ডেঙ্গু-পরবর্তী পরিচর্যা

ডেঙ্গু জ্বর সেরে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন শরীর খারাপ, দুর্বলতা, ক্লান্তি, অবসাদ রয়ে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় পোস্ট ডেঙ্গু অ্যাসথেনিয়া। বাংলায় বলা যায় ‘ডেঙ্গু–পরবর্তী অবসাদগ্রস্ততা’।

পোস্ট ডেঙ্গু অ্যাসথেনিয়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার সক্রিয়তা এতে কিছুটা ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া বয়স, পরিবেশ, পারিবারিক ইতিহাস, মানসিক চাপ ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কাদের বেশি হয়
ডেঙ্গুর পর যে কেউই পোস্ট ডেঙ্গু অ্যাসথেনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে নারী, শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হয়।

লক্ষণ
অতিরিক্ত দুর্বলতা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, মনোযোগহীনতা, খাবারে অরুচি, মাথা ঘোরানো, নিদ্রাহীনতা অথবা অতিনিদ্রা। অনেকে ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ স্বাভাবিক কাজ বা চাকরিতে ফিরে যাওয়ার উদ্যম পান না। অবসাদ আচ্ছন্ন করে রাখে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এমনটা হওয়া স্বাভাবিক, তাই ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা, রক্তে লবণের মাত্রা কমে যাওয়া, থাইরয়েড, যকৃৎ, কিডনি ইত্যাদির সমস্যা আছে কি না খুঁজে দেখতে হয়।

চিকিৎসা
■ সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
■ পরিমিত পরিমাণ তরল ও তরলজাতীয় খাবার পান।
■ রোগ থেকে উঠেই অতিরিক্ত পরিশ্রম শুরু করবেন না। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করুন। শুরুতে একনাগাড়ে ১০ মিনিট পরিশ্রম করলে ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিন। আস্তে আস্তে একনাগাড়ে পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়ান এবং বিশ্রামের পরিমাণ কমান।
■ পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠেই দীর্ঘ পথে যাত্রা করা উচিত নয়।
■ দুশ্চিন্তা পরিহার করুন।

চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন কখন
ডেঙ্গু–পরবর্তী অবসাদগ্রস্ততা সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে যদি দিন দিন অবস্থার উন্নতি না হয়ে অবনতির দিকে যেতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এমন ক্ষেত্রে কোনো কারণ রয়েছে কি না খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

আগামীকাল পড়ুন: কোন চা কেমন উপকারী

প্রশ্ন-উত্তর
আমার নাম আলমগীর হোসেন, বয়স ১৭/১৮।
প্রশ্ন: আমার দুর্বল স্বাস্থ্য। শরীর একদম চিকন, পাতলা। এ মুহূর্তে করণীয় কী?
উত্তর: আপনার উচ্চতা এবং ওজন জানাননি। তবে সুস্থ থাকা এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, পুষ্টিকর খাদ্য এবং পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে। সেই সঙ্গে আপনার কোনো রোগবালাই আছে কি না, তা নিকটস্থ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষা করিয়ে নেবেন।
ডা. তানজিনা হোসেন, হরমোন বিশেষজ্ঞ

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ