স্ট্রোক নাকি হার্ট অ্যাটাক

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক মানুষের জীবনের দুটি জটিল রোগ; যা হঠাৎ শয্যাশায়ী করে, জীবনকে ছন্দহীন করে তোলে। এমনকি এতে জীবননাশের আশঙ্কা দেখা দেয়। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক সাধারণত ভুলভাবে উচ্চারিত হয়ে থাকে। কেউ কেউ স্ট্রোককে হার্ট অ্যাটাক বলে ভুল করে থাকেন, আবার হার্ট অ্যাটাককে ভুলে স্ট্রোক বলে থাকেন। দ্রুততম সময়ে কোথায় চিকিৎসা নেবেন সেটির ওপর নির্ভর ক‌রে এর সুফল। তাই সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাকের পার্থক্য কী।

হার্ট অ্যাটাক: হৃৎপিণ্ডের কোষ রক্ত সরবরাহ না পেয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়াকেই হার্ট অ্যাটাক বলা যায়। একিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ও আনস্ট্যাবল অ্যানজাইনায় এ রকম চরম অবস্থা সৃষ্টি হয়।

স্ট্রোক: মস্তিষ্কের নার্ভ কোষে হঠাৎ রক্ত সরবরাহ কমে গেলে এটি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধলে বা রক্তনালী ছিঁড়ে এমন বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়।

মূল পার্থক্য

হার্ট অ্যাটাক: হৃদ্‌যন্ত্রে রক্ত সরবরাহ করে যে করোনারি আর্টারি বা রক্তনালি, সেটির ৭০ ভাগ বা বেশি বন্ধ বা ব্লক হলে এমন হয়। হৃদ্‌যন্ত্রেও নির্দিষ্ট কোনো অংশ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না পাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। তবে এতে শরীরে কোনো অংশ সাধারণত অবশ হয় না; তবে উপসর্গ হিসেবে বুকে তীব্র ব্যথা হয়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ইসিজি, কার্ডিয়াক এনজাইম, ইকোসহ প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো করে রোগ নির্ণয় এবং করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা নিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতিও এড়ানো সম্ভব।

স্ট্রোক: স্ট্রোক আসলে হৃৎপিণ্ডের নয় বরং মস্তিষ্কের রোগ। মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহকারী রক্তনালি বন্ধ হলে বা ছিঁড়ে গেলে এ সমস্যা হয়। এর ফলে শরীরের এক পাশ অবশ হতে পারে। মুখ বেঁকে যাওয়া, খিঁচুনি, কথা আটকে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। সিটি স্ক্যান প্রাথমিক পরীক্ষা। দ্রুত রোগ নির্ণয়ের পর নিউরো কেয়ার ইউনিটে নিয়ে গেলে সবচেয়ে ভালো।

স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক দুটিই খুব পরিচিত আর জটিল সমস্যা। ৪০ বছর বয়সের পর যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন এসব রোগে। তবে স্থূল, ধূমপায়ী, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় দুটি রোগেরই।


অধ্যাপক ডা. লিয়াকত হোসেন: বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ