করোনার কারণে বাংলাদেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ সেই মার্চ থেকে। বাতিল হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি–জেডিসি পরীক্ষা। এইচএসসি পরীক্ষা কবে হবে, তার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ও পড়তে চলেছে সেশনজটে। চলছে অনলাইন ক্লাস। কিন্তু ভালো ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো অংশগ্রহণ করতে পারছে না। সব মিলিয়ে তারা নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতি তাদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলাফল মাথাব্যথা!
শিক্ষার্থীদের মাথাব্যথা নিয়ে আলোচনা হয় ‘মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা সচেতনতা সপ্তাহ’ উপলক্ষে আয়োজিত এসকেএফ নিবেদিত ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’ অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে। এই পর্বের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শিক্ষার্থীদের মাথাব্যথা’। অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম শাহী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারপারসন তাওহিদা জাহান শান্তা। অনুষ্ঠানে তাঁরা দর্শকদের মানসিক চাপ ও মাথাব্যথা নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেন। বিশেষ এই পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন রবি টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক। অনুষ্ঠানটি ৮ সেপ্টেম্বর সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
অনুষ্ঠান সূচনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা নিয়ে আলোচনায় চলমান অনলাইন ক্লাস প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ইন্টারনেটের অবকাঠামোগত কারণে এতে রয়েছে প্রচুর সীমাবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ভালো সংযোগের অভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্লাস করতে পারছে না। আবার অনলাইন ক্লাসে পড়া ঠিকমতো বোঝার ব্যাপারেও ঘাটতি থেকে যাওয়ার কথাও বলা হয়। স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত। অনেকে আবার বুঝে উঠতে পারছে না তারা কিসে বেশি গুরুত্ব দেবে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, নাকি এক্সট্রা কারিকুলার কর্মকাণ্ডে। সব মিলিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে এসবই শিক্ষার্থীদের মাথাব্যথা বৃদ্ধির অনুঘটক হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানালেন, শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি টেনশন টাইপ ও মাইগ্রেনের ব্যথায় আক্রান্ত হয়। এ দুই ধরনের মাথাব্যথার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায় না। মাইগ্রেনের ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি, তবে ক্ষতিকারক নয়। সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সে এই ব্যথা বেশি হয়। আধকপালি ব্যথা, মাথার ভেতর দপদপ করে ব্যথা, ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, আলো বা শব্দ সহ্য না হওয়া ইত্যাদি মাইগ্রেনের লক্ষণ। এই ব্যথা কাজ বা পড়াশোনা করলে, টিভি–কম্পিউটার–স্মার্টফোন অধিক ব্যবহার করলে, রোদে গেলে বেড়ে যায়। মাইগ্রেনের ব্যথা জিনগতও হতে পারে। ব্যথা শুরু হওয়ার আগে কেউ কেউ চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখতে পায় বা দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে, হাত–পা ঝিঁঝিঁ করতে পারে, কথা বলতে অসুবিধা হতে পারে, মেজাজ খিটখিটেও হতে পারে।
অনুষ্ঠান সূচনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা নিয়ে আলোচনায় চলমান অনলাইন ক্লাস প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ইন্টারনেটের অবকাঠামোগত কারণে এতে রয়েছে প্রচুর সীমাবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ভালো সংযোগের অভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্লাস করতে পারছে না। আবার অনলাইন ক্লাসে পড়া ঠিকমতো বোঝার ব্যাপারেও ঘাটতি থেকে যাওয়ার কথাও বলা হয়। স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত। অনেকে আবার বুঝে উঠতে পারছে না তারা কিসে বেশি গুরুত্ব দেবে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, নাকি এক্সট্রা কারিকুলার কর্মকাণ্ডে। সব মিলিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে এসবই শিক্ষার্থীদের মাথাব্যথা বৃদ্ধির অনুঘটক হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানালেন, শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি টেনশন টাইপ ও মাইগ্রেনের ব্যথায় আক্রান্ত হয়। এ দুই ধরনের মাথাব্যথার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায় না। মাইগ্রেনের ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি, তবে ক্ষতিকারক নয়। সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সে এই ব্যথা বেশি হয়। আধকপালি ব্যথা, মাথার ভেতর দপদপ করে ব্যথা, ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, আলো বা শব্দ সহ্য না হওয়া ইত্যাদি মাইগ্রেনের লক্ষণ। এই ব্যথা কাজ বা পড়াশোনা করলে, টিভি–কম্পিউটার–স্মার্টফোন অধিক ব্যবহার করলে, রোদে গেলে বেড়ে যায়। মাইগ্রেনের ব্যথা জিনগতও হতে পারে। ব্যথা শুরু হওয়ার আগে কেউ কেউ চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখতে পায় বা দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে, হাত–পা ঝিঁঝিঁ করতে পারে, কথা বলতে অসুবিধা হতে পারে, মেজাজ খিটখিটেও হতে পারে।
খুব কম ক্ষেত্রে শিশুদের মাইগ্রেনের সমস্যা হয়ে থাকে। মাইগ্রেনের চিকিৎসা দুই ধরনের। তাৎক্ষণিক ও প্রতিরোধক চিকিৎসা। তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয় আর প্রতিরোধক চিকিৎসায় ব্যথা যাতে না বাড়ে, সে জন্য ওষুধের পাশাপাশি চিকিৎসকেরা জীবনযাত্রা পরিবর্তনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। বয়স অনুযায়ী মাইগ্রেনের চিকিৎসার তারতম্য হয়ে থাকে। যেমন শিশুদের চিকিৎসায় ওষুধের চেয়ে জীবনযাত্রা পরিবর্তনের দিকে জোর দেওয়া হয়। তাই শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে অহেতুক চাপ দেওয়া থেকে অভিভাবকদের বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। শিশুরা যাতে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে, জাঙ্ক ফুড কম খায়, কম্পিউটার–ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার না করে, রোদে–কোলাহলে যেন বেশি সময় না থাকে, তাদের ঘুম যাতে ঠিকমতো হয়, তারা যাতে হাসিখুশি থাকে—এসব দিকে বিশেষ লক্ষ রাখাতে বলা হয়।
শারীরিক অসুস্থতা, যেমন: চোখের কোনো সমস্যা, কানের সংক্রমণ, সাইনোসাইটিস, ভাইরাস জ্বরজনিত সংক্রমণ, মস্তিষ্কে টিউমার, রক্তনালির সমস্যা, মাথায় আঘাত, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
এই সময়ে করোনার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও মাথাব্যথা হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, কোভিড রোগের একটি অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে মাথাব্যথা। আবার যাঁরা এ রোগে আক্রান্ত নন, তাঁরা আতঙ্কে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছেন। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হচ্ছে। তাদের মধ্যে বিষণ্নতা, অবসাদগ্রস্ততা আর মানসিক চাপ বাড়ছে। এসবই মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। তাই এ সময়ে সবার উচিত আতঙ্কিত না হওয়া, অহেতুক দুশ্চিন্তা না করা।
আলোচনায় আরেকটি বিষয়েও আলোকপাত করা হয়—মাথা ঘোরার সমস্যা। একধরনের মাইগ্রেন আছে, যেখানে রোগী হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায়। একে বলে ভারটিজেনাস মাইগ্রেন। এ ধরনের মাইগ্রেনে মাথাব্যথার চেয়ে মাথা ঘোরার প্রবণতা বেশি থাকে। তা ছাড়া টেনশন টাইপ মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে ঘোরাতে পারে। অর্থাৎ শারীরিক সমস্যা নয়, মাথা ঘোরার বা চক্কর দেওয়ার মূল কারণ মানসিক অবসাদ। অন্যদিকে, মাথা ঘুরে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে, খিঁচুনি হলে, কানে কম শুনলে বা হাত–পা অবশ হয়ে গেলে বুঝতে হবে, এটি মাইগ্রেন বা টেনশনজনিত মাথাব্যথার জন্য হচ্ছে না।
শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের মানসিক চাপ না নিয়ে, ভবিষ্যতে কী হবে, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, বর্তমান সময়কে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে পড়াশোনা ও অন্যান্য সৃজনশীল কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন অতিথিরা। তাঁরা বলেন, সব পরিস্থিতিতেই জীবনকে উপভোগ করতে হবে; তাহলে মাথাব্যথার পাশাপাশি জীবনের আরও অনেক জটিল পরিস্থিত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।