জানা অজানা ‘মাইগ্রেন’

জুন মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা সচেতনতা মাস। এই উপলক্ষে প্রথম আলোর উদ্যোগে ও টাফনিলের সহযোগিতায় আয়োজিত হলো বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’–এর তৃতীয় পর্ব। এবারের আলোচনার বিষয়—‘মাইগ্রেন: জানা অজানা কথা’। সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সেলিম শাহী ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। অনুষ্ঠানটি ২৭ জুন প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

অনুষ্ঠানটি ২৭ জুন প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে। সেই প্রবাদে বলে, মাথা আছে, তাঁরই মাথাব্যথা আছে। এর মানে মাথাব্যথা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। কখনো একে রোগ বলা হয়, কখনো একে অনেক গুরুতর রোগের উপসর্গ বলা হয়। সব বয়সী ব্যক্তির কারণভেদে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। সাধারণত অল্প বয়সী ও বয়স্কদের মাথায় ব্যথা হলে, একে কোনো গুরুতর রোগের উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাথাব্যথা দুই রকমের। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। যে ধরনের মাথাব্যথার জন্য কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, তাদের প্রাইমারি মাথাব্যথা বলে। মাইগ্রেন এর অন্তর্ভুক্ত। চোখ, কান বা সাইনাসের সমস্যার জন্য, ব্রেন স্ট্রোক, ব্রেন টিউমার, আঘাতজনিত কারণে যে ব্যথা হয়, তাকে সেকেন্ডারি মাথাব্যথা বলে। সেকেন্ডারি ব্যথা যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তরুণ ও মধ্যবয়সীদের মাইগ্রেন ও টেনশনজনিত মাথাব্যথা বেশি হয়। আলোচনার শুরুতেই এই তথ্যগুলো জানা যায় ডা. মোহাম্মদ সেলিম শাহীর কাছ থেকে।

ডা. মোহাম্মদ সেলিম শাহী আরও বলেন, বাচ্চাদের মাথাব্যথা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। কারণ, তারা নিজেদের সমস্যার কথা খুব ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারে না। অন্যদিকে অভিভাবকেরা সন্তানদের সামান্য সমস্যাকে বেশ অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করে। এতে চিকিৎসকেরা বিভ্রান্ত হয়ে যায়। বাচ্চারা সাধারণত চোখ, নাক, কান, গলার সমস্যার জন্য মাথাব্যথায় ভোগে। অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ বা কোনো কিছু চেয়ে না পেলে যে অপূর্ণতা, সেখান থেকেও অনেকের মাথাব্যথা হতে পারে।

বিশ্বে বেশির ভাগ মানুষের প্রাইমারি মাথাব্যথা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এসবের কারণে মাইগ্রেন ও টেনশনজনিত মাথাব্যথা হয়ে থাকে। শহরের যানজট, শব্দ কোলাহল, গরম মাথাব্যথার প্রকোপ বাড়ায়।

কথা বলছেন ডা. মোহাম্মদ সেলিম শাহী
ছবি: সংগৃহীত

মাথাব্যথার কিছু ‘রেড ফ্ল্যাগ সাইন’ নিয়ে কথা বলেন  ডা. মোহাম্মদ সেলিম শাহী। যেমন কোনো রোগীর মাথাব্যথা ছিল না; কিন্তু হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়েছে। আর এটির দ্রুত অবনতি হচ্ছে, সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা হওয়া, তার সঙ্গে বমি হওয়া বা বমিভাব, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি হওয়া, হাত-পা অবশ হওয়া। এ ধরনের মাথাব্যথা হলে মাথার সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করে মাথাব্যথার কারণ শনাক্ত করা হয়। এর পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষা ও সাইনাসের এক্স–রেও করা হয়।

খাবার ও মাইগ্রেন নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। দেখা গিয়েছে যারা কফি, চকলেট ও পনির বেশি খায়, তাদের মাইগ্রেন অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। টেস্টিং সল্ট মিশ্রিত খাবার ও ফাস্ট ফুড খেলেও মাইগ্রেন অ্যাটাক বেশি হতে পারে। যেসব খাবারে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আছে, সেই খাবারগুলো মাইগ্রেন প্রতিরোধে কিছুটা সহায়তা করে। এর ভেতর আছে হলুদ ও সবুজ শাকসবজি, তাজা ফলমূল, খেজুর, দুধ, ডিম ইত্যাদি।

কথা বলছেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী
ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী নিজের মাথাব্যথার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ‘সকালে শুটিং বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস থাকলে দেখা যায় এসবের দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম কম হয়। আবার সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে যাওয়া হয়। সকাল থেকে দুপুর হতে থাকলে ঘাড়ের পেছনে ব্যথা শুরু হতে থাকে, এরপর পুরো মাথায় ছড়িয়ে যেতে থাকে। পাশাপাশি নিম্ন রক্তচাপ দেখা দেয়। তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে একটা চকলেট বা ডিম খাই। আর আজ প্রথম কোনো পাবলিক প্ল্যাটফর্মে বলছি, আমি এখন একজন ভেজিটারিয়ান। মাছ–মাংস খাই না। এখন সবুজ শাকসবজি, চিয়া সিডের মতো অর্গানিক খাবার খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছি। এগুলো খাওয়া শুরু করার পর আমার মাথাব্যথার পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে।’

একেক মাথাব্যথার একেক রকমের চিকিৎসা নিয়ে অনুষ্ঠানে আলোচনা করা। মাইগ্রেনের ব্যথা হলে চিকিৎসকেরা রোগীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে, মাথায় আইসব্যাগ দিয়ে পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে তাৎক্ষণিক ব্যথার ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ, নেপ্রোক্সিন ও টাফনিল সেবন করা যেতে পারে।