খেজুরের কাঁচা রস পানে ঝুঁকি
শীতকালে অনেকেই খেজুরের রস খেতে ভালোবাসেন। গ্রামে–গঞ্জে এ সময় অনেককে গাছ থেকে নামিয়ে কাঁচা রস পান করতে দেখা যায়। আবার অনেকে চুলায় ফুটিয়ে পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। খেজুরের রস থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের গুড়ও বেশ জনপ্রিয়। তবে গাছ থেকে নামানো কাঁচা খেজুরের রস পান করলে জ্বর, মাথাব্যথা, খিঁচুনি হওয়ার ঝুঁকি আছে। অনেক সময় রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এর কারণ ‘নিপাহ ভাইরাস এনসেফালাইটিস’।
নিপাহ ভাইরাস মূলত বাদুড়ের কাছ থেকে খেজুরের রসে ছড়ায়। আমাদের দেশে খেজুরের রস গাছ থেকে সরাসরি কলসির মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। কলসি অথবা সংগ্রহের পাত্রটি সারা রাত খেজুরগাছে ঝোলানো থাকে। বাদুড় রাতে এই খেজুরের রস খেতে আসে, তখন তার মুখের লালা অথবা মলমূত্রের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস রসের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। এই খেজুরের রস ভালোভাবে ফোটালে নিপাহ ভাইরাস মরে যায়; কিন্তু না ফুটিয়ে কাঁচা রস পান করলে নিপাহ ভাইরাস এনসেফালাইটিস হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়।
লক্ষণ কী
তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, খিঁচুনি, অসংলগ্ন কথাবার্তা, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া—এগুলো হলো যেকোনো এনসেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহের লক্ষণ। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক কাঁচা খেজুরের রস পানের ইতিহাস থাকলে তা নিপাহ ভাইরাসের কারণে হয়েছে বলে সন্দেহ করা যায়।
শনাক্তকরণ
কোনো ব্যক্তির তীব্র জ্বরের পর এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত মস্তিষ্কের এমআরআই পরীক্ষা করে এনসেফালাইটিস হয়েছে কি না, তা ধারণা করা যেতে পারে। মেরুদণ্ডের ভেতর থেকে রস (সিএসএফ) বের করে পরীক্ষা করলেও এ রোগ নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
এ ধরনের রোগী বাড়িতে না রেখে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। অ্যান্টিভাইরাল ও স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ দীর্ঘ সময় শিরায় দিতে হবে। তার সঙ্গে ভালো নার্সিং সেবা দেওয়া গেলে রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠে।
নিপাহ ভাইরাস এনসেফালাইটিসের রোগীরা অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে প্রতিরোধ করা উত্তম।
খেজুরের রস সংগ্রহ করার সময় সংগ্রহ পাত্রের চারপাশে প্রতিরক্ষামূলক আবরণ ব্যবহার করতে হবে। রস ভালো করে ফুটিয়ে খেতে হবে। আক্রান্ত হলে দ্রুত কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন।
ডা. নাজমুল হক, সহকারী অধ্যাপক, নিউরোলজি, মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা