যোগে সতেজ বুবলী

নিজেকে ফিট রাখতে বিশ্বজুড়ে যোগব্যায়ামের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। যোগব্যায়াম এমন এক পদ্ধতি, যেখানে বিনা পয়সায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই যে কেউ ধরে রাখতে পারেন তারুণ্য। এই সময়ের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শবনম বুবলীও যোগের ভক্ত। তিনি জানালেন, আট বছর ধরে নিয়মিত যোগাসন করছেন। নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখার পাশাপাশি সুস্থ থাকতে প্রতিদিন এক ঘণ্টা যোগচর্চা করেন এই অভিনেত্রী।

যেভাবে যোগব্যায়ামের চর্চা শুরু

ছোটবেলায় খোলা মাঠে ছুটে বেড়িয়ে বড় হয়েছেন বুবলী। একটু একটু করে যখন কৈশোরে, টিনএজের দিকে পা বাড়ালেন—তখন থেকেই নিজের ফিটনেসের ব্যাপারে সচেতন হলেন। ‘তখন তো আর যোগব্যায়াম বা ইয়োগা নিয়ে কেউ এত সচেতন ছিল না। আমি নিজেও কিছু জানতাম না। কিন্তু মনে হতো ইনস্ট্রুমেন্টসহ ব্যায়াম ছাড়া যদি নিজেকে ফিট রাখতে পারতাম।’ বলছিলেন শবনম বুবলী।

তখনো চলচ্চিত্র বা বিনোদনজগতে নাম লেখাননি শবনম বুবলী। তবে ফিটনেসের ব্যাপারে বেশ সচেতন থাকায় ভর্তি হলেন এক জিমে। ফিটনেস সেন্টার নামের সেই জিমের প্রশিক্ষক সুমি তখন অ্যারোবিকস আর যোগব্যায়াম শেখাতেন। সেই প্রথম যোগাসনের সঙ্গে পরিচিত হলেন বুবলী। এরপর নিয়ম মেনে নিয়মিত চলল যোগব্যায়াম। ১৪টির
মতো যোগাসনে পারদর্শী তিনি। সঙ্গে আরও জানালেন, নিজের এই সতেজ ও সুন্দর
থাকার পেছনে যোগাসনের রয়েছে বিরাট
ভূমিকা।

নটরাজাসন
ছবি: কবির হোসেন

যোগচর্চায় মন থাকে উৎফুল্ল

বুবলী নিজে মনে করেন, যোগাসনে যে উপকার সবচেয়ে বেশি তিনি পেয়েছেন তা হলো মানসিক উৎফুল্লতা। সুন্দর ও সুস্থ থাকতে মন ভালো রাখা জরুরি। মন ভালো থাকলে স্বাভাবিকভাবেই একাগ্রতা নিয়ে কাজ করা যায়। বুবলী জানালেন, নিয়মিত যোগচর্চার ফলে এই মন খারাপ বা বিষণ্নতার মতো বিষয়গুলো খুব বেশি বিব্রত করে না তাঁকে। ‘আসলে মানসিকভাবে যদি ভালো না থাকা যায়, তার একটা বাজে প্রভাব চেহারায় পড়বেই।’ আগেই বলেছি, প্রতিদিন নিয়মিত এক ঘণ্টা করে যোগব্যায়াম করেন বুবলী। আর সে জন্যই সব সময় থাকেন এত সতেজ আর স্নিগ্ধ ।

বুবলী যখন যোগব্যায়াম করেন

কোন সময় যোগব্যায়াম করবেন, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত খালি পেটে যোগব্যায়াম করতে হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই যোগাসন করা ভালো। বুবলীও তাই করেন। তবে ব্যস্ত দিনে যোগচর্চার সময় একটু বদলে নেন। ‘যেদিন শুটিং থাকে, সেদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যোগব্যায়াম করি। তবে সেটা সন্ধ্যার হালকা খাবার খাওয়ার আগে হতে হবে।’ বললেন বুবলী।

পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ

যোগব্যায়ামে যদি মনের সঙ্গে শরীরের একাগ্রতা না থাকে, তবে এর সুফল পাওয়া বেশ কঠিন। এ জন্য যোগব্যায়াম করার পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘যোগব্যায়ামের স্থানটা শান্তিপূর্ণ হওয়া জরুরি। যাতে বাইরের কোনো শব্দ এসে ভেতরে বিভ্রাট না ঘটায়, সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি ভেতরের পরিবেশও যেন প্রশান্ত হয়’—এসব বিষয় বিবেচনায় রাখেন বুবলী। এ জন্য যোগচর্চার সময় হালকা কোনো সুর বাজতে থাকে তাঁর ঘরে। দিনের বেলায় হলে প্রাকৃতিক আলো আর রাতে হালকা সুগন্ধি মোমের আলোর ব্যবস্থা রাখেন ঘরে। এ ছাড়া খোলা সবুজ মাঠে যোগব্যায়াম করলে বাড়তি সুফল মেলে বলে মনে করেন।

ভুজঙ্গাসন

তারুণ্য ধরে রাখতে

বুবলী মনে করেন ওজন কমাতে নয়, যোগব্যায়াম বরং শরীরকে টোনড রাখতে বেশি সাহায্য করে। শারীরিক অবয়বে আসে কোমলতা। আর যেহেতু চাপমুক্তির (স্ট্রেস রিলিফ) একটা বিষয় থাকে, তাই ভেতর থেকে ভালো লাগা কাজ করে। এর প্রভাবে ত্বক ও চুল হয় সুন্দর।

তবে কয়েক দিন করেই ছেড়ে দিলাম, এমনটা করলে কিন্তু হবে না। যোগ সুফল যোগ করতে আসনগুলোর চর্চা করতে হবে নিয়মিত। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত চর্চার পরে যোগাসনের সুফল পেয়েছেন বুবলী। তিনি বলেন, ‘আসলে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাসনের উপকার পাওয়া যাবে না। দীর্ঘদিনের চর্চায় সুফল মিলবে। যার প্রভাব হবে দীর্ঘস্থায়ী।’

অনুলোম–বিলোম আসন

পোশাকটাও গুরুত্বপূর্ণ

যোগব্যায়াম করার সময় পোশাক খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। পোশাক যদি যোগব্যায়ামের জন্য সুবিধাজনক না হয়, তবে তা আসনে বিঘ্ন ঘটায়। বুবলী সাধারণত আঁটসাঁট পোশাকে যোগব্যায়াম করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এতে শরীরকে ইচ্ছেমতো স্ট্রেচিং করা যায়। তবে মাঝেমধ্যে ঢোলা সালোয়ার, আরামদায়ক টপও পরে থাকেন। যোগব্যায়াম করার সময় চুল যাতে কোনো রকম ঝামেলা না করে, এ জন্য পনিটেইল বা ফ্রেঞ্চ বেণি বেঁধে নেন। ‘এককথায় কোনো কিছুই যাতে আমার যোগাসনে বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকে খুব খেয়াল রাখি আমি। কারণ, মন যদি একবার অন্যদিকে ছুটে যায়, তাহলে যোগাসনে মনকে স্থির করা কঠিন হয়ে যায়।’

নিয়ম মেনে যোগব্যায়াম

সাধারণত যোগব্যায়ামের প্রায় প্রতিটি আসনই প্রতিদিন বুবলী করে থাকেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্রিদিং বা শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোন আসনে কখন শ্বাস ছাড়তে হবে বা কখন ধরে রাখতে হবে, এগুলো যদি সঠিক নিয়মে না করা যায়, তাহলে যোগব্যায়াম কোনো কাজে আসবে না। বুবলী জানালেন শ্বাসপ্রশ্বাসের যোগাসন দিয়ে শুরু করে খানিকটা ওয়ার্মআপ করে নেওয়া ভালো। এরপর প্রতিটি আসনে বেশ সময় নিয়ে থাকা যায়। বুবলীও তাই করেন, ‘ওই যে বললাম না, সবকিছু খুব গুছিয়ে যেমন যোগব্যায়াম করি আমি, তেমনি আসনগুলোর প্রতিটি ধাপেও মনঃসংযোগের চেষ্টা করি।’

চক্রাসন

দরকার একাগ্রতা

যোগব্যায়ামের সুফল কখনোই হঠাৎ করে পাওয়া যায় না। বুবলী নিজে মনে করেন, আট বছর ধরে নিয়মিত যোগচর্চার ফল তিনি পাচ্ছেন এখন। তাই যোগব্যায়াম শুরু করে নিয়মিত চর্চার জন্য ধৈর্য আর নিষ্ঠা থাকা খুব জরুরি।