বন্যার সময় মানুষ যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন, প্রতিকারে যা করতে হবে

বন্যার সময় শিশুদের নিরাপদে রাখতে হবে
ছবি: প্রথম আলো

ভয়াবহ বন্যার কবলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে বন্যার্ত মানুষ। ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে গবাদিপশু, পুকুরের মাছ। এসব ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবল স্বাস্থ্যঝুঁকি। বন্যার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা প্রভাব পড়ে। শুধু যে বন্যার্ত মানুষই এ ঝুঁকিতে থাকে, তা নয় বরং বন্যায় উদ্ধারকর্মী, ত্রাণকর্মী, স্বাস্থ্যসেবাদানকারীও ঝুঁকিতে থাকেন।

বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া

বন্যায় সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো পানিতে ডুবে মৃত্যু। শিশুদের ক্ষেত্রে এ হার সবচেয়ে বেশি।

আঘাত পাওয়া

বাড়িঘর বা গাছের ডালপালা ভেঙে, পাহাড়ধসে আঘাত পাওয়া বন্যার সময় খুবই সাধারণ ঘটনা।

পানিবাহিত রোগ

বন্যায় নিরাপদ পানির অভাবে অনেকেই পান ও দৈনন্দিন কাজে অনিরাপদ পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হন। আবার নর্দমা ও সুয়ারেজ লাইনের পানি উপচে নিরাপদ পানির উৎসকে দূষিত করে। ফলে পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ, লেপটোস্পাইরোসিস বেড়ে যায়।

মশাবাহিত রোগ

বন্যার পানি বাড়ি বা বাড়ির পেছনের বাগানে জমে পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াও বেড়ে যায়। পাশাপাশি সাপের প্রকোপ বেড়ে যায়।

ছত্রাকজাতীয় রোগ

দীর্ঘক্ষণ হাত-পা ভেজা থাকার কারণে চামড়ায় ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ হয়। আশ্রয়কেন্দ্রে একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকায় ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ একজন থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ফুসফুসে সংক্রমণ

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুসফুসের সংক্রমণ এই সময়ের খুব সাধারণ একটা সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন।

আরও পড়ুন
বন্যায় দীর্ঘক্ষণ হাত-পা ভেজা থাকার কারণে চামড়ায় ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ হয়
ছবি: প্রথম আলো

মানসিক সমস্যা

বন্যায় মানুষের শারীরিক সমস্যাগুলোকে আমরা যেমন গুরুত্ব দিই, মানসিক সমস্যাগুলোকে তেমনি অবহেলা করি বা ভুলে যাই। কিন্তু সহায় সম্পত্তি হারিয়ে বেশির ভাগ মানুষই বন্যা ও বন্যাপরবর্তী সময়ে মন খারাপ, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, অনিদ্রা, মানসিক বিপর্যয়ে ভোগেন। পরবর্তীকালে একটু বৃষ্টি হলেই অস্থির হয়ে যেতে দেখা যায়।

অপুষ্টি

বন্যা ও পরবর্তী সময়ে দুর্গত এলাকায় খাবারের অপ্রতুলতা, ফসলের মাঠের ক্ষতি, গবাদিপশু ও পুকুরের মাছে ভেসে যাওয়ায় খাদ্যসংকট দেখা দেয়। ফলস্বরূপ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে।

আমরা কী করতে পারি

বন্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আমরা পুরোপুরি এড়াতে পারি না। অনেক জায়গায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে পানি ঢুকে যাওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়। এ জন্য আগে থেকে বন্যার মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া ও স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। কিছু প্রতিকার মাথায় রাখতে হবে।

  • পরিচ্ছন্নতা মানতে হবে, খাবারের আগে, রান্নার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে।

  • পান ও দৈনন্দিন কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে। নিরাপদ পানি না থাকলে পানি ফুটিয়ে অথবা ক্লোরিন দিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

  • পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও খাওয়ার স্যালাইন রাখতে হবে।

  • ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা হলে অবশ্যই খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।

  • ন্যাকবলিত এলাকায় ও আশ্রয়কেন্দ্রে উঁচু স্থানে স্যানিটারি পায়খানা স্থাপন করতে হবে।

  • শিশুদের নিরাপদে রাখতে হবে। তারা যেন পানিতে পড়ে না যায়, সে বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।

  • জরুরি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে—যেখানে ডাক্তার, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী, প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকতে হবে।

    ডা. আফলাতুন আকতার জাহান: মেডিসিন স্পেশালিস্ট, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা