পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: আমরা কয়েক ভাই। দেশে আছেন চারজন আর বিদেশে থাকেন দুজন। প্রশ্ন হলো এক ভাই লিভারের চিকিৎসার জন্য বিদেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার সুবিধার্থে আমরা সবাই আমাদের বসতবাড়ি ডেভেলপারকে দিতে সম্মত হই। কিন্তু যিনি অসুস্থ, এ মুহূর্তে তাঁর পক্ষে আসা সম্ভব নয়। তাঁর সঙ্গে বিদেশে আরেক ভাই থাকেন। এ ক্ষেত্রে অসুস্থ ভাই কি তাঁর সব লেনদেনের ক্ষমতা ওই ভাইকে অর্পণ করতে পারবেন? পারলে কীভাবে?
প্রিন্স
উত্তর: আপনার ভাই যেহেতু শারীরিক অসুস্থতার কারণে দেশে আসতে পারবেন না, সে ক্ষেত্রে তিনি দেশে অবস্থানরত কাউকে ‘ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’–এর মাধ্যমে যেকোনো কাজ তাঁর অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন।
‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন ২০১২’–এর ধারা–২ অনুযায়ী পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অর্থ এমন একটি দলিল, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পক্ষে ওই দলিলে বর্ণিত বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে আরেকজন ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা অর্পণ করেন। আমমোক্তারনামা বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়।
যেহেতু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি একটি আইনগত দলিল, কাজেই এটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। বিদেশে থাকাবস্থায় কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে তাঁকে প্রথমে একজন ভালো আইনজীবীর মাধ্যমে দলিলটি সঠিকভাবে ড্রাফট করাতে হবে। এরপর সে দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে। আপনার ভাইকে ওই দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কনস্যুলারের সামনে দলিলে সই করতে হবে এবং কনস্যুলারের মাধ্যমে তা সত্যায়িত হওয়ার পর ক্ষমতাদাতা অর্থাৎ আপনার ভাই ক্ষমতাগ্রহীতা বা আমমোক্তার বরাবরে পাঠিয়ে দেবেন। ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে।
পরে তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিদেশে সম্পাদিত আমমোক্তারনামা দলিলে বর্ণিত সম্পত্তিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত আছে কি না, তার তথ্য এবং দাগ–সংক্রান্ত তথ্যসম্পর্কিত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন এবং আরেকটি চিঠি প্রেরণ করবেন সহকারী সচিব (কনস্যুলার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর।
জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে সব তথ্য আসার পর, সেখান থেকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের স্ট্যাম্প লাগাতে হবে এবং সেখানে আমমোক্তারনামা দলিলের ওপর একটি নম্বর ও তারিখ পড়বে। এ রকম বিদেশি আমমোক্তারনামার সত্যতা যাচাই করতে হলে জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে গিয়ে ওই নম্বর দিয়ে যাচাই করে নেওয়া যায়। এরপর এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করলে আপনাদের বসতবাড়ি ডেভেলপারকে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
ঘোষণা
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
আইন, ডায়েট এবং মন–সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্ন পাঠক পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: [email protected]
(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার,
ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA