বেশি খেয়ে ফেললে কী করবেন
কদিন আগেই গেল ঈদুল আজহা। প্রতিদিন বেলায় বেলায় পাতে নিয়েছেন মাংসের নানা রকম পদ। গরু–খাসির পাশাপাশি নানা মিষ্টিমিষ্টান্নের সমাহার থাকে বাসায়। এসব খেতে ভালো লাগে, তাই খেয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন পরপর খাওয়ার কারণে নিশ্চয় ওজন বেড়ে গেছে। বিধিনিষেধে দূরের আত্মীয়ের বাড়িতে না যাওয়া গেলেও অনেকে এলাকার মধ্যে বা পাশের ফ্ল্যাটে দাওয়াত খাচ্ছেন। এই সময়ে মাংসের আনাগোনা বেশি থাকায় খাওয়া হয়ে যায় বেশি। খেতে মানা নেই, তবে সীমা যেন অতিক্রম না করে, সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
বেশি মাংস খাওয়ার ফলে অনেকেরই শারীরিক জটিলতা বেড়ে যায়। যাঁদের ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ আছে, তাঁদের জটিলতা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিডনির সমস্যা থাকলে তাঁদের সমস্যার সীমানা অতিক্রম শুরু করে। এ ছাড়া পেটফাঁপা, পেটে জ্বালাপোড়া, বারবার পায়খানা হওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
তাই এত সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাওয়ার সময় কিছু নিয়ম মেনে চললেই ভালো থাকা যাবে।
মাংসের দৃশ্যমান জমানো চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করতে হবে।
যতটা সম্ভব কম তেলে রান্না করতে হবে।
মাংস রান্নার আগে সম্ভব হলে ৫-১০ মিনিট মাংস সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিলে চর্বির অংশ অনেকটা কমে যায়।
মাংস রান্নার সময় উচ্চ তাপে রান্না করতে হবে।
মাংস রান্নার সময় ভিনেগার, টক দই, পেঁপেবাটা ও লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এতে চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
যাঁদের উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা আছে, তাঁরা খুব খেতে মন চাইলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ১-২ টুকরো খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মাংস রান্নায় সবজি ব্যবহার করতে হবে। যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া, টমেটো কিংবা মাশরুম। মাংসের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে কাটলেট বা চপ করে খেতে পারেন।
একবারে ভূরিভোজ না করে, অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া উচিত।
কোরবানির কয়েক দিন পর থেকে শুরু হয় ঝুরা মাংস খাওয়ার আয়োজন। স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় নিলে, এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রতিবেলায় মাংসের একাধিক পদ না রেখে একবেলায় একটি করে পদ নির্বাচন করুন।
যেভাবে অস্বস্তি কাটাবেনবেশি খাওয়ার পরে নিজের ভেতরেই একধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। বিশ্রাম নিতে যেমন ভালো লাগে না, হাঁটাচলাতেও অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার আগে কিছু বিষয় মেনে চলার চেষ্টা করতে পারেন।
গুরুপাক খাবারের টেবিলে শসা, লেবু, টমেটো ইত্যাদির সালাদ রাখা যেতে পারে।
তিনবেলা ভারী খাবার না খেয়ে যেকোনো একবেলা হালকা খাবার, যেমন সবজির স্যুপ, সবজি ও রুটি রাখতে পারেন।খাবারের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন। এটি আপনার বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
খাবার খাওয়ার কিছু সময় পর লেবুপানি বা টক দই রাখলেও তা হজমপ্রক্রিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
ঈদে আমরা অনেকে নানা সোডাপানি বা কোমল পানীয় পান করি, এগুলোর পরিবর্তে চিনি ছাড়া মৌসুমি ফলের জুস খেতে পারেন।
প্রতিবার মাংস খাওয়ার পর পেটের গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক টুকরা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন।
প্রতিদিন অবশ্যই মধ্য সকাল বা বিকেলের নাশতায় টক–জাতীয় মৌসুমি ফল রাখতে হবে, যা রোগপ্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।
দিনে দু–একবার আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, এলাচি ইত্যাদি মসলা দিয়ে চা যেমন ক্লান্তিভাব কাটাতে সাহায্য করবে, তেমনি শরীরের বিপাকের হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
পানীয় হিসেবে ডিটক্স ওয়াটার ঈদ–পরবর্তী এই সময়ে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
মাংস খাওয়ার সময় ঝোল বাদ রেখে খাওয়া ভালো। আবার ভুনা মাংসের পরিবর্তে কম তেলে গ্রিল, বারবিকিউ করে বা কাবাব করেও মাংস খাওয়া যায়।
এখন যেসব খাবার খাবেন
অতিরিক্ত ক্যালরির খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি খেতে হবে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে। এতে আপনার হজমপ্রক্রিয়া মেটাবলিজম বৃদ্ধি পাবে, অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করলেও তা সঠিকভাবে হজমে সহায়তা করবে।
ঈদের পরের সময়টায় খাবার ও জীবনযাপনের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনা জরুরি। এতে শরীর সচল থাকে। অতিরিক্ত যে ক্যালরি গ্রহণ করা হয়েছে, সেই ক্যালরি যেন বার্ন করা সহজ হয়।
দাওয়াতে গেলে অনেক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধেও খাবার গ্রহণ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যেখানে যাবেন, অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করবেন।
খাদ্যতালিকায় বেশি করে ফলমূল, শাকসবজি ও কম ক্যালরির যেসব খাবার আছে, তা নির্বাচন করতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করা সবচেয়ে জরুরি। কারণ, শরীরে জমা অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে ব্যায়মের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।