হজ পালনকালে ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন
প্রতি বছর দুই লাখের বেশি ডায়াবেটিস রোগী পবিত্র হজ পালন করেন। অনেকেই এ সময় নানা জটিলতায় আক্রান্ত হন। এর অন্যতম হলো ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের জটিলতা।
পায়ের সমস্যা
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস থাকলে প্রান্তীয় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হজ পালনে গেছেন এমন ডায়াবেটিস রোগীদের শতকরা ১৩.৮ ভাগের প্রান্তীয় স্নায়ুবিক ব্যাধি থাকে। অর্থাৎ তাঁদের পায়ের অনুভূতি শক্তি কম থাকে। মামুলি আঘাতের কারণে তাঁদের পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এসব ক্ষত অনেক সময় বুঝতে পারেন না তাঁরা। এই ক্ষত থেকে একসময় সংক্রমণ বা প্রদাহ হয়।
শতকরা ৩১ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীর হজের সময় পায়ে ফোসকা পড়ে। দীর্ঘপথ হাঁটার কারণে অনেক সময় ফোসকা পড়তে পারে ও ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। হজের সময় পায়ে ব্যথা হওয়া একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিশেষত স্থূলকায় নারীদের এটি বেশি হয়ে থাকে। ফোসকাও পড়তে পারে তাঁদের বেশি। ফোসকা থেকে হতে পারে প্রদাহ। সেখান থেকে গ্যাংগ্রিন বা পচন পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া গরম মেঝের ওপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটার কারণে এই রোগীদের পা অনেক সময় লালচে বর্ণ ধারণ করে।
ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালী সরু হয়ে যায়। শিরার রক্ত পরিসঞ্চালন ক্ষমতা হ্রাস পায়। হজের সময় প্রচণ্ড গরম ও পরিশ্রমের ফলে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে শিরায় থ্রমবাস তৈরি হতে পারে। এটিও ডেকে আনতে পারে ভয়ানক পরিণতি।
করণীয়
হজযাত্রার বেশ আগেই ডায়াবেটিসের পরীক্ষা, ওষুধের সমন্বয় করুন।
প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রেসক্রিপশন সঙ্গে রাখবেন। ওষুধ বা ইনসুলিন কিছুতেই বন্ধ করবেন না। সুগার বেড়ে গেলে পায়ের জটিলতার শঙ্কা বাড়বে। হজ পালনে গিয়েও নিয়মিত সুগার মাপুন। সাধারণ ইনফেকশন মোকাবিলার জন্য আপনার চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সঙ্গে নিতে পারেন।
হাঁটার জন্য সঠিক মাপের প্রশস্ত মেডিকেটেড জুতা–মোজা নিন। খালি পায়ে বা পা উন্মুক্ত থাকে এমন স্যান্ডেল পরা যাবে না। নতুন জুতা অনেক সময় ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য পারতপক্ষে এ সময় নতুন জুতা না পরাই শ্রেয়। আগে থেকে কিনে কিছুদিন পরে অভ্যাস করে নেবেন।
শোবার সময় নিয়মিত পা পরখ করবেন।
অজু-গোসলের পর, সাবান দিয়ে ধৌত করার পর পা শুকনো গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলবেন।
পা আর্দ্র রাখতে রাতে ভ্যাসলিন জাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। বিশেষত যাঁদের পা ফেটে যায় অথবা অতিরিক্ত শুষ্ক থাকে।
যেখানে জুতা পড়ে যাওয়া যাবে না সেখানে অবশ্যই মোজা পরিধান করতে হবে।গোড়ালি ও বুড়ো আঙুলের গোড়ায় পায়ের বেশিরভাগ ভর পড়ে। তাই এ সব জায়গায় প্যাডের মতো নরম মোজা পরিধান করা দরকার।
পথের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার থেকে ১৫ কিলোমিটার হলে দরকার অনুযায়ী হুইল চেয়ারের সাহায্য নিতে পারেন। পবিত্র মক্কা ও মদিনায় অতিরিক্ত গরমের সময় বারান্দার মেঝে প্রচণ্ড উষ্ণ থাকে। এতে ফোসকা পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। সে কারণে অবশ্যই নিরাপত্তামূলক মোজা পরিধান করা দরকার।
পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ করবেন; যাতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে না পারে।
পা ফুলে গেলে, ক্ষত হলে, কিংবা ফোসকা পড়লে অবশ্যই বাংলাদেশ ক্যাম্পে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।