০০৬-০৭ সালে আমি ১২টি দেশ ভ্রমণ করি। কয়েকটা দেশে একাধিকবার যাওয়ার ফলে প্রথম পাসপোর্টের পাতা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বরে আমি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করে এখন পুলিশ সুপার পদে কাজ করছি।
প্রয়াত কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে অন্তত ‘ধন্যবাদ’ কথাটাও বলতে পারিনি। খুব খারাপ লাগছে…
লেখক: পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ