ধাতব চামচ দিয়ে মধু খাওয়া কি ক্ষতিকর
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট চোখে পড়ল। যেখানে বলা হয়েছে, ধাতব চামচ দিয়ে মধু খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেখানে বলা হয়েছে, মধু অ্যাসিডিক বা অম্লীয় বলে ধাতব চামচের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এবং মধুর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। সঙ্গে পরামর্শ জুড়ে দেওয়া হয়েছে, ধাতব চামচের বদলে কাঠের চামচ ব্যবহার করুন। প্রশ্ন হলো, এই তথ্য কি আদতে ঠিক? কথা বলেছিলাম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। উত্তরটি জানার পাশাপাশি মধু নিয়ে থাকল আরও কিছু তথ্য—
নানান রোগবালাই দূরে রাখতে রোজকার খাবার ও পানীয়ে চিনির ব্যবহার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ সে উপদেশ মেনে চলতে চেষ্টা করেন। তবে মিষ্টি স্বাদ পেতে এর বিকল্পও খোঁজেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে মধু কি চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে? সংরক্ষিত মধু নষ্ট হয়ে গেলে কীভাবে বুঝবেন? আর মধু সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার নিয়মই–বা কী? মধুবিষয়ক এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
চিনির বিকল্প নয়
চিনি খেলে অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। হুট করে গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর সঙ্গে কেবল ডায়াবেটিস নয়, অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগেরও সম্পর্ক আছে। মধু খেলে অমন ঝটপট রক্তের গ্লুকোজ বাড়ে না। সেদিক থেকে মধু তুলনামূলক নিরাপদ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শেষ পর্যন্ত মধুও মিষ্টি বটে। তাই ইচ্ছেমতো মধু খেলেও কিন্তু অতিরিক্ত মিষ্টি গ্রহণের খারাপ দিকগুলো দেখা দেবে একসময়। তাই চিনির বিকল্প হিসেবে মধু খাওয়া ঠিক নয়। আপনি বরং খাবার কিংবা পানীয়ে চিনির বদলে সামান্য মধু যোগ করতে পারেন কেবল স্বাদের জন্য। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হিসেবে মধু খাওয়ার সময়ও পরিমাণের পরিমিতিবোধ থাকতে হবে আপনার। এক চামচ চিনির বদলে এক চামচ মধু খেয়ে নিয়ে এমনটা ভাবা যাবে না যে আপনি বেশ স্বাস্থ্যকর একটা কাজ করলেন!
চিনির অভ্যাস ছাড়তে
চিনির অভ্যাস ছাড়তে মধু কাজে লাগতে পারে। যে খাবার বা পানীয় চিনি মিশিয়ে খেয়ে অভ্যস্ত আপনি, সেটি তৈরির সময় চিনির বদলে খানিকটা মধু দিতে পারেন। তবে মধুর পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। এভাবে আপনি একসময় চিনি বা মধু কোনোটিই না মিশিয়ে ওই খাবার বা পানীয় গ্রহণের অভ্যাস করতে পারবেন।
মধু সংরক্ষণের বেলায় যা মনে রাখবেন
এবার আসা যাক মূল প্রশ্নে। তার আগে বলে রাখি, কাচের পাত্রে মধু রাখা ভালো। মধু সংরক্ষণের জন্য এর পাত্রের ঢাকনা ভালোভাবে আটকে রাখুন। পাত্র থেকে মধু নেওয়ার জন্য কাঠের চামচ ব্যবহার করা খুব ভালো। নাহলে পরিষ্কার, শুকনা ধাতব চামচও ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাসিডিক মধুর সঙ্গে চামচের ধাতুর বিক্রিয়া হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। কারণ, মধু তুলতে কতক্ষণই–বা চামচ ব্যবহার করা হয়! এত অল্প সময়ে কোনো বিক্রিয়া সম্ভব নয়। তবে মধুর বয়ামে দীর্ঘদিন ধাতব চামচ ফেলে রাখবেন না।
ধাতব চামচ ব্যবহারের সময় আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন। ভেজা চামচ দিয়ে পাত্র থেকে মধু তুলবেন না। এমনকি ব্যবহৃত চামচ দিয়েও মধু নেওয়া ঠিক নয়। মধু নষ্ট হয়ে গেলে ঘ্রাণে তা বোঝা যায় না। মধু দেখে বুঝতে হয়, তা ভালো আছে কি না।
আবার সংরক্ষিত মধুতে স্বাভাবিকভাবেও কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। তাই আপনাকে জানতে হবে, কোন পরিবর্তনটা স্বাভাবিক, আর কোনটা নয়। ধরুন, সংরক্ষিত মধুর নিচের অংশ দানাদার হয়ে গেল বা খানিকটা জমাট বেঁধে গেল। এ রকম হওয়ার অর্থ কিন্তু মধু নষ্ট হয়ে যাওয়া নয়। কিন্তু মধু পাতলা হয়ে গেলে, মধুর ওপরের দিকে অতিরিক্ত ফেনা হলে, মধুর রং খুব বেশি গাঢ় হয়ে গেলে কিংবা অল্প কয়েক দিনের মধ্যে মধুর রং বদলে গেলে বুঝতে হবে, মধুটি পুরোপুরি ভালো নেই।