হঠাৎ করে কারও নাক থেকে রক্তপাত শুরু হলে আশপাশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সে হতে পারে পরিবারের ছোট্ট শিশু বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিটি কিংবা অন্য কোনো বয়সের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে না গিয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা আবশ্যক।
তৎক্ষণাৎ করণীয়
নাক থেকে রক্ত পড়া শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর সাহায্যে নাকের সামনের অংশ (নাকের বাইরের দিকের দুই পাশের নরম অংশ) চেপে ধরুন। রোগী নিজেই এ কাজ করতে পারেন। তিনি না পারলে পাশে থাকা অন্য ব্যক্তিও এ কাজে সহায়তা করতে পারেন। নাক চেপে ধরা অবস্থায় সামনে ঝুঁকে বসে থাকতে হবে রোগীকে, মুখ হাঁ করে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে। এ অবস্থাতেই রোগীকে ঠান্ডা পানি দিয়ে কুলকুচি করানো উচিত। আইসক্রিম খাওয়ানো যেতে পারে, বরফের কুচিও দিতে পারেন মুখের ভেতর। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যেই নাক ও গালের মাঝামাঝি অংশে বরফ চেপে ধরতে হবে। সরাসরি হাতে বরফ ধরে থাকা মুশকিল, তাই একটি পাতলা কাপড়ে চার-পাঁচ টুকরা বরফ নিয়ে, সেটা দিয়ে চেপে ধরুন।
শিশুদের ক্ষেত্রেও বড়দের সাহায্য নিয়ে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে। তবে এসব করা সম্ভব না হলে শিশুর নাকের দুই পাশের ছিদ্রে অ্যান্টাজল বা রাইনোজল–জাতীয় ড্রপ দেওয়া যেতে পারে তিন-চার ফোঁটা। ৫-১০ মিনিটের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ না হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। আর পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে রক্তচাপ মাপার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, রক্তচাপ অনেক বেড়ে গেলেও কোনো কোনো সময় নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর
প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করার, অর্থাৎ নাক চেপে ধরার সময় থেকে ১০-১৫ মিনিট পরও রক্তপাত বন্ধ না হলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। রক্তপাত বন্ধ হলেও নিশ্চিন্তে বসে থাকা যাবে না; বরং রক্তপাতের কারণটা খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখবেন, নাক থেকে রক্তপাত হওয়া একটি জরুরি পরিস্থিতি, চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় এটিকে সার্জিক্যাল ইমার্জেন্সি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই প্রাথমিকভাবে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও দ্রুত একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি নাক থেকে রক্ত পড়ার কারণটি অনুসন্ধান করে দরকার হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। নাকের সমস্যা ছাড়াও অন্য অনেক কারণেই নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।
যা করা যাবে না
নাক চেপে ধরে থাকা অবস্থায় রক্তপাত বন্ধ হলো কি না, তা দেখার জন্য বারবার চাপ হালকা করা যাবে না। এতে রক্তপাত বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
নাক চেপে থাকা অবস্থায় রোগীকে শোয়ানো উচিত নয়।
অনুলিখন: রাফিয়া আলম