মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ক্যানসার নাকি টিউমার? সঠিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য। যে রোগ সরাসরি দৃশ্যমান নয়, শরীরের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে, তার অবস্থান জানতে হলে পরীক্ষা–নিরীক্ষা জরুরি। প্রযুক্তির কল্যাণে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসেছে রোগ নির্ণয়ের নানা ধরন ও যন্ত্রপাতি। রোগীর শরীরের ভেতরে কী চলছে, তা দেখার জন্য চিকিৎসকেরা এক্স–রে বা আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে পরীক্ষা করেন। এই এক্স–রের অত্যাধুনিক সংস্করণ কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান।
সিটি স্ক্যান কী?
ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) সংস্করণের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের সবচেয়ে আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য একটি পরীক্ষা পদ্ধতি হলো সিটি স্ক্যান। এর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অজস্র এক্স–রে ছবি তোলা হয় এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে সেগুলোকে একত্র করা হয়। আরও সহজ করে বললে সিটি স্ক্যান এমন একটি মেডিকেল ইমেজিং পদ্ধতি, যাতে রোগীর শরীরের ভেতরের অবস্থা স্ক্যান করে ইমেজ বা ছবি তোলা হয়। একজন রেডিওলজি টেকনোলজিস্ট এই পরীক্ষা করেন।
যেসব ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান করা হয়
• টিউমার, ক্যানসারের অবস্থান নির্ণয়
• মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ ও অন্যান্য সমস্যা নিরীক্ষণ
• অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন থেরাপি ও বায়োপসির গাইডলাইন নিশ্চিতকরণ
• রক্ত জমাট বা প্রদাহের উৎস নির্ণয়
• রক্ত চলাচলে বাধাবিপত্তি বা ব্লকেজ পরীক্ষা করা
• ফুসফুসের রোগ ও রোগের ধরন জানতে
• মূত্রনালিতে পাথর আছে কি না—তা নির্ণয়
• যেকোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বা প্রদাহ নির্ণয়।
সিটি স্ক্যানের ধরন
• সিটি অ্যানজিওগ্রাফি
• সিটি বোন স্ক্যান
• কার্ডিয়াক সিটি
• সিটি অ্যাবডোমেন
• সিটি চেস্ট
• হেড সিটি
• সিটি স্ক্যান অব দ্য স্পাইন
• পেলভিক সিটি স্ক্যান
• সিটি নেক
• সিটি স্ক্যান কিডনি
যেভাবে করা হয় সিটি স্ক্যান
সিটি স্ক্যান করার জন্য হাসপাতালে আলাদা ঘর থাকে। রোগীকে প্রথমে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা খাদ্য ও পানি গ্রহণে বিরত থাকতে হতে পারে। এটি নির্ভর করে রোগের ধরন, লক্ষণ ও চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর। শরীরে কোনো অলংকার থাকলে খুলে রাখতে হয়। রোগীকে একটি বড় টেবিলে শুইয়ে ডোনাট আকৃতির সিটি মেশিনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়ে পুরো শরীর এক্স–রে করা হয়। শুয়ে থাকা অবস্থায় নড়াচড়া করলে ছবি ঝাপসা আসার আশঙ্কা থেকে যায়।
সিটি স্ক্যানার যখন চালু হয়, তখন এর ভেতরে থাকা সেন্সরটি খুব দ্রুত ঘুরতে শুরু করে এবং ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কোণে ছবি তুলতে থাকে। একই সঙ্গে এক্স–রে টিউবটিও ঘুরে ছবিগুলো প্রিন্ট করতে থাকে। স্ক্যান শেষে ছবিগুলো নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। এতে শরীরের যেকোনো অংশে অঙ্কুরিত হওয়া অস্বাভাবিকতা ছবির মাধ্যমে উঠে আসে।