আগুনে পুড়ে গেলে কী করবেন

.
.

একটু সতর্ক থাকলে অনেক সময় অগ্নি দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। তবু দুর্ঘটনা যদি ঘটেই যায়, তবে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পুড়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ আগুনে পোড়ার ঘটনা রান্নাঘরেই ঘটে। এ জন্য সাবধানতার প্রয়োজন আছে। রান্নার সময় একটু অসতর্ক হলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রান্নাঘরের সতর্কতা:

রান্নাঘরে ঢিলেঢালা কাপড় ব্যবহার না করে আঁটসাঁট কাপড় ব্যবহার করবেন। ভালো হয় কিচেন অ্যাপ্রোন ব্যবহার করলে। সকালে রান্নাঘরে চুলায় আগুন দেওয়ার আগে অবশ্যই জানালা খুলে দেবেন। গরম পানি আনা-নেওয়ার সময় বালতি ব্যবহার করবেন। হঠাৎ পুড়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি ঢালবেন। অগ্নি িনর্বাপনযন্ত্র রান্নাঘরে রাখবেন। হঠাৎ করে চোখে পুড়ে গেলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেবেন।

দগ্ধ হওয়ার কারণ:

বিভিন্ন কারণে মানুষ পুড়ে যায়। নারীদের শরীরে আগুন লাগার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে রান্নাঘরে। শীতের রাতে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়েও অনেকে পুড়ে যায়। গরম পানি, ভাতের মাড় ও ডাল পড়ে গ্রামের অনেক বৃদ্ধ, শিশু ও নারীর শরীর ঝলসে যায়। মশার কয়েল থেকেও আগুন ধরে মানুষ দগ্ধ হয়। পাশাপাশি ইদানীং সড়ক দুর্ঘটনায়, গ্যাস সিলিন্ডার, ল্যাপটপ ও মুঠোফোন বিস্ফোরণে অনেকে দগ্ধ হচ্ছে। বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে অনেকে পুড়ে যায়। বেশি পরিমাণে পুড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

আগুনে পোড়ার চিকিৎসা:

পোড়া জায়গায় সম্ভব হলে ট্যাপের ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে অথবা ভেজানো তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখতে হবে। ফোসকা পড়ে গেলে তা গেলে না ফেলা ভালো। এতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। যদি পোড়ার জায়গা অল্প হয়, তাতে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে বার্না, বার্নল বা মিল্কক্রিম লাগিয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে হাসপাতালে আনতে হবে। বাসায় যদি কিছু না থাকে ডিমের সাদা অংশ অথবা নিওবার্নিয়া মলম লাগাতে পারেন।
কোনো অবস্থায় টুথপেস্ট, গাছের বাকল, পাতা অথবা মসলা পোড়া স্থানে লাগানো যাবে না। পরিমাণে বেশি পুড়ে গেলে স্যালাইন দেওয়া খুবই জরুরি। তাই দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে। অনেক সময় আগুনে শ্বাসনালি পুড়ে গেলে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সাপোর্ট দরকার হয়।

বাসায় গরম পানি বা চা পড়ে পুড়ে গেলে ক্ষতস্থানে ট্যাপের পানিতে পরিষ্কার করে তাতে ১ শতাংশ এসএসডি ক্রিম লাগিয়ে দিন। ব্যথা হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারেন। গর্ভবতী হলে কোনো ধরনের মলম না লাগানো ভালো। পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিক সার্জনের সহায়তা নিতে পারেন চিকিৎসার জন্য।

অনেকে পোড়ার স্থানে দাগ নিয়ে খুব উৎকণ্ঠিত থাকেন। সাধারণত গরম পানি, চা বা ডালের পোড়া দাগ ছয় মাসে চলে যায়।

গরম তেল বা আগুনে পোড়ার দাগ দীর্ঘস্থায়ী হয়। দাগের প্রকারভেদে আমরা লেভিসিকা ক্রিম (সিলিকন জেল), মেডারমা ক্রিম, জারজেল ক্রিম ও ভাইট ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিই। এই চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘদিনের হয়ে থাকে।

মোহাম্মদ এস খালেদ

সহকারী অধ্যাপক

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ