গরমের কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে?
যাঁদের ফুসফুসের সমস্যা আছে, তাপমাত্রার দ্রুত তারতম্য তাঁদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে যাঁরা হাঁপানি (অ্যাজমা), যক্ষ্মা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজসহ (সিওপিডি) ফুসফুসের অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, তীব্র গরমে তাঁদের ভয়ানক শ্বাসকষ্ট হতে পারে। পরিবেশ দূষণ ও বাতাসে ধুলাবালুর সঙ্গে আবহাওয়ার ওঠানামার ফলে শ্বাসতন্ত্রের অসুখ বেড়ে যায়।
গরমে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার কারণ
গরমকালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মূলত তিনটি বিষয়কে বিবেচনা করা যেতে পারে।
উচ্চ তাপমাত্রা: তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে ঘাম হয়। এই ঘাম পানিশূন্যতা তৈরি করে এবং শ্বাসকষ্ট বাড়ায়।
সূর্যরশ্মি: সূর্যরশ্মি দূষিত বাতাসে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা মূলত ওজোনস্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই দূষিত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। নাকে-গলায় অস্বস্তি হয় এবং হাঁচি-কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়।
আর্দ্রতা: আর্দ্রতার উচ্চমাত্রা শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে। উষ্ণ বাতাসে শীতল বাতাসের চেয়ে আর্দ্রতা বেশি থাকে এবং এটি বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে আর্দ্রতার মাত্রা যত বাড়ে, ফুসফুসের সমস্যা তত বেশি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
গরমে শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতে করণীয়
তীব্র রোদ এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে, বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাইরে না থাকাই ভালো। এ সময় রোদের তাপ সবচেয়ে বেশি থাকে।
দূষণযুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
যথাসম্ভব শীতল পরিবেশে থাকুন। বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে আরামদায়ক মাত্রায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালু রাখুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। মদ্যপান ও ধূমপানের অভ্যাস থাকলে পরিহার করুন।
মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করবেন না।
ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো–বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখুন।
নিয়মিত গোসল করতে হবে।
ধুলাবালু থেকে দূরে থাকুন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
ফুসফুসের যত্ন নিন। ফুসফুসের কিছু ব্যায়াম আছে, সেগুলো নিয়মিত অনুশীলন করুন।
ফুসফুসের যত্ন নিন
শ্বাসতন্ত্রের অসুখ থেকে বাঁচতে ফুসফুসের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ফুসফুসের ব্যায়াম খুবই কার্যকর। এ ছাড়া জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে সচেতন থাকা দরকার। ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারেন।
ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট খাবার খাওয়া ভালো। হলুদ, আদা, রসুন, বিট, ব্রকলি, টমেটো, আপেল, ডিম ইত্যাদি খাবার অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট খাবার।
নিয়মিত মধু খেলে ফুসফুস ভালো থাকে। মধু কাশি ও ফুসফুসে জমে থাকা শ্লেষ্মা দূর করে।
গ্রিন টিতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফুসফুসের জন্য ভালো। এটি নিয়মিত পান করার অভ্যাস করতে পারেন।
খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না। আস্তে আস্তে সময় নিয়ে খাবেন। একবারে অনেক বেশি খাবেন না। পরিমাণে অল্প করে বারবার খাওয়া ভালো।
খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে যাবেন না। অন্তত দুই ঘণ্টা পর ঘুমাতে যান।
নিয়মিত শরীরচর্চা ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। দৈনন্দিন অন্তত কিছু সময় শরীরচর্চার অভ্যাস করুন।
নিকোটিন ও কার্বন ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে চিরতরে তা পরিহার করুন।
লেখক: মেডিসিন, বক্ষব্যাধি ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ এবং চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা