চলছে মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা সচেতনতা মাস। এ উপলক্ষে প্রথম আলোর উদ্যোগে টাফনিলের সহযোগিতায় আয়োজিত হলো বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’র দ্বিতীয় পর্ব। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘কর্মজীবীদের মাথাব্যথা’। সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি। অনুষ্ঠানটি ২০ জুন প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাথাব্যথার ধরন নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিছু কিছু মাথাব্যথা আছে, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে যায়। যেমন মাইগ্রেনের ব্যথা ও টেনশনজনিত মাথাব্যথা। মাইগ্রেনের মাথাব্যথাটা মাথার এক পাশে শুরু হয়। তীব্র বা মাঝারি আকারে শুরু হয়। এর স্থায়িত্ব চার ঘণ্টা থেকে তিন দিন পর্যন্ত হতে পারে। তার সঙ্গে অনেকের বমি বমি ভাব হয়, বমি হয়; অনেকের আলো, শব্দ, তাপমাত্রা, রোদ বা ঠান্ডায় সংবেদনশীলতা হয়। টেনজনজনিত মাথাব্যথা সাধারণত অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেসের জন্য হয়। তখন পুরো মাথাতেই ব্যথাটা চেপে ধরে। বিভিন্ন সময়ে ব্যথাটা বাড়ে বা কমে।
সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নিকে প্রশ্ন করা হয় তাঁর পেশাজীবনে স্ট্রেসের পরিমাণ কেমন। জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য পেশায় দিনে কাজের জন্য একটা নির্ধারিত সময় থাকে। সকাল থেকে বিকেল বা দুপুর থেকে রাত। কিন্তু আমাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। দেখা যায়, সকালে একটা শুটিংয়ে বেরিয়েছি, সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে রাত আড়াইটা বেজে গেল। আবার ভোরবেলায় কোনো লাইভে অংশ নিতে হচ্ছে। দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে যখনই চলতে চাই, তখনই শরীর একটু খারাপ করবে। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মাথা থেকে যেতে চায় না। এটা যে কাজের চাপ, তা নয়। এখানে একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। যেমন আমি যে মঞ্চে গান গাইছি, সেখানে দর্শক হিসেবে অনেকে থাকেন। তাঁদের কতটুকু খুশি করতে পারলাম, এটা নিয়েও একটা চাপ থাকে। নিজের দলের সদস্যদের দেখে রাখা বা মানিয়ে চলা, ঢাকা বা দেশের বাইরে যাই, সেখানে সময়মতো গিয়ে আমার কাজটা সঠিকভাবে করে আসা, এগুলো সবই একজন শিল্পীর ভাবনার অন্তর্ভুক্ত। এসব নিয়ে যে টেনশন, তা থেকে মাথাব্যথা হয়। কিছুক্ষণের জন্য আরাম পেতে আমরা ওষুধ সেবন করি, কিন্তু স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। কারণ, আমাদের শিল্পীজীবনটাই এমন’। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দিনাত জাহান মুন্নি আরও জানান, কোনো কনসার্ট বা লাইভ অনুষ্ঠান শুরু হতে চলেছে, কিন্তু এই শিল্পীর মাথাব্যথা করছে, এমন সময় তিনি তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য ওষুধ সেবন করেন।
কর্মজীবনে যে যে কারণে বেশি মাথাব্যথা হয়, তা নিয়ে কথা বলেন ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সকালে অফিসে উদ্দেশে বের হয়ে সময়মতো সেখানে পৌঁছানো নিয়ে একটা টেনশন কাজ করে। অফিসে কাজের একটা চাপ বা কাজের পরিবেশ নিয়েও বেশ স্ট্রেসের ভেতরে থাকা লাগে। সেখানের জীবনটা যান্ত্রিক। দেখা যায়, অনেকক্ষণ কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে সময় কাটাতে হচ্ছে, কাজ করতে গিয়ে ঠিকমতো পানি পান করছেন না বা খাবার খাচ্ছেন না—এই সবকিছুই কিন্তু মাথাব্যথার ট্রিগার হিসেবে কাজ করে।
ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মাথাব্যথা শুরু হচ্ছে, এমন মনে হলেই ওষুধ খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল, টাফনিল বা নেপ্রোক্সিন-জাতীয় ওষুধগুলো বেশি কার্যকর। এ ধরনের সমাধানকে বলে অ্যাবোরটিভ ট্রিটমেন্ট। যাঁদের সব সময়ই মাথাব্যথা লেগে থাকে, তাঁদের দীর্ঘ সময়ের জন্য একটা প্রিভেন্টিভ ট্রিটমেন্ট নিতে হয়। এতে দুই থেকে তিন মাস বা ছয় মাস টানা ওষুধ সেবন করতে হয়।’
যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের কর্মক্ষেত্রে কী করা উচিত, এই নিয়ে পরামর্শ দিতে গিয়ে ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘স্ট্রেস এড়িয়ে চলতে হবে। কাজটাকে আনন্দের সঙ্গে করতে হবে। কোনোভাবে বোঝা হিসেবে নেওয়া যাবে না। টানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থেকে কাজ না করে একটু বিরতি নিয়ে কাজ করতে হবে। অনেকে অফিসে ঘন ঘন চা-কফি পান করেন। এটা কমিয়ে দিতে হবে। পানি পান বা খাবার খাওয়ার মধ্যে যেন দীর্ঘ বিরতি না থাকে। কাজের পরিবেশটাও নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে হবে।’