স্যুপের পুষ্টিতথ্য

পৃথিবীর বিভিন্ন খাবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর হলো স্যুপ। শরীরের পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি পুষ্টি জোগাতে স্যুপের জুড়ি নেই। তবে স্যুপে ব্যবহৃত উপকরণের ওপর নির্ভর এর পুষ্টিগুণ।

স্যুপছবি: কাবুমপিকসডটকম, পিকজেলসডটকম

স্যুপ এককথায় স্বাস্থ্যকর তরল বা পানীয়। শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে এর জুড়ি নেই। পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে; কিন্তু স্যুপ হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। স্যুপ পৃথিবীর বিভিন্ন খাবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর হিসেবে পরিচিত।

সব স্যুপ স্বাস্থ্যকর নয়
ছবি; ফুডি ফ্যাক্টর, পেকজেলসডটকম

তবে সব স্যুপ যে স্বাস্থ্যকর, তা বলা যাবে না। এটা ঠিক, স্বাস্থ্যকর স্যুপ, অর্থাৎ অথেনটিক স্যুপ বলতে বোঝায় স্বাস্থ্যকর, প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান ও মসলা দিয়ে তৈরি কম চর্বি, কম লবণ আর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট–সমৃদ্ধ তরল খাবার। স্যুপ বানাতে যত কৃত্রিম উপাদান ব্যবহৃত হবে, সেই স্যুপ তত অস্বাস্থ্যকর হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক পরিচিত কয়েকটি স্যুপের পুষ্টিতথ্য এবং খাওয়ার নিয়ম।

থাই স্যুপ

ক্লিয়ার স্যুপ
ছবি: জেনভিট কিওয়ালিনসারিড, পেকজেলসডটকম

দুই রকম হয়ে থাকে: ক্লিয়ার ও থিক থাই স্যুপ। থিকটাই বেশির ভাগ মানুষের পছন্দ। কিন্তু কর্নফ্লাওয়ার না থাকায় ক্লিয়ার স্যুপ বেশি স্বাস্থ্যকর। চিকেন স্টকে চিকেন, লবণ, আদা, সস, চিনি, লেবুর রস, কাঁচা মরিচ, চিংড়ি মাছ—মূলত এই উপাদান বা রকমফেরের রেসিপি দিয়েও থাই স্যুপ করা যায়। এ স্যুপের আবশ্যকীয় উপাদান হলো থাই পাতা। এ পাতার গন্ধই স্যুপটিকে আলাদা করে অন্যান্য স্যুপ থেকে। অনেকেই অনেক ভাবে করে। কেউ চিংড়ি বাদ দিয়েও মডিফায়েড থাই স্যুপ করে। ক্লিয়ার থাই স্যুপের পুষ্টিকগুণ অনেক বেশি। ক্লিয়ার থাই স্যুপে কোনো সস ও কর্নফ্লাওয়ার ব্যবহার না করায় ক্যালরি কম। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জিংক—এ পুষ্টি উপাদানগুলো বেশি পাওয়া যায়। থিক থাই স্যুপে এই উপাদানের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি বেশি পাওয়া যায়। তাই ডায়বেটিক রোগী ও ওজন কমাতে ক্লিয়ার থাই স্যুপ ভালো।

কর্ন স্যুপ

কর্ন স্যুপ
ছবি: উইকিপিডিয়া

চিকেন স্টকে ডিম, কর্নফ্লাওয়ার ও সুইট কর্ন ব্যবহার করে মূলত এ স্যুপ বানানো হয়। এ স্যুপের বেশির ভাগ ক্যালরি আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। স্টক যে যত সুন্দর করে বানাবে, তার স্যুপ তত মজা হবে। ডিম থাকায় এই রেসিপি যাদের প্রোটিনের চাহিদা বেশি, তা পূরণে সাহায্য করবে। এই স্যুপ ডায়ারিয়া, জ্বর, আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগী, অপারেশনের পর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর প্রোটিন ও তরলের চাহিদা পূরণে অনেক সাহায্য করে। যাদের অনেক অ্যাসিডিটি, একেবারে সলিড খাবার মুখে খেতে পারছে না, তারা অল্প অল্প করে স্যুপটি খেলে ভালো। এই স্যুপ অনেকভাবে মডিফায়েড করা যায়। যারা হার্ট বা হাইপ্রেশারের রোগী, তাদের কর্ন স্যুপে পুরো ডিম না দিয়ে ডিমের সাদা অংশ দেওয়া যায়। আবার তেল ছাড়া করতে চাইলে স্টকে কোনো তেল ব্যবহার না করে ফ্যাট ফ্রি করেও এই স্যুপ বানানো যায়

ভেজিটেবল স্যুপ

ভেজিটেবিল স্যুপ
ছবি: কুক ইট, পিকজেলসডটকম

সব রকম রঙিন সবজি নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে এই স্যুপ বানানো যায়। ভেজিটেবল স্টক ব্যবহার করলে এই স্যুপ একেবারে ভেজিটেরিয়ানের জন্য পারফেক্ট হয়। আবার যাদের প্রোটিন চাহিদা বেশি, তাদের ভেজিটেবল স্যুপ সবজি আর চিকেন স্টক দিয়ে করা যায়। এই স্যুপের ভালো দিক হলো ফ্যাট খুব সামান্য বা নেই বললেই চলে। কর্নফ্লাওয়ার ব্যবহার না করলে হয় ক্লিয়ার ভেজিটেবল স্যুপ। সামান্য কর্নফ্লাওয়ার ব্যবহার করলে একটু ঘন হয় স্যুপটি। এই স্যুপে সবজির ব্যবহারের ওপর পুষ্টিগুণ নির্ভর করে। শীতের দিনে ত্বক মসৃণ রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হার্টের ও ডায়বেটিক রোগীর জন্য এবং ওজন কমাতে এই স্যুপের জুড়ি নেই। তবে এর উপকারিতা পেতে হলে খেতে হবে কর্নফ্লাওয়ার ছাড়া ক্লিয়ার ভেজিটেবল স্যুপ।

সুইট অ্যান্ড সাওয়ার স্যুপ

প্রোটিন ও পটাশিয়াম খুব ভালো পরিমাণে মেলে সুইট অ্যান্ড সাওয়ার স্যুপে
ছবি: নাইম বেনজেলাম, পিকজেলসডটকম

টমেটো, চিকেন স্টক, ডিম, সিরকা, চিনি, লবণ, কর্নফ্লাওয়ার ও সস ব্যবহার করে মূলত এই স্যুপ করা হয়। প্রোটিন ও পটাশিয়াম খুব ভালো পরিমাণে পাওয়া যাবে এ স্যুপ থেকে। যেসব রোগীর পটাশিয়াম কমে যায়, তাদের জন্য খুব ভালো রেসিপি। অন্তঃসত্ত্বা নারী, যাঁরা কিছুই খেতে পারেন না, তাঁদের জন্য খুব উপকারী। এ ছাড়া চিনি না দিলে ডায়বেটিক রোগীরা অল্প পরিমাণে খেতে পারবে। তবে কিডনি রোগীরা অবশ্যই এড়িয়ে চলবে এই রেসিপি।

ক্রিম হয়ে থাকে নানা ধরণের
ছবি: ভ্যালেরিয়া বোলতনেভা

এ ছাড়া ক্রিম অব ক্যারট স্যুপ, ক্রিম মাশরুম স্যুপ, ডালের স্যুপ, নুডলস স্যুপ, পামকিন বা মিষ্টিকুমড়ার স্যুপও রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিবেচনায় বাড়িতে করা মা-দাদিদের স্যুপের মতো স্বাস্থ্যকর স্যুপ আর হয় না। স্যুপের হেলথ বেনিফিট পেতে হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান ও যত কম উপকরণ ব্যবহার করা হবে, ততই ভালো। আসছে শীতে সুস্থ থাকতে রোজ আপনার মেনুতে রাখতে পারেন স্যুপ।
লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা