গোসলের পর শরীর ঠিকমতো শুকাচ্ছেন তো
বাংলাদেশ ষড়্ঋতুর দেশ। নামে ষড়্ঋতু থাকলেও বছরজুড়ে গরমের প্রাধান্যই থাকে বেশি। তাই অনেকেই দিনে একাধিকবার গোসল করতে অভ্যস্ত। দিনে কতবার গোসল করা ভালো, সে আলাপে আজ যাব না। বরং গোসলের পর শরীর ঠিকমতো শুকাতে কী করতে হবে, তা নিয়ে আলাপ করি।
তোয়ালে বা গামছা যেন হয় নিরাপদ
গোসল শেষে শরীর মুছতে ‘নিরাপদ’ তোয়ালে বা গামছার বিকল্প নেই। নিরাপদ তোয়ালে বা গামছা মানে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ব্যাকটেরিয়ার জন্য স্বর্গ। আপনার বাথরুমে থাকা যেকোনো জিনিসই তাই ব্যাকটেরিয়ার আবাসে পরিণত হতে পারে। আর শরীর মোছার তোয়ালে বা গামছা হলে তো কথাই নেই। এসব ব্যাকটেরিয়া ত্বকের সংক্রমণসহ নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই সবার আগে গা মোছার তোয়ালে বা গামছাটি ব্যাকটেরিয়ামুক্ত ‘নিরাপদ’ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
তোয়ালে বা গামছা যেভাবে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখবেন
নিজের তোয়ালে বা গামছা নিজেই ব্যবহার করুন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করার দরকার নেই।
পারলে সপ্তাহে অন্তত একবার তোয়ালে বা গামছা পরিষ্কার করুন। নিয়মিত খেলাধুলা বা কায়িক পরিশ্রম করার পর গোসলের অভ্যাস থাকলে তা আরও ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে।
তোয়ালে বা গামছা পরিষ্কার করুন উচ্চ তাপমাত্রায়।
পারলে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করুন। এতে ব্যাকটেরিয়া বিনাশ হবে।
তোয়ালে বা গামছার রং ফিকে হতে শুরু করলে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
চুল ভালো করে শুকিয়ে নিন
গোসল শেষে বের হওয়ার আগে মাথা ভালো করে ঝেড়ে নিন। চুলে চাপ দিয়ে পানি বের করুন। তোয়ালে বা গামছা দিয়ে ঘষে পানি বের করবেন না, এতে চুলের ক্ষতি হয়। পারলে শুধু চুল মোছার জন্য আলাদা একটি তোয়ালে বা গামছা রাখুন। মাইক্রোফাইবারের তোয়ালে হলে ভালো হয়। নইলে পুরোনো কোনো টি–শার্ট তোয়ালের আকারে কেটেও ব্যবহার করতে পারেন। লম্বা চুলের ক্ষেত্রে তোয়ালে বা গামছাটি মাথায় পাগড়ির মতো করে পরে থাকতে পারেন।
ত্বক শুকিয়ে নিন
তোয়ালে বা গামছা জোরে ঘষে ত্বক শুকাতে গেলে প্রদাহ হতে পারে। শুষ্ক ত্বক ফেটে যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো ত্বকে তোয়ালে বা গামছা চেপে চেপে পানি শুকিয়ে নেওয়া।
পুরোপুরি শুকিয়েছেন কি না নিশ্চিত হোন
পানিতে থাকা খনিজ পদার্থ ত্বকের কোলাজেনের জন্য ক্ষতিকর। এতে আপনার মুখে দাগও হতে পারে। তাই খুব ভালো করে শরীর শুকিয়ে নিন। খুব ভালো হয় যদি ফিল্টার করা পানিতে গোসল করতে পারেন।
ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন
গোসলের সময় ত্বক যে আর্দ্রতা হারায়, তা ফিরিয়ে আনতে ময়েশ্চারাইজারের জুড়ি হয় না। এতে প্রদাহের আশঙ্কাও কমে। গোসলের পর ত্বক ভালোভাবে শুকানোর পর এসব উপাদান ব্যবহার করুন। তোয়ালে বা গামছা দিয়ে শরীর মোছার পাশাপাশি শুধু বাতাস কাজে লাগিয়েও শরীর শুকানো যায়।
যেভাবে বাতাস কাজে লাগিয়ে শরীর শুকাবেন
হাত দিয়ে চুল চিপে পানি বের করে ফেলুন
সবার আগে চুল শুকালে তা থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে আপনার শরীরকে আবার ভিজিয়ে দেবে না। চুল লম্বা হলে হাত দিয়ে চুল চিপে পানি বের করে ফেলুন। এভাবে বাতাসে শুকাতে দিলে তা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য কিছুটা হলেও উপকারী হবে।
ত্বক থেকে পানি হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলা
হাত দিয়ে ডলে পুরো ত্বক থেকে পানি সরিয়ে ফেলুন। যদি ত্বকে খুব লোম থাকে, তাহলে যেদিকে মুখ করে লোম বেড়ে উঠেছে, তার বিপরীত দিকে সরিয়ে ছেড়ে দিলে এমনিতেই লোমে লেগে থাকা পানি বেরিয়ে যাবে।
ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন
প্রথমে ঘরের দরজা-জানালা খুলে ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে দিন। এরপর ফ্যান, তোয়ালে বা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে বাতাস করে নিজেকে শুকিয়ে নিন। হেয়ার ড্রায়ার হলে খুব ভালো হয়। এতে গরম বাতাস বগল ও পেটের নিচের অংশে যেখানে চুল বা লোম বেশি থাকে, সেসব স্থান শুকিয়ে ফেলতে পারে।
বাথম্যাটেই পা রাখুন
গোসল শেষে বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর বাথম্যাটে পা রাখুন। পায়ের পাতা সামান্য ভেজা থাকলেও পিছলে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন
হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রেও শেষ ধাপ হিসেবে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বক আর্দ্র থাকে, প্রদাহের আশঙ্কা কমে।
সূত্র: উইকিহাউ