ডাবের পানির ভুল–ঠিক জেনে নিন
গরমের সময় তৃষ্ণা মেটাতে আমরা নানা ধরনের পানীয় পান করে থাকি। কিন্তু সেগুলো শরীরের কতখানি উপকার বা অপকার করছে, সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। এদিক থেকে ডাবের পানি খুবই উপকারী। এটি কোনো কৃত্রিম পানীয় নয়। গরমের কারণে শরীর থেকে যেসব লবণ বের হয়ে যায়, তা পূরণ করার জন্য ডাবের পানি আদর্শ।
ডাবের পানি শুধু পানীয় হিসেবেই উপকারী নয়, এতে রয়েছে প্রচুর খনিজ লবণ ও নানা রকম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, যা অনেক জটিল রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। তবে এটি নিয়ে নানা মিথও চালু রয়েছে। চলুন তেমন কিছু মিথের সত্যাসত্য জেনে নিই।
পানিশূন্যতা দূর করে
ডাবের পানি দ্রুত পানিশূন্যতা দূর করে বলে পান করার পর বেশ ঝরঝরে লাগে, এটা ঠিক। তবে এতে ক্যালরি বা শক্তি যে খুব বেশি রয়েছে, তা কিন্তু নয়। ১০০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে চিনি বা শর্করা আছে ২ দশমিক ৭ মিলিগ্রামের মতো, যা দোকানের বিভিন্ন জুস, ড্রিংক বা কোমল পানীয়র চেয়ে অনেক কম। বাজার–চলতি পানীয়র তুলনায় এতে ক্যালরির পরিমাণও কম। একে লো ক্যালরি ড্রিংক বলা যায়। তাই ডাবের পানিতে অনেক শক্তি মিলবে, এটা ঠিক নয়। তবে এর শর্করার প্রায় পুরোটাই সহজ শর্করা, মানে দ্রুত রক্তে মিশে যেতে সক্ষম।
অনেক পটাশিয়াম
এটা ঠিক যে ডাবের পানিতে পটাশিয়াম আছে। কিডনি রোগীদের তাই ডাবের পানি কম খেতে বলা হয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি পটাশিয়াম আছে, এমন খাবার কিন্তু তাঁরা দিব্যি খেয়ে ফেলেন। ১০০ মিলিলিটার ডাবের পানিতে পটাশিয়াম আছে ১৮৫ মিলিগ্রাম। ওদিকে একটা কলায় পটাশিয়ামের পরিমাণ ৪২২ মিলিগ্রাম, একটা আলুতে আছে ৭১৫ মিলিগ্রাম। পটাশিয়াম কমলা ও টমেটোতেও কম নেই। তাই পটাশিয়ামের বিধিনিষেধ থাকলে এই খাবারগুলোর কথাও মাথায় রাখুন।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীর খাওয়া মানা
ডাবের পানিতে লবণ ও খনিজ আছে, অনেকটা স্যালাইনের মতো, তাই পান করলে রক্তচাপ বাড়বে, এমন ধারণাও আছে। এটা ঠিক নয়। কেননা, ডাবের পানির লবণ মূলত পটাশিয়াম, সোডিয়াম নয়। আর পটাশিয়াম রক্তনালি প্রসারিত করে, যা বরং রক্তচাপ কমাতেই সাহায্য করে। সোডিয়াম উল্টোটা করে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ডাবের পানি পানে মানা নেই।
ওজন কমায়
বাজার–চলতি জুস ও পানীয়র তুলনায় ডাবের পানির ক্যালরি কম, এটা সত্য, তাই বলে এটা একেবারে পানির মতো ক্যালরিমুক্ত, চিনিমুক্ত পানীয় নয়। তাই ওজন কমাবে, এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে
ডাবের পানি কলেরা প্রতিরোধ করে, বদহজম দূর করে, হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, গরমে পানিশূন্যতার সমস্যায় বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ব্যায়ামের পর যখন শরীর ঘেমে ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন ডাবের পানি পান করলে শরীরের ফ্লুইডের ভারসাম্য বজায় থাকে। গরমের কারণে ঘামাচি বা ত্বক পুড়ে গেলে ডাবের পানি লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
শরীর সুস্থ রাখে
ডায়াবেটিস রোগীরা ডাবের পানি পান করতে পারেন। ডাবের পানি শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শরীরে রক্ত চলাচল ভালো রাখে। এ ছাড়া কোলাইটিস, আলসার, গ্যাসট্রিক, পাইলস, আমাশয়, কিডনিতে পাথরসহ নানা সমস্যায় ডাবের পানি খুবই উপকারী। ঘন ঘন বমি হলে ডাবের পানি ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
তাই কৃত্রিম ক্ষতিকর পানীয়র পরিবর্তে ডাবের পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। এতে গরমে তৃষ্ণাও মিটবে, শরীরও সুস্থ ও তাজা থাকবে।