গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস সবারই কমবেশি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, বমি ইত্যাদি হয়ে থাকে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কারও কারও বেলায় তা এমনই গুরুতর হয়ে ওঠে যে অন্তঃসত্ত্বা মা প্রায় কিছুই খেতে পারেন না, প্রচণ্ড বমি হতে থাকে, দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়, এমনকি ওজন না বেড়ে বরং ৫ শতাংশের বেশি কমে যায়। এই সমস্যার নাম হাইপারএমেসিস গ্রাভিডেরাম।
কারণ কী?
গর্ভাবস্থায় রক্তে নানা ধরনের হরমোনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এর মধ্যে বিটা এইচ সি জির পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার কারণেই বমি হয়। অনেকের ধারণা, ভিটামিন বি১, বি৬ এবং আমিষের অভাব থাকলে সমস্যা বেশি হয়। এর সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতাও জড়িত। প্রথম সন্তানের বেলায় এমনটা বেশি ঘটে। পরিবারে মা-বোনের ইতিহাস থাকলে হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যমজ সন্তান বা মোলার প্রেগন্যান্সিতে অতিরিক্ত বমি হতে দেখা যায়।
লক্ষ করুন
প্রায় সব নারীই মা হওয়ার সময়টাতে একটু-আধটু বমি করে থাকেন। কিন্তু অত্যধিক বমি হওয়ার কারণে হাইপারএমেসিসের রোগী ধীরে ধীরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। চোখ ভেতরে ঢুকে যায়, জিব শুকিয়ে আসে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। ওজন না বেড়ে বরং কমে যেতে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। রক্তচাপ কমে যায় ও হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়, তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। জন্ডিসও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় সাধারণ বমির সঙ্গে এই রোগের পার্থক্য আছে, তাই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এ ছাড়া সাধারণ বমি প্রথম তিন মাসের পর এমনিতেই কমে আসার কথা। বমি না কমে বেড়ে যেতে থাকা ও ২০ সপ্তাহের বেশি সময় বমি হতে থাকা খারাপ লক্ষণ।
কী করবেন
পানি ও লবণশূন্যতা দেখা দিলে বা অনবরত বমি হতে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি করে মুখে খাবার বন্ধ রেখে শিরাপথে স্যালাইন ও বমি বন্ধের ওষুধ দিতে হতে পারে। বমি কমে এলে প্রথমে শুকনা খাবার, যেমন বিস্কুট, টোস্ট, মুড়ি ইত্যাদি খাবেন। তারপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাবার শুরু করতে হবে। একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। আমিষজাতীয় খাবার, ভিটামিন বি১ ও বি৬-সমৃদ্ধ খাবার, সবজি, বিট, বিনস, কলা ইত্যাদি খেতে হবে। এই সমস্যার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক বিষয় জড়িত। তাই রোগীকে ভিন্ন পরিবেশে নিয়ে গেলে অনেকটা সমস্যা কমে।
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, বিএসএমএমইউ