জ্বরের পাশাপাশি ত্বকে দানা বা ফুসকুড়ি (র্যাশ) হলেই কি সেটা হাম বলে ধরে নিতে হবে? সম্প্রতি এই অসুখ নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। মনে রাখবেন, জ্বর আর র্যাশ মানেই হাম নয়। তিনটি কারণে এমন সমস্যা হতে পারে। ১. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ২. রোগজীবাণুর সংক্রমণ এবং ৩. অ্যালার্জি।
ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ সাধারণত ততটা ক্ষতিকর নয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর আপনা-আপনি সেরে যায়। তবে শিশুদের অনেক রোগের র্যাশ দেখতে প্রায় একই ধরনের। সুতরাং, রোগ নির্ণয় কখনো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। যেসব সংক্রমণে র্যাশ দেখা দেয়, সেগুলো হলো হাম, জলবসন্ত, ডেঙ্গু জ্বর, টাইফয়েড, রুবেলা বা জার্মান হাম, হারপেস জোসটার, স্কারলেট ফিভার ও মেনিনগোকক্সেমিয়া।
সুস্থ শিশুদের জন্য হাম নিরীহ রোগ, কিন্তু অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর জন্য এটা জটিল হয়ে ওঠে। আক্রান্ত ব্যক্তি ও শিশুর সরাসরি সংস্পর্শে বা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে হামের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে এবং ১০ থেকে ১২ দিনের প্রথম পর্বের সময় নিয়ে রোগ হিসেবে প্রকাশ পায়। প্রথমে জ্বর, ক্লান্তি, সর্দি-কাশি দু-চার দিনের জন্য স্থায়ী থাকে। তারপর শিশুর শরীরে জ্বর, র্যাশ, কপলিক স্পট ও লাল চোখ দেখা দেয়। র্যাশ সাধারণত জ্বরের চার থেকে ছয় দিনের মাথায় দেখা যায়। কানের পেছন দিক থেকে শুরু হয়ে মুখ, পেট, পিঠ, হাত-পা হয়ে নিচে ছড়াতে থাকে। ক্রমাগত তা ওপর থেকে পরবর্তী তিন-চার দিনের মধ্যে মিলাতে থাকে। ত্বকের চামড়া উঠে যায় ও তাতে বাদামি দাগ পড়ে।
উন্নয়নশীল দেশে হামজনিত শিশুমৃত্যু ১ থেকে ৩ শতাংশ। তবে জটিলতা দেখা দিলে তা প্রায় ৫ থেকে ১৫ শতাংশে পর্যন্ত দাঁড়ায়। জটিলতাগুলো হলো নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানপাকা, কর্নিয়ার ক্ষত, নাক-মুখে ঘা, অপুষ্টি, সেপটিসেমিয়া, মস্তিষ্কের প্রদাহ—এনকেফেলাইটিস ও এসএসপি-ই যা হামে আক্রান্ত হওয়ার সাত বছর পরও হতে পারে।
হামের চিকিৎসা সাধারণ। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল, তরল খাবার ও অ্যান্টি-হিস্টামিন, ভিটামিন এ, প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে। তবে হাম প্রতিরোধযোগ্য রোগ। শিশুকে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকে র্যাশ মিলিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পর্যন্ত দূরে রাখা উচিত। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী প্রতিটি শিশুকে টিকা দিন।
অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ