ইফতারের পর কোন চা খাওয়া ভালো
আপনারও কি মনে হয়, ইফতারের পর এক কাপ চা না খেলেই নয়? ইফতারের পর অন্তত এক কাপ চা খেতেই হবে, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কারও কারও আবার এ সময় দুধ চা-ই চাই। ইফতারের পর এক কাপ চায়েই নাকি পরম প্রশান্তি! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ইফতারের পর পর চায়ের তেষ্টা নিয়ে তাই দেখা যায় অনেকের পোস্ট।
ইফতারের পর চা খাওয়া হয়তো আপনার ক্লান্ত দেহ কিংবা মনের চাহিদা। তাই চা আপনি নিশ্চয়ই খাবেন। তবে এর ভালোমন্দ দিক সম্পর্কে জেনে রাখাও প্রয়োজন। যাতে চায়ের তেষ্টা মেটাতে গিয়ে রোজার সময় হিতে বিপরীত না হয়। এ প্রসঙ্গে জানালেন রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার।
সতেজতায় চা
কর্মব্যস্ত দিনে সিয়াম সাধনার পর ক্লান্তি আসতেই পারে। ইফতারের পর শরীর ‘ছেড়ে দেওয়া’র মতো অনুভূতি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এ সময় এক কাপ চায়ে আয়েশি চুমুক দিয়ে আপনি সতেজ হয়ে উঠতে পারেন। ইফতারের পরও অনেকেই বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান না। এমন সময় সতেজতার আমেজ আনতে আপনার জন্য চা পান অবশ্যই ইতিবাচক হতে পারে। চায়ের ক্যাফেইন ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে। আর এই চা যদি খাওয়া হয় আদা, তেজপাতা, দারুচিনি, লবঙ্গ প্রভৃতি দিয়ে, তাহলে আপনি দারুণ ফুরফুরে অনুভব করবেন। মসলা চা বানাতে আলসেমি লাগলে সহজে অর্গানিক চা বানিয়ে নিতে পারেন।
পরিপাক ও পুষ্টিগত দিক
যেকোনো খাবার খাওয়ার অন্তত ২০ মিনিট পর পানি কিংবা পানীয় খাওয়া উচিত। নইলে খাবার পরিপাকে অসুবিধা হতে পারে। তবে পানীয়টি যদি হয় চা, তাহলে সময়ের ব্যবধানটা আরেকটু বাড়িয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, চায়ের ট্যানিন খাবার থেকে আয়রন শোষণ করতে বাধা দেয়। তাই খাবার খাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর চা খাওয়া ভালো। ইফতারের পর বেশির ভাগ মানুষই দুধ–চা খেতে ভালোবাসেন। কিন্তু দুধ–চা অনেকের ক্ষেত্রেই অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যার জন্য দায়ী। ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে অনেকে এমনিতেই অ্যাসিডিটিতে ভোগেন। এর ঠিক পর পর দুধ–চা খেলে এ ধরনের সমস্যা বাড়তে পারে।
চায়ের কিছু ‘না’
ইফতারের পর অতিরিক্ত চা খাবেন না। তাতে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে। তাই দেহ পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে। রমজান মাসে কেউ কেউ পানিশূন্যতায় ভোগেন। অতিরিক্ত চা-কফি খেলে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ে।
চা ও ঘুম
ক্যাফেইন স্নায়ু উদ্দীপক। তাই চা খেলে আপনার ঘুমাতে সমস্যা হতেই পারে। রোজা রাখার পর রাতের ঘুম শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। সেই দিকটি বিবেচনা করে বিকেলের পর চা-কফি না খাওয়ার পরামর্শই দেওয়া হয়। রমজান মাসে তো আর ইফতারের পর ছাড়া চা খাওয়ার উপায় নেই। তবে সেটিও যেন একেবারে অনেকটা সময় পর না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নইলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া অতিরিক্ত চা খেলে কিংবা এক কাপ চা-ই খুব কড়া করে বানিয়ে খেলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই ইফতারের পর চা খাবেন কেবল এক কাপ, সেটিও মৃদু কিংবা মাঝারি লিকার দিয়ে।