মানবদেহে খাবারের বিপাকক্রিয়া ও শরীর সুস্থ রাখতে ওমেগা–৩ চর্বির বিকল্প নেই। প্রদাহ কমাতে, হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এই খাদ্য উপাদান বিশেষ প্রয়োজনীয়। ওমেগা–৩ হলো অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা মূলত মাছের তেলে পাওয়া যায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন হৃদ্যন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য সবাইকে সপ্তাহে অন্তত দুদিন ওমেগা–৩ চর্বি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
প্রায় সব মাছেই কম বেশি ওমেগা–৩ চর্বি থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছে। যেমন ইলিশ, টুনা, সার্ডিন, স্যামন, ট্রাউট, হেরিং, কড মাছের তেলে। মাছ ছাড়াও কিছু খাবারে ওমেগা–৩ অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। যেমন ফ্ল্যাক্সসিড তেল বা তিসির তেল, ওয়ালনাট, ক্যানোলা ওয়েল, চিয়া সিড, সয়াবিন, সবুজ পাতাওলা সবজি ইত্যাদি।
গবেষকেরা বলেছেন, ওমেগা–৩ রক্তে ট্রাইগ্লসারাইডের পরিমাণ এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমায়। এই চর্বি রক্তচাপের তীব্রতাও কমায়। ফলে ওমেগা–৩ নিয়মিত খেলে এটি হার্ট অ্যাটক ও স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক হয়। এ ছাড়া এই চর্বি প্রদাহও কমায়।
সপ্তাহে অন্তত দুবার ওমেগা-৩–সমৃদ্ধ মাছ খাওয়া উচিত। প্রতিবার আট আউন্স বা প্রায় ২৫০ গ্রাম পরিমাণ মাছ খেতে হবে। মাছ না ভেজে গ্রিল করে কিংবা হালকা আঁচে রান্না করে খেলে মাছের তেলে অপরিবর্তিত ওমেগা–৩ পাওয়া যায়।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে কি ওমেগা–৩ সাপ্লিমেন্ট সেবন করা উচিত? সপ্তাহে দুই দিন ওমেগা–৩ সমৃদ্ধ মাছ এবং বাদামজাতীয় এই চর্বিসমৃদ্ধ খাবার খেলে কোনো সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার দরকার নেই। তা ছাড়া ওমেগা–৩ ক্যাপসুলে অরুচি, বদহজম ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কাজেই কিছুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো সেবন করা উচিত নয়। বিশেষ করে হৃদ্রোগের ঝুঁকি থাকলে, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলে অথবা হৃদ্রোগীদের এ ধরনের সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ