কোমরব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ কর্মস্থলে সঠিকভাবে বসে কাজ না করা। আরেকটি কারণ বসার চেয়ারের কাঠামোগত ত্রুটি। দীর্ঘ সময় টানা বসে কাজ করলে আমাদের মেরুদণ্ডের সামনের দিকের মাংসপেশি সংকুচিত এবং পেছনের দিকের মাংসপেশি প্রসারিত হয়। এ কারণে দেহে পেশির ভারসাম্যহীনতা (মাসকুলার ইমব্যালেন্স) তৈরি হয়। তখন মেরুদণ্ডের মাঝখানে থাকা ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। এই চাপ থেকে ধীরে ধীরে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া একটানা বসে কাজ করার কারণেও অনেকের ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
যাঁরা ডেস্কে বসে কাজ করেন, অফিস-আদালত কিংবা ব্যাংকে-হাসপাতালে বসার কাজ করেন দীর্ঘ সময়, তাঁরা সাধারণত চেয়ারে বসে ঝুঁকে কাজ করেন। এ জন্য পেটের মাংসপেশি ও পায়ের সম্মুখভাগের মাংসপেশি সংকুচিত থাকে। এভাবে সংকুচিত থাকতে থাকতে এসব জায়গার মাংসপেশি একসময় শক্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে, পিঠ ও কোমরের পেছনের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়। এই ভারসাম্যহীনতার জন্য কোমরের ডিস্কের স্থানচ্যুতি ঘটে, যাকে বলা হয় প্রলাপস লামবার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক। সঠিকভাবে বসার নিয়ম না জানায় পিঠের হাড়ের বক্রতা দেখা দেয়, একে বলা হয় কাইফোসিস। এ রকম দৈহিক অস্বাভাবিকতা থাকার জন্য বছরের পর বছর যাঁরা ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি কোমরব্যথায় ভোগেন। আবার ফোমের চেয়ারে বসে কাজের জন্য ঊরুর ও সম্মুখ পায়ের মাংসপেশি ছোট এবং পশ্চাদংশের মাংসপেশিতে একটি টট পয়েন্ট তৈরি হয়, যার ফলে অঙ্গভঙ্গিজনিত (পশ্চারাল) কোমরব্যথার সৃষ্টি হয়। এসব ব্যথার জন্য প্রচলিত ব্যথার ওষুধ খেয়ে কোনো উপকারই আসে না। এ জন্য দরকার সঠিক দেহবিন্যাস জেনে সে মোতাবেক কর্মস্থলে কাজ করা এবং প্রয়োজনে দেহভঙ্গি পরিবর্তন করা।
বসে বসে কাজ করার কারণে যে শুধু ডিস্কের সমস্যা হয়, তা কিন্তু নয়; কোমরের মেরুদণ্ডের দুই পাশে থাকা স্যাক্রো-ইলিয়াক জয়েন্টেও প্রদাহ হতে পারে। এ সমস্যাকে বলা হয় স্যাক্রালাইটিস। আবার কোমর বা লাম্বারের কশেরুকার সঙ্গে নিচে থাকা স্যাক্রাম অংশের কশেরুকা জোড়া লেগে যায়। এ ঘটনাকে বলে স্যাক্রালাইজেশন।
অফিসের চেয়ারে কিছু পরিবর্তন এনে এসব কোমরব্যথা প্রতিহত করা সম্ভব। যেমন যেসব চেয়ারের পিঠ রাখার জায়গাটা (ব্যাকরেস্ট) মানুষের মেরুদণ্ডের বিন্যাসের মতো গঠিত, সেসব চেয়ার বসে কাজ করা। এ ছাড়া অন্যান্য চেয়ারে ব্যাক সাপোর্ট বা লাম্বার রোল (মেরুদণ্ডকে সঠিকভাবে রাখার জন্য চেয়ার বা পিঠে লাগানো সহায়ক অনুষঙ্গ) ব্যবহার করে কোমর সোজা রেখে বসা যায়। কোমরব্যথা প্রতিরোধে ‘ব্যালেন্স টুল’ নামে একধরনের বিশেষ চেয়ার পাওয়া যায়। এ চেয়ার ব্যবহার করলে কোমরের বক্রতা ঠিক রেখে কাজ করা যায়।
কোমরব্যথা এড়ানোর জন্য অবশ্যই সবাইকে সঠিক ভঙ্গিতে বসতে হবে। সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো কাজ করা যাবে না বা ভারী জিনিস তোলা পরিহার করতে হবে। আবার দীর্ঘক্ষণ এক অবস্থায় কোনো কাজ করা যাবে না। এক ঘণ্টা পরপর বসার ধরন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। অফিসের পরিবেশে কর্মোপযোগী পরিবর্তন আনতে পারলে কোমরব্যথা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে অফিসে সঠিক বসার ভঙ্গি নির্ধারণ এবং সঠিক ব্যায়ামের ব্যবস্থাপত্র নিতে পারেন। সেই সঙ্গে পেশির ভারসাম্যহীনতা দূর করার মাধ্যমে রোগীকে ব্যথামুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।