ডেঙ্গু, না চিকুনগুনিয়া?

এ বছর বৃষ্টিপাত একটু আগেই শুরু হয়েছে। ফলে চারদিকে ছড়াচ্ছে নানা ভাইরাস। বর্ষায় কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। ইদানীং এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন ভাইরাস জ্বর চিকুনগুনিয়া। এই দুই ধরনের ভাইরাস প্রায় একই সময়ে দেখা দেয়। এদের জীবাণুবাহী মশাও একই প্রজাতির, এডিস। রোগের লক্ষণ ও উপসর্গেও নানা মিল আছে। ইদানীং জ্বর, গায়ে ব্যথা, র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দিলে অনেকেরই মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে: এটা ডেঙ্গু, নাকি চিকুনগুনিয়া?

.
.

কিছু তফাত আছে
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটোই ভাইরাস জ্বর। পাশাপাশি থাকে তীব্র শরীর ব্যথা। তবে পার্থক্য হলো, ডেঙ্গুজ্বরে চোখ ও মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়, মাংসপেশি ও হাড়ে ব্যথাও হয়। তবে গিরা তেমন ফুলে না বা ব্যথাও কম থাকে। কিন্তু চিকুনগুনিয়ার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে গিরায় ব্যথা। আফ্রিকার আঞ্চলিক ভাষায় এই চিকুনগুনিয়ার মানে বাঁকা হয়ে যাওয়া। কেউ বলেন ল্যাংড়া জ্বর। কারণ এতে আক্রান্ত রোগীর ঘাড়, পিঠ, মাজায় এত তীব্র ব্যথা হয় যে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও কষ্ট হয়। তখন কেউ কেউ খুঁড়িয়ে হাঁটতে বাধ্য হন। চলতি বছর বাংলাদেশে রোগটির আকস্মিক বিস্তার দেখা দিয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে।
সাধারণ চিকুনগুনিয়ায় জ্বর, ত্বকে র্যাশ, সন্ধি বা হাড়ের জোড়ায় ব্যথা ও গায়ে ব্যথা করে। এর চেয়ে তীব্র হলে সন্ধি ফুলে যায়, গায়ে তীব্র ব্যথা, চোখে ব্যথা, রক্তচাপ ও প্রস্রাব হ্রাস প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে। রোগটি সবচেয়ে জটিল রূপ নিলে উচ্চমাত্রার জ্বর, সন্ধি ব্যথা ও ফোলা, বমি এবং ডায়রিয়ায় রোগী অচেতনও হয়ে যেতে পারে। তবে চিকুনগুনিয়ায় ডেঙ্গুর চেয়ে মৃত্যুঝুঁকি কিছুটা কম। ডেঙ্গু সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে চিকুনগুনিয়ার রোগী ৭ থেকে ১০ দিনে সেরে উঠলেও ব্যথা কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এমনকি জ্বরটা সেরে গিয়ে আবারও হতে পারে।

কী করবেন?
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রায় একই রকমের। ডেঙ্গু এন এস ওয়ান অ্যান্টিজেন বা ডেঙ্গু আইজিএম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে রোগনির্ণয় করতে হয়। তার আগ পর্যন্ত চিকিৎসার কোনো হেরফের নেই। সমস্যা তীব্র না হলে বাড়িতেই থাকুন। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল পান করুন (দিনে দুই লিটার, সঙ্গে লবণ-জল, ডাবের পানি, স্যালাইন ইত্যাদি)। জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। সন্ধি ব্যথা কমাতে ঠান্ডা ছ্যাঁক নিতে পারেন, হালকা ব্যায়াম করা যায়। রোগনির্ণয়ের আগেই অ্যাসপিরিন বা ব্যথানাশক সেবন করা যাবে না।

কখন হাসপাতালে যাবেন?
এমনিতে চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গুর মতো জটিল না হলেও ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি বা ছোট শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং কিডনি, যকৃৎ বা হৃদ্যন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ঝুঁকি থাকে। রক্তচাপ কমে গেলে বা প্রস্রাবের পরিমাণ দিনে ৫০০ মিলিলিটারের কম হলে, তিন দিন বাড়িতে চিকিৎসার পরও ব্যথা তীব্র রয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে। চিকুনগুনিয়া রোগ শনাক্ত করতে পিসিআর, কালচার বা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা যেতে পারে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ রোগে গিরার কোনো স্থায়ী ক্ষতি হয় না, এটি বাতরোগও নয়। মশা নিধন ছাড়া ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ থেকে নগরবাসীর রেহাই নেই।